পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ماو بيار элева লুসির মোটেই কথাটা পছন্দ হইল না। নিমন্ত্রণে যাইতে হইলে, যাহার যেমন পোষাকপরিচ্ছদ আছে, সে তেমন পরে, যাহার বাড়ি যাইতেছে তাহার কি আছে না-আছে, সে ভাবনা ভাবে না। দিদির সব-তাতেই বাড়াবাড়ি । মমতা সাজিবেই না যখন, তখন তাহার চুলগুলি ফুলাইয়ফাপাইয়া, যথাসাধ্য বড় একটা এলো খোপা বাধিয়া দিয়াই লুসি নিশ্চিন্ত হইল। মমতা গহনা যা পরিয়া থাকে, তাহার উপর কিছুই পরিল না। বাছিয়া বাছিয়া একটা লাল বুটি-দেওয়া ঢাকাই শাড়ী বাহির করিয়া পরিয়া বসিল । কপালে লুসি একটা কুঙ্গুমের টিপ পরাইয় দেওয়াতে আপত্তি করিল না। যামিনী এক ফঁাকে আসিয়া মেয়ের প্রসাধন দেখিয়া গেলেন। বলিলেন, “বেশ হয়েছে। লুসির এখন বেলাট কাটে কি ক’রে ?” লুসি বলিল, “দাও ন পিসীম, ঐ কালে আলমারির চাৰিটা, আমি সব কাপড়চোপড় গুছিয়ে দিই। তুমি না বলছিলে সব বড় অগোছাল হয়ে আছে ?” কালো কাঠের আলমারিতে ঘামিনীর এবং মমতার রেশমের কাপড়-চোপড়গুলি থাকিত ; এই সব নাড়িয়চাড়িয়া দেখিতে লুসির ভরি আনন্দ । মমতা যতক্ষণ বাড়ি থাকিবে না, এই উপায়ে সে দিব্য সময় কাটাইয়া দিতে পারিবে । এমন সময় মুরেশ্বর মিজের ঘর হইতে হাক দিয়া উঠলেন। যামিনী ফাকি দিয়া পলাইয়াছেন, এই সন্দেহ হওয়া মাত্রই তাহার মাথার যন্ত্রণ বাড়িয়া গিয়াছে। যামিনী চাবীর রিংটা তাড়াতাড়ি লুসির হাতে দিয়া বলিলেন, “এই মোট চারীটা ঐ জালমারীর, দেথিস যেন বাইরে কিছু পড়ে না থাকে।” তিনি আবার সুরেশ্বরের ঘরে ফিরিয়া গেলেন। g স্বজিতও প্রস্তুত হইয়া আসিল । নিত্যকে ডাকিয়া লইয়া মমতা স্বরেশ্বরের ঘরের দরজার সামনে দিয়াই নীচে চলিয়া গেল, তিনি কিছু উচ্চবাচ্য করিলেন না। মেয়ের অঙ্গে সাজসজ্জার কিছু প্রাচুর্ঘ্য দেখিলে অবশু তাহার মনে একটু সন্দেহ হইলেও হইতে পারিত। স্বজিত সামনে ড্রাইভারের পাশে গিয়া বসিল, ভিতরে বসিল মমতা এবং নিত্য । গাড়ীটা সিভান, এই যা রক্ষ, খানিকটা পদা বজায় রাখিয়াই যাওয়া যায়। মমতা কোথায় যাইবে, তাহ একবার জিজ্ঞাসা করিয়া লইয়া, স্বজিত সারাপথ আর ঘাড়ই ফিরাইল না। - ছায়ার বাড়ি আবিষ্কার করিতে একটু ঘোরাঘুরি করিতে হইল, কারণও বাড়িটা বড়রাস্তার উপরে নয়, একটুখানি গলির ভিতরে । সুজিত গাড়ীতেই বসিয়া রহিল, ড্রাইভার নামিয়া গিয়া বাড়িটা দেখিয়া আসিল। তাহার পর মমতা এবং নিত্যকে লইয়া সে-ই আবার পৌছাইতে চলিল। স্বজিত অন্য দিকে মুখ ফিরাইয় শূন্তকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, “আমি আটটার সময় আসব, তখন যেন আর দেরি না হয় ।” নোংরা দুৰ্গন্ধ গলির ভিতর তিনতলা পুরনো একট। বাড়ি। এক-এক তলায় এক-এক জন ভাড়াটে। ছায়ার মাসীম দু-তলায় থাকেন। ড্রেনের এবং নর্দমার মিশ্রিত গন্ধে মমতার দম বন্ধ হইয়া আসিতে লাগিল । - সদর দরজার সামনে আসিয়া ড্রাইভার বলিল, “এই বাড়ি।” দরজার কড়াটাও সে সজোরে নাড়িয়া দিল । একতলাবাসিনী একটি ছোট মেয়ে ছুটিয়া বাহির হইয় আসিল । বছর পাচ বয়স, কিন্তু পরিচ্ছদের কোনো বালাই নাই । মমতাকে দেখিয়া বলিল, “সববাই উপরে চলে গেছে।” অনাহূত ভাবেই উপরে চলিয়। যাইবে কিনা, মমতা ভাবিতেছে, এমন সময় তিন-চার সিড়ি এক-এক লাফে অতিক্রম করিয়া একটি যুবক নামিয়া আসিল । বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা, গায়ের রংটা শুামবর্ণ। মমতাকে নমস্কার করিয়া বলিল, “এই যে, এইদিক দিয়ে আম্বন।” মমতা প্রতিনমস্কার করিল বটে, তবে কথা কিছু বলিল না। অপরিচিত ছেলেদের সঙ্গে কথা বলিতে তাহার বড় লঙ্গা করিত। চিরকাল একলা। একলা থাকিয়া এ বিষয়ে তাহার কোনো অভ্যাস হয় নাই। . ড্রাইভার ফিরিয়া গেল। মমতা ও নিত্য যুবকটির পিছন পিছন সিড়ি বাহিয়া উপরে উঠিয়া গেল। উপরে ঘর মাত্র তিনটি। দুইটি মাঝারি, একটি অত্যন্ত ছোট। তিনটিই শয়নকক্ষ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তবে জাজ একটিকে বসিবার ঘরে রূপান্তরিত করা হইয়াছে।