পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vo R. প্রবাসী ১ésহ দেন, তাহা হইলে আপাততঃ সব সমস্তারই সমাধান হইয়া যায়। বাড়ি তিনি বাধা রাখিতে চান, তাহাতে ক্ষতি নাই। বিবাহ দেবেশ করিবে বলিয়াই মনে হয় । এখন পৰ্য্যস্ত তাহার হৃদয় বে-দখল হয় নাই বলিয়াই তাহার পিতা-মাতার বিশ্বাস। স্বতরাং মমতার মত স্বন্দরী একটি তরুণীকে ভাবী পত্নীরূপে কয়েক দিন ধ্যান করিতে পাইলে, সহজে আর ঐ মানুষটিকে সে মন হইতে ঝাড়িয়া ফেলিতে পরিবে না। কয়েক দিন মেলামেশা করার স্ববিধাও সে পাইবে । নিতাস্ত বিলাতের মায়াবিনীদের মায়ার ফঁাদে পড়িয়া, সব-কিছু যদি ভুলিয়া না যায়, তাহা হইলে গোপেশ বাৰু এবং তস্ত গৃহিণীর ঐ দশ হাজার আর ফেরৎ দিতে হইবে না। কোনো দিক দিয়াই এতকাল এই দম্পতীটি আধুনিকতার পক্ষপাতী ছিলেন না, কিন্তু পৃথিবীতে অর্থের দরুন যত মতের পরিবর্তন হয়, এতট আর কিছুতেই হয় না। যে-গোপেশ-গৃহিণী বিবাহের আগে বর ও কন্যার চাক্ষুষ পরিচয় হওয়াকেও মহাপাপ বলিয়া মনে করিতেন, তিনিও ভাবিতে এখন আরম্ভ করিয়াছেন যে স্বরেশ্বর এবং যামিনীকে বলিয়া-কহিয়া যদি খানিকট হালকা রকম কোর্টশিপের ব্যবস্থা করা যায়, তাহা হইলে বিবাহটা নিশ্চিতভাবে ঘটিয়া উঠিবার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়া যায়। মমতা এবং দেবেশ যদি একটু চিঠি-লেখালেখিও করে, তাহাতেই বা কি এমন চণ্ডী অশুদ্ধ হয় ? স্বরেশ্বরের অবশু কোনো কিছুতেই আপত্তি ছিল না, মেয়ের বিবাহ হইলেই হয় । ডাক্তারে আজকাল তাহাকে নানা প্রকার ভয় দেখাইতে আরম্ভ করিয়াছে। এমন হইতেও পারে যে তিনি আর বেশী দিন বঁচিবেন না। তখন যামিনীর হাতে পড়িয়া মমতার কি গতি হইবে কে জানে ? যা না তাহার অপূৰ্ব্ব মতামত ! তাহার মত ধনী স্বামী পাইয়াও যামিনী যে স্বর্থী হন নাই; সেটা স্বরেশ্বর স্ত্রীর অতিবড় অপরাধ বলিয়াই ধরিতেন। মেয়ের বিবাহের ভার যদি যামিনীর হাতে পড়ে, তাহা হইলে কোন এক কপৰ্দকহীন কেরানীর ঘরেই মমতাকে তিনি পঠাইয়া দিবেন। মেয়েরও বুদ্ধিগুৰি মায়েরই মত, সেও যে বিশেষ ‘আপত্তি করিবে তাহা মনে হয় না। বঁচিয়া থাকিতে থাকিতে স্বরেশ্বর আদরিণী কস্তার একটা স্বব্যবস্থা করিয়া যাইতে চান। স্বজিতও নেহাৎ ছোট, তাহার উপর কিছু ভরসা করা চলে না। আর তাহার সহিত মা বা বোনের এখনই যখন বনিবনাও নাই, ভবিষ্যতে ত আরও থাকিবে না | - বিকালে জলযোগটা একটু গুরুতর রকমই হইয়াছিল, স্বতরাং রাত্রের খাওয়াটা অতি সংক্ষিপ্ত করা দরকার। এই উপলক্ষ্য ধরিয়া মুরেশ্বর আবার আজ যামিনীর ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলেন । যামিনী তখন মমতার ছাড়া গহনাগুলি গুছাইয়া লোহার সিন্ধুকে তুলিয়া রাখিতেছিলেন। জিনিষগুলি অতি মূল্যবান, বেশীক্ষণ বাহিরে ফেলিয়া রাখিতে ভরসা হয় না। স্বরেশ্বরকে দেখিয়া যামিনী একবার জিজ্ঞাক্ষ দৃষ্টিতে র্তাহার দিকে তাকাইলেন, কিন্তু কোনো কথা না বলিয়া যেমন কাজ করিতেছিলেন, তেমনই করিতে লাগিলেন । স্বরেশ্বর খাটের উপর বসিয়া বলিলেন, “খুকিকে দেখে বুড়ে যা খুলী, একেবারে চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসে আর কি ? সত্যি আজ ওকে ভারি চমৎকার দেখাচ্ছিল ।” যামিনী অল্প একটু হাসিলেন মাত্র, কিছু বলিলেন না। স্ত্রীর উৎসাহের অভাব দেখিয়া মুরেশ্বরের মেজাজ অল্পে অল্পে চড়িতে আরম্ভ করিল। কিন্তু এত শীঘ্রই চেচামেচি আরম্ভ করিলে আসল কাজে বাধা পড়িয়া যাইবে। অতএব যথাসাধ্য নিজেকে সংযত রাখিবার চেষ্টা করিতে করিতে তিনি বলিলেন, “তার পর দেবেশকে কবে ডাকছ ?” যামিনী উদাসীনভাবে বলিলেন, “আমার আর ডাকাডাকি কি ? তোমার যেদিন সুবিধা তুমি ডেকো ” স্বরেশ্বর একটু বিদ্রুপের স্বরে বলিলেন, "কেন তুমি ডাকৃলে কি ক্ষতিটা ? এ-সব কাজ বাড়ির গিরিরা করলেই শোভন হয়।” * যামিনী একটু কঠোরভাবে বলিলেন, “বাড়ির গিরির পছন্দ-মত ত সব ব্যবস্থাটা হচ্ছে না, তখন তাকে আর মাঝপথে টেনে আনা কেন ? যা করতে চাও তা নিজেরাই কর।” স্বরেশ্বর বলিলেন, “হঃ,.ঐ রাগেই গেলে । কেন আমার কি মেয়ের ভবিষ্যৎ ভাবলে কোনো দোষ আছে ? না আমার ভাল-মন্দ জ্ঞান তোমার চেয়ে কম ?” - " . .