পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3\b প্তপ্রবাসী; SN°8之 বহু পূর্বেই অগ্রসর হইয়াছিল ও কৃতিত্ব প্রদর্শন পণ্ডিতেরা স্তায়, স্মৃতি ও তন্ত্রাদি শাস্ত্রে অসাধারণ পারদর্শিতার করিয়াছিল। জন্ত ভারতে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন ও ‘আৰ্য' সভ্যতাকে যাহা হউক, বাঙালী জাতি সভ্যতায় দ্রাবিড় প্রভৃতি জাতির বয়োকনিষ্ঠ হইলেও অধুনা সংস্কৃতিতে গরিষ্ঠ। বাংলা দেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত থাকার বহুকাল আর্য্যসভ্যতার কেন্দ্র হইতে বিচ্ছিন্ন ছিল। বৌদ্ধ ধৰ্ম্মর অভুত্থানের পুৰ্ব্ব পর্য্যস্ত এই দেশ আর্য্যদের পরিহার্য্য ও পরিত্যক্ত ছিল এবং বাঙালীরা গ্রীক, সিরিয়ান, পারথিয়ন বা অষ্ঠ কোনও তদানীন্তন সভ্যতর জাতির বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেও আসেন নাই। জাতীয় প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষের জন্ত শিক্ষার প্রয়োজন ; অন্তৗষ্ঠ জাতির সংস্পৰ্শই শিক্ষার বৃদ্ধি হয় এবং তাহা দ্বারাই সংস্কৃতির স্বাক্ট ও উৎকর্ষসাধন হয় । যাহা হউক, ইত্যবসরে সম্ভবতঃ দীর্ঘকাল যাবৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে পল্লীসমাজের মধা দিয়া বাঙালীর নিজস্ব স্বতন্ত্র সভ্যতার ভিত্তি গঠিত হইতেছিল । পরে যখন বৌদ্ধ প্রচারকগণ বঙ্গে আগমন করিলেন তখন হইতেই বাঙ্গালীর সংস্কৃতি যথেষ্ট অনুরূপ উপাদান পাইয়া পরিপুষ্টলাভ করিতে লাগিল এবং আর্যসভ্যতার সংস্পর্শে নব নব উপাদান সমাহরণ ও সমীকরণ করিয়া বাঙালী জাতি নব উদ্যমে সভ্যভার সোপানে ক্ষিপ্রপদে আরোহণ করিলেন এবং কালক্রমে ভারতের অন্তান্ত পূৰ্ব্বজ জাতিদিগকে অতিক্রম করিয়া ফেলিলেন । যদিও সাম্রাজ্যপ্রতিষ্ঠায় বাঙালী জাতি আৰ্য, দ্রাবিড়, শক, যবন ও হুণ প্রভৃতির স্তায় কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন নাই, তবু বাঙালী জাতি কালে একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত সভ্যতা গড়িয়া তুলিতেfছলেন । “গৌড়ী” নামক স্বতন্ত্র প্রাকৃত ভাষার এবং কাব্যরচনার “গৌড়ীয় রীতি"র উল্লেখ দণ্ডী তাহার "কাব্যাদর্শ’ নামক পুস্তকে করিয়াছেন । নালন্দার ও তক্ষশীলার দুইটি খ্যাতনামা অধ্যাপক শীলভদ্র ও অতীশ দীপঙ্কর জাতিতে বাঙালী ছিলেন বলিয়া ধ্যাত । দীপঙ্কর (৯৮০-১০৫৩ খ্ৰী: ) তিব্বতদেশের রাজা কর্তৃক সনিৰ্ব্বন্ধে আহুত হইয়া তথায় বৌদ্ধধৰ্ম্মের সংস্কারকার্য্যে শেষজীবন অতিবাহিত করেন । সভ্যতার নূতন উপাদান আয়ত্ত করিবার ক্ষমতা বাঙালী জাতির সংস্কৃতির একটি বৈশিষ্ট্য ; সেজন্ত কালে বাঙালী নিজভাবে গ্রহণ করিয়া বঙ্গে ও বঙ্গেতর দেশে সভ্যতা বিকীর্ণ করিয়াছিলেন । নবদ্বীপের নব্য দ্যায়ের কেন্দ্র বাঙালীর সমাহৃত সংস্কৃতির উপাদানকে নিজরূপ দানেরই পরিচায়ক । গৌড়-মগধ-রীতির ভাস্কৰ্য, যাহা বরেন্দ্রভূমিতে সীতিশয় উৎকর্ষলাভ করিয়াছিল, তাহাতেও বাঙালীর সমীকরণশীলতা ও বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। অধুনা পাশ্চাত্য সভ্যতাকেও সমীকরণ ও আয়ত্ত করিবার ক্ষমতায় বাঙালী ভারতে অগ্রণী, এবং বাংলার বাহিরেও পাশ্চাত্য-শিক্ষণ-বিস্তারে তাহারাই অগ্রদূত । প্রাচীন বাংলা দেশে সাম্রাজ্যিক সভ্যতার বিশেষ বিকাশ না হইবার এক কারণ সম্ভবতঃ বাঙালী জাতির গণতান্ত্রিকতা। যদিও বৰ্ত্তমান যুগে অনেক স্থলে বাঙালীদের পরস্পরের মধ্যে মিলনের অভাব ও গণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধ ভাব লক্ষিত হয়,তথাপি স্বরূপতঃ বাঙালী চিরকালই সাম্যবাদী ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পক্ষপাতী। বৌদ্ধ সভ্যতার সহিত এই সমস্ত বিষয়ে সাদৃশ্য থাকাতেই বোধ হয় এককালে বাংলায় বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রভাব সম্যক বিস্তারলাভ করিয়াছিল । সে যাহাই হউক, ভারতের বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতির বিশ্লেষণ ও আলোচনা করিলে আমরা বৈচিত্র্যের মধ্যে একত্ব দেখিতে পাই । আর্যাগণের প্রতিভাবলে যে সৰ্ব্ব-সংস্কৃতি-সমন্বয়-কারী হিন্দু সভ্যতা ভারতকে গৌরবান্বিত করিয়াছে ও এক বিরাট একতায় সংযুক্ত রাধিয়াছে তাহার তুলনা পৃথিবীর অন্তর নাই। এখন ভারতের প্রত্যেক প্রদেশের হিন্দু সমাজের সংস্কৃতির মধ্যে অৰ্দ্ধেক বা ততোধিক অংশ একই অখণ্ড ভারতীয় সভ্যতা ; অবশিষ্টাংশের কিয়দংশ ভারতীয়ত্বের প্রাদেশিক রূপান্তর মাত্র ; অপর অবশিষ্টাংশের এক ভাগ অন্তান্ত জাতির দান ও কেবল সামান্ত উদ্ধৃত্ত অংশই স্ব স্ব অবিমিশ্র জাতীয় সংস্কৃতি। সংস্কৃতির এই জাতীয় উপাদানগুলিতেই প্রত্যেক জাতির আপন আপন বৈশিষ্ট্য প্রতিভাত হয়,—যেমন তামিল জাতির কৰ্ম্মপটুতা ও বাস্তবিকতার উপর তীক্ষদৃষ্টি ; তেলুগুর ভাবপ্রবণতা ; ক্ষত্রিয়ধর্মী মহারাষ্ট্রজাতির কৰ্ম্মপরায়ণতা, অসাধারণ দেশগ্ৰীতি ও স্বাধীনতার তীব্র