ভtঞ্জ সতর্ক-বাণী শুনিতে শুনিতে আমি অস্থির । অথচ সারা জীবনে এমন ভালবাসা, এমন সতর্ক-বাণী কাহারও কাছে পাই নাই। আজ রাইচরণ আছে—খাওয়া-দাওয়ার এতটুকু অনিয়ম করিতে দেয় না-রাইচরণের পাল্লায় পড়িয়া শরীরপালনের বিধি-নিয়মের গওঁীর মধ্যে চলাফেরা করিতে হয়— এতটুকু বাহির হইলেই রাইচরণের বকুনি আছে ; একটু যদি কোনও দিন অনিয়ম করি—রাইচরণ মুখ গভীর করিয়া বলে—পর বলেই আমার কথা শোনেন না, গিল্পী-ম থকৃলে— ইহার পর আর কথা নাই । শেষ-জীবন এই যে শান্তি, এই বে নীড় বাধিবার আকাঙ্ক্ষা—প্রথম জীবনে ইহার আভাস পাই নাই এতটুকুও। সেদিন যদি পাইতাম তাহা হইলে ঠিক এমন করিয়া হয়ত জীবনের পরিসমাপ্তি তইত না • • • দেখিতে দেখিতে আকাশ কালে হইয়া আসিতেছে । চাদ ডুবিয়া গেল। এতক্ষণে যেন পৃথিবী জুড়িয়া নিবিড় নিস্তব্ধতা বিরাজ করিতেছে--- মাথার উপর দিয়া কয়েকটি পাখী উড়িতে উড়িতে ওদিকে সলিয়া গেল । মনে হইল, অতীতের অরণ্য হইতে উহারা যেন বৰ্ত্তমানের লোকালয়ে ফিরিয়া আসিতেছে । চুপ করিয়া কাল পাতিয়া রহিলাম।---যেন কবেকার ছাড়িয়া-আসা অতীতের পদধ্বনি শুনিতে পাইতেছি ; অতীতের মধ্যে নিমগ্ন হইয়া গিয়াছি।--সেদিন সেই কৈশোরের দিনগুলি করুণ মূৰ্ত্তি লইয়া আবার সামনে আসিয়া দাড়াইল.নিজের দুৰ্দশা দেখিয়া নিজেই শিহরিয়া উঠিলাম। থাকিতাম পরের বাড়িতে—থাইতাম আর এক বাড়িতে। দয়া করিয়া আমায় মানুষ করিবার ভার তাহারণ লইয়াছিলেন —তাহাঁদের কাছে আমি কতজ্ঞ ! কিন্তু এখন ভাবি ! আমাকে মাচুৰ করিবার অতটা সদিচ্ছা তাহদের ন! থাকিলেই ভাল হইত— এখনও মনে আছে ; সে ঘরটায় আগে থাকিত চুণ-সুরকী। গরমের দিন রাত্রে মনে হইত যেন দম বন্ধ হইয়া বাইবে । - एट्रङगझ खङ्गचक्रं פאצף সকালবেলা স্কুল । জাম-কাপড় পরিয়া এক মাইল হাটিয়া এক বাড়িতে খাইতে হইবে—তার পর সেখান হইতে ইস্কুল। প্রকাও বাড়ি-আত্মীয়, পরিজন, অতিথি-অভ্যাগতে ভরা। রান্নাঘরে গিয়া অতি বিনীত স্বরে ভাত চাহিলাম। স্কুলাজী বামুন-মাসী তখন রান্নায় ব্যস্ত। আমাকে দেখিয়াই বলিল—দূর দূর—বাবুদের এখনও খাওয়া হ’ল না, উনি নবাব এলেন----- বলিলাম—দাও বামুন-মাসী, আজ সকাল-সকাল ইস্কুল— কথাটা শুনিয়াই বামুন-মালী গরম হাতা লইয়া ছুটিয়া আসিল—তবে রে ছোড়ার নিকুচি করেছে-- পলাইয় আত্মরক্ষা করিলাম। ঝির কাছে শুনিলাম বাবুদের সরু চালের ভাত হইয় গেছে, মামাদের জন্য মোটা চালের ভাত তখনও চাপান হয় নাই । সে-ভাত হইতে এখনও অনেক দেরি আছে । সেদিন না-থাইয়াই দেড় মাইল পথ হাটিয়া ইস্কুলে গেলাম । দেড় মাচল রাস্ত --রৌদ্র আর বৃষ্টিতে পথের অবস্থা শোচনীয় হতীয় আছে । শরীরের অবস্থা আরও শোচনীয়। মাথ৷ ঘুরিতেছিল-ইস্কুলের ছুটির পর কেমন করিয়া পথ ইটিতেছি কিছুই টের পাইতেছি না। কোথা দিয়া কোথায় ধাইতেছি ঠিক নাই। মাথা ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে। দেহের শিরাউপশিরাগুলি যেন শিথিল হইয়া আসিতেছে। কান দুটি গরম হইয়া গেল। কি করিয়াছি কিছুই মনে নাই। শুধু মনে আছে আমি হঁটিতেছি—পথের পর পথ হঁটিতেছি--- কিন্তু কোনদিকে যে ঘাইতেছি তাহার ঠিক নাই। সন্ধ্যা হহয় গেল----হঠাৎ কোথায় কাদায় পা পড়িতেই আমি পড়িয়া গেলাম। সহসা চেতনা হইল— s লাগিয়াছে খুব—মাথাটায় বেশী লাগিয়াছে। কিন্তু সে-লাগার জন্ত চিন্ত নয় ; জাম-কাপড় কাদায় একেবারে মাখামাথি হইয়া গেল—এ-লইয়া বাড়িতে ঢুকিব কেমন করিয়া । এ-অবস্থা দেখিলে দয়া করা দূরের কথা জ্যাঠামশাই নারিয়া খন করিবে। কেবাড়িতে থাকিতাম, জাম-কাপড় পাইতাম সেই বাড়ি হইতে । মনে হইল কম্বুইয়ের কাছে কোটুটা যেন ছিড়িয়া গিয়াছে।---আমার মাথা গোলমাল হইয়া গেল।...আমার কথা বিশ্বাস করিবে কে ?
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।