পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃo প্রবাসী SN982 —না, টাকা তোমার আমি চাই না। তুমি অনুমতি দাও এই ছেলেটিকে পোষ্যপুত্র নিই। বড় সুন্দর ছেলে গোঁ দেখ একবার । মেজকর্তা স্থিরদৃষ্টিতে মেজগিল্পীর মুখের দিকেই চাহিয়া রছিলেন, শিশুর দিকে চাছিলেন না বা কোন উত্তরও দিলেন না । মেজগিল্পী বলিলেন—ছেলের জন্তে তোমার মনের কষ্ট আমি জানি । আমাকে লুকুলে কি হবে—আমার ভ চোখ আছে, কি মানুষ কি হয়ে গেলে! কতবার বললাম আবার ভূমি বিয়ে কর—সেও করলে না। মেজকৰ্ত্তীর চিত্ত বোধ করি অস্থির হইয়া উঠিতেছিল— তাহার অঙ্গভঙ্গীর চাঞ্চল্যে সে অস্থিরতা পরিস্ফুট হইয়৷ উঠিল। তিনি কি বলিতে গেলেন–কিন্তু বাধা দিয়া মেজগিী বলিলেন—স্থির হয়ে ব’স দেখি—আমার কাছেও তুমি পাগল সেজে থাকবে ? সমস্ত শরীরটা দুই হাতে চুলকাইতে চুলকাইতে মেজকর্তা বলিলেন—যে গরম—শরীর গুড়গুড় করছে—উঃ । বিছানার উপর হইতে পাখা তুলিয়া লইয়া মেজগিল্পী ৰলিলেন-ব’স আমি বাতাস করি । বার-দুই শুদ্ধ কাশি কাশিয়া মেজকৰ্ত্ত বলিলেন—উ-ছ, গরুগুলো কি করছে—মানে খেতে-টেতে পেলে কি না— চড়ি পথ ছাড় । দরজার মুখ বন্ধ করিয়া দাড়াইয়া মেজগিল্পী বলিলেন— আমার কথা শেষ হোক তবে ষাবে। শোন, এই ছেলেটিকে আমি পুষিা নেব । চাটুজ্যেদের ভাগ্নে—ম নেই, বাপ নেই ; কেউ নেই। মাম-মামীও বিদেয় করতে পারলে বাচে— সামান্ত কিছু দিলেই দিতে চায়। অস্থির চঞ্চল ভাবে মেজকৰ্ত্তা বলিয়া উঠিলেন—না-নানা ; ও হবে না, ও হবে না, ওসব কলুমে চারার কাজ নাই আমার । কি বংশ না কি বংশ—, ছাড় ছাড়— পথ ছাড় । মেজগিয়ী দৃঢ়ভাবে বলিলেন—ন । মেজকর্তা তখনও বলিতেছিলেন–চোর না ছ্যাচড় না ভিখিরী ঘরের ছেলে—ও সব হবে না । মরে যাবে— মরে যাবে—চেহারা দেখছ না ! মেজগিল্পীর চোখে জল দেখা দিল, সজল চক্ষে তিনি বলিলেন-ওগো হ-বেলা ভাত মুড়ি পেট ভরে খেতে পায় না, দুধ ত দূরের কথা। ওদের বাড়িতে থাকলেই ছেলেটা মরে যাবে। অকারণে থাটের চাদরখানা টানিতে টানিতে মেজ কর্তা বলিলেন—ষাক-বাক==সরে গেলে ফেলে দেবে ওরা । মেজগিল্পী বলিলেন –ছি—অবোধ শিশু তোমার কি দোষ করলে বল ত ? মেজকর্তা আপন মনেই বলিতেছিলেন—পরের ছেলে— পরের ছেলে—হবে না—হবে না । ফিরিয়ে দাও-চার আন পয়সা বরং—। মেজগিল্পী ততক্ষণে ঘর হইতে বাহির হইয়া গিয়াছেন । সম্মুখের লম্বা বারানাটার দূরতম প্রান্তে ক্ষীণ পদধ্বনি ক্রমশঃ ক্ষীণতর হইয়া অবশেষে সিঁড়ির বুকের মধ্যে নিঃশেষে বিলীন হইয়া গেল। মুখের কথাটা অৰ্দ্ধসমাপ্ত রাখিয়া মেজকর্তা এতক্ষণ স্তন্ধ ভাবেই দাড়াইয়াছিলেন। স্ত্রীর অস্তিত্বের সমস্তটুকু মিলাইয়া যাইতে এতক্ষণে তিনি স্ত্রীর গমনপথকে উদ্দেশ করিয়া বলিয়া উঠিলেন— আচ্ছা—আমার ছেলে নাই ত তোমার কি বাপু ? তার পর আবার কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া বলিলেন—যুধিষ্ঠির— নিববংশ–ভীম নিববংশ–রাবণ নিববংশ—কেষ্টঠাকুর নিববংশ—আমিও নিববংশ–বংশ নাই ত নাই—হবে কি ? বলিতে বলিতেই তিনি ঘর হইতে বাহির হইয়া বৈঠকখানার দিকে চলিলেন । চাষ-বাড়ির প্রাস্তে প্রাচীরের গায়ে সারি সারি পেয়ারার গাছ । মেজকর্তা লক্ষ্য করিলেন, বিনা-বাতাসেই গাছগুলি বেশ আন্দোলিত হইতেছে— বুঝিলেন গাছে বাদর লাগিয়াছে। তিনি হাকিলেন—. নিতাই—ও—নিতাই, পেয়ারা-গাছে বাদর লেগেছে— তাড়িয়ে দে, তাড়িয়ে দে। সঙ্গে সঙ্গে গাছ হইতে ঝুপ, ঝাপ করিয়া দশ-বারোটি ছেলে লাফ দিয়া মাটিতে পড়িল । মেজকর্তা যেন ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিলেন। ছেলের উপদ্রব করিলে তিনি জলিয়া যান। আজও তিনি ঠিক বালকের মত ছুটির ছেলের দলকে তাড়া দিলেন। কিন্তু কাহাকেও পাইলেন না, বাড়ির বহিঃসীমা হইতে শিশুকণ্ঠের কলহান্তে চারিদিক মুখরিত হইয়া উঠিল। বিফলতার জন্ত মেজকৰ্ত্তার ক্রোধ আরও বাড়িয়া গেল। বিপুল আক্রোশে