পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

TSTEf স্বগীয়া মনোরম। দেবীর অগদ্য-শ্ৰাদ্ধানুষ্ঠান yము কিন্তু হৃদয় তাহাকে যাহা কিছু বলিতে চায়, যত দুঃখ, আনন্দ, আশা, ভয়, কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধ, প্রাণের যত কিছু কথা নিবেদন করিতে চায়, সে-সকল তাহার অশরীরী আত্মাকে গিয়া স্পর্শ করিবে, ইহা সত্য। দেহ নাই ইহা সত্য বটে ; কিন্তু দেহ নাই, এ কথা স্মরণ করিবার দিন আজ নয়। আত্মা আছেন, আত্মা আমাদের কাছেই আছেন, আত্মার সহিত আত্মার সম্বন্ধ অবিচ্ছিন্ন অক্ষুন্ন আছে, এখন হইতে আত্মার মধ্য দি হৃদয়ের যোগ অনুভব করিব, ও রক্ষা করিব, এ আশা আমাদের প্রাণে আছে,—এ জন্যই আজিকার এ অনুষ্ঠান। মৃত্যু এক নূতন জীবন । যিনি এখান হইতে চলিয়া গেলেন, তাহার পক্ষে নূতন জীবন। দেবদেবীগণ যে লোকে বিহার করেন, সেখানে তাহার নূতন জীবন হইল ; শরীরের বন্ধন হইতে মুক্ত হইয় তাহার দৃষ্টি নূতন, চিস্ত নূতন, ভাব নুতন, কৰ্ত্তব্য নূতন হইল। পৃথিবীর সঙ্গে সম্বন্ধ নূতন হইল। কিন্তু র্যাহারা পৃথিবীতে থাকেন, তাহাদের জন্যও প্রত্যেক মৃত্যু যেন নূতন জীবন আনিয়া দেয়। ভক্তের, কবির, অহুভব করেন, সেই জীবনদেবতা তাহার নানা বিধির দ্বারা আমাদের এই জীবনেই কত জন্মজন্মান্তর ঘটাইয় দেন । র্তাহার এই কন্যাকেও তিনি, বালো পিতামাতার স্নেহের দ্বার, যৌবনে পতির ভালবাসার দ্বারা, সস্তানগণের প্রতি নিজ স্নেহের দ্বার, সংসারের নানা দায়িত্ব বহনের দ্বারা, সন্তান-বিয়োগের ও দুঃখ-সংগ্রামের দ্বারা, কত ভাবে যেন এই পৃথিবীতেই নব নব জন্ম দান করিয়াছিলেন। আবার এখন এই পরিবার হইতে র্তাহাকে তুলিয়া লইয়া, তাহার প্রিয়জনদের পার্থিব জীবনকে তিনি কত নবীভূত করিয়া দিতেছেন। গৃহের প্রত্যেক বস্তু, যাহা তিনি স্পর্শ করিয়াছিলেন, ব্যবহার করিয়াছিলেন, তাহা আজ কত পবিত্র মনে হইতেছে। গৃহের শিশুগুলি তাহার স্নেহের ধন বলিয়৷ তাহাদের আরও ভাল করিয়া ভালবাসিবার জন্য, স্নেহ দিবার জন্ত, মন উংস্থক হইতেছে। ঘরের যত কাজ পূৰ্ব্বে র্তাহার সঙ্গে একত্রে করা হইয়াছে, সে-সকলের মধ্যে মন, এখন তাহার সঙ্গ চায়, ও তাহার চিন্ময় সঙ্গ লাভ করে। প্রত্যেক কাজে তোমার মনের মত হইতেছে কি না? বার-বার মন এ কথা জিজ্ঞাসা করে। তিনি এই পৃথিবীর যে-যে স্থানে, যে-যে গ্রামে নগরে বাস করিয়াছেন, যে-যে স্থানের সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া তিনি তৃপ্তিলাভ করিয়াছেন, সেই সেই স্থান এখন তাহার আত্মীয়গণের নিকটে পবিত্র স্মৃতিতে পূর্ণ হইয়। কত প্রিয় হইবে। যে দামোদর নদ পার হইবার সময় বন্যার মধ্যেও র্তাহার চিত্ত অকম্পিত ছিল, সেই দামোদর এখন তাহার স্মৃতিতে জড়িত হইয়া যেন তীর্থে পরিণত হইবে। মৃত্যুর স্পর্শে আমাদের হৃদয় অধিক কোমল হয়, পৃথিবীর ভালবাসাগুলির প্রভাব মনের উপর অধিক প্রবল হয়, মানুষের মূল্য মন অধিক অনুভব করে, জীবনের গভীরতা বৰ্দ্ধিত হয়। জীবনের উপরে শোক যেন এক নূতন রঙের আলোক আনিয়া দেয়। এই শোকের শিক্ষা, জীবনে এই নৃতন ভাব, নূতন আলো, সযত্নে গ্রহণ ও সযত্নে রক্ষা করিতে হয়। আমাদের জীবনের প্রভু যিনি, ইহপরলোকের জীবনের এক দেবতা যিনি, তাহারই প্রেমের বিধিতে শোকের মধ্য দিয়া আমরা এই নৃতন ভাব, নূতন আলো পাই। আজ এই গৃহে তাহার সেই আলো পড়িয়াছে। গোধূলির ঈষৎছায়াযুক্ত গম্ভীর আলোর মত, পবিত্র শোকের গম্ভীর বর্ণ, এই গৃহের সকল বস্তুকে, সকল হৃদয়কে, ব্যাপ্ত করিয়াছে। এ সময়ে তিনি সকলের প্রাণে র্তাহার পবিত্র স্পর্শ দিন । আত্মার সত্যতা, অমরলোকের সত্যতা, আত্মায় আত্মায় সম্বন্ধের চিরন্তন সত্যতা, এ সকলের অনুভূতি প্রাণে উজ্জল করিয়া দিয়া, পরলোকের ঐ পবিত্র গম্ভীর আলোকে হৃদয়গুলিকে উদ্ভাসিত করিয়া, তিনি এখন আমাদিগকে তাহার উপাসনার জন্য প্রস্তুত করিয়া লউন । পরলোকস্থ ভক্ত আত্মাগণ, র্যাহাকে দেবাত্মাগণ, আমাদের সহায় হউন । আমাদের এ পবিত্র অনুষ্ঠান, তিনি স্বয়ং আমাদের হউন। তাহার প্রিয় সঙ্গীত আমরা গান করি। পৃথিব , মধুময় ; আমাদের জীবনধারা অবিরাম গতিতে সই পরম প্রেমময়ের মুখাসাগরের সন্ধানে চলিয়াছে,—র্তার্থীর প্রিয় এই সকল অনুভূতির দ্বারা আমরা আমাদের - হৃদয় পূর্ণ করি। তাহার ভাবে ভাবিত হইয়া, তাহাকে সঙ্গে লইয়া ঈশ্বরের উপাসনায় প্রবৃত্ত হই। অতঃপর তিনি ঈশ্বরের আরাধনীcকরেন । [ ইহার পরের সঙ্গীত, “নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে ফুলবনে।” ]