পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাঁজ , যামিনী বলিলেন, “জ্ঞান বেশী কি কম, সে আলোচনা করে লাভ কি ? তোমার আর আমার মতামত ত এক রকম নয় ?” স্বরেশ্বর না রাগিতে চেষ্টা করা সত্ত্বেও যথেষ্টই রাগিয়া গিয়াছিলেন, তিনি স্থর চড়াইয়া বলিলেন, “তা হোক আলাদা রকম। আমার মতেই না-হয় এবার কাজ হোক, বাংলা দেশে চিরকাল তাই-ই ত হয়ে আসছে।” যামিনী বলিলেন, “দেখ তোমার শরীর ভাল নেই, আমারও নেই। বাজে কথা নিয়ে রাগারগি ক’রে কি হবে ? দরকারী কথা কিছু থাকে ত বল, না-হয় যে যার চুপ করে থাক। তোমার মতে তুমি যা খুনী কর, তাতে বাধা দেবার ক্ষমতাও আমার নেই, প্রবৃত্তিও নেই, এ ত তুমি ভাল ক’রেই জান ?” কাছে আসিলেই যামিনী যে র্তাহাকে যথাসম্ভব সংক্ষেপে বিদায় করিয়া দিতে চান, ইহাতে সুরেশ্বর মনে মনে অত্যস্ত অপমান বোধ করেন । রাগও হয় তাহার অত্যধিক । কিন্তু এ অবস্থার কি প্রতিকার তাহা তিনি ভাবিয়া পান না । পরস্পরের প্রতি যে-অনুরাগ থাকিলে এক দিনের আদর্শনই মানুষের কাছে ভীষণ হইয় ওঠে, তাহা এই দুইটি মানুষের মধ্যে একেবারেই নাই। অথচ স্ত্রীকে জীবন হইতে একেবারে বাদ দিলে স্বরেশ্বরের এখনও চলে না, নানাদিকে এখনও যামিনীর উপর তাহাকে নির্ভর করিতে হয়। যামিনীর রকম দেখিয়া কিন্তু তাহার মনে হয়, স্বরেশ্বরকে বিন্দুমাত্রও প্রয়োজন তাহার কোনও দিক দিয়া নাই। এ অবস্থাটা স্বামীমাত্রেরই অত্যন্ত অসঙ্ক, স্বরেশ্বরের ত বিশেষ করিয়া, কারণ, নিজের সম্বন্ধে ধারণা তাহার অতি উচ্চ। স্ত্রীকে শিক্ষা দেওয়া বিশেষ দরকার বলিয় তাহার ধারণা, কিন্তু উপায় ত কিছু খুজিয়া পান না? এক তাহার খাওয়া-পর বন্ধ করা যায়, বা র্তাহাকে বাড়ি হইতে বাহির করিয়া দিয়া আর একটা বিবাহ করা যায়, তাহ হইলে যামিনী একটু সায়েস্তা হন । কিন্তু সিভিল আইনের খপ্পরে পড়িয়া, এমন ক্টায়সঙ্গত অধিকারগুলি হইতেও স্বরেশ্বর বঞ্চিত। তাহ ছাড়া সত্যই এ ধরণের কিছু করিবার ক্ষমতা তাহার স্বভাবেই নাই। অত হাঙ্গাম পোহাইবে কে ? আর মেয়েও যে তাহা হইলে তাহার হাতছাড়া হইয়া যাইবে ? Wręs এ চিন্তাও তাঁর অসহ । কাজেই রোজ রাগারগি করা আর চীৎকার করা ছাড়া উপায় কি ? স্বতরাং খাটের উপর আরও চাপিয়া বসিয়া তিনি গর্জন করিয়া উঠিলেন, “আমার যা-খুবী করায় বাধা দেবার ক্ষমতা দুনিয়ার কারও নেই, তোমার ত নেই-ই। আমি কি কারও থাই পরি? আমি বলছি দেবেশ পরশু আসবে, এখনই লিখে পাঠাচ্ছি আমি গিয়ে । তার আদর-যত্বের বিন্দুমাত্র ক্রটি যেন না-হয়, এই এক কথা বলে দিলাম।” বলিয়া তিনি খাট হইতে উঠিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। যামিনী বলিলেন, “বাড়িতে ডেকে অনাদর করাটা ত ভদ্রতা নয়, স্বতরাং দেবেশকেও অনাদর করা হবে না তা বলাই বাহুল্য ।” - যামিনীকে কিছুতেই চটাইতে না পারিয়া স্বরেশ্বর উঠিয়া পড়িলেন। বলিলেন, “আমি রাত্রে কিছু খাবটাব না, কেউ যেন এই নিয়ে আমায় জালাতে না যায়।” তিনি বাহির হইয়া গেলেন । - যামিনী গহনা-তোলা শেষ করিয়া লোহার সিন্ধুকটা বন্ধ করিয়া দিলেন। তাহার পর জানালাটা ভাল করিয়া খুলিয়া দিয়া, তাহার ধারে গিয়া বসিলেন। দিনের পর দিন এই একভাবে চলিয়াছে। আরও কতদিন চলিবে তাঁহাই বা কে জানে ? কি ভীষণ মরুভূমির মধ্যেই যামিনীর জীবনপথ আসিয়া শেষ হইল ? to মাতার অস্তিমকালে র্তাহাকে একটু সাত্বনা দিতে গিয়া, যামিনী যে আজীবন কি শাস্তি নিজের জন্ত বরণ করিয়া লুইতেছিলেন, তাহ সেই অতীত দিনে তিনি ভাল করিয়া বুঝেন নাই। জীবন হইতে প্রেমকে চিরনিৰ্ব্বাসন দিলেন, ইহাই তিনি ভাবিয়াছিলেন। কিন্তু শান্তি আত্মসন্মান সকলই যে চিরকালের মত র্তাহাকে ছাড়িয়া যাইবে, তাহা ত ভাবেন নাই? . খানিকটা নিজের মনেই যেন বলিলেন, “মেয়েকে এই হাড়কাঠে বলি দিতে আমি কিছুতেই দেব না, তা যা থাকে আমার কপালে।” বাস্তবিক তাহার কপালে ইহার অপেক্ষা বেণী শোচনীয় আর কিই বা ঘটতে পারে ? স্কুরেশ্বর সত্যই কিছু উহাকে তাড়াইয়া দিতে পারেন না বা ধরিয়া মারিতে পারেন না ?