ዓ›ፀ চোখের সামনে জ্যাঠামশাইয়ের বীভৎস মূৰ্ত্তি ফুটিয়া উঠিল।--সেই পরিচিত বেতের আঘাতের শক যেন কানে শুনিতে পাইলাম ; দুই হাতে থান-ইট লইয়া দুই ঘণ্টা দাড়াইয়া থাকিতে হইয়াছে—কোনও কোনও দিন রাতে ফেল করিয়াছি বলিয়া ভাত খাইতে পাই নাই। হয়ত এ-সব আমার ভালর জন্তই—কিন্তু রক্ষা এই ঃ পৃথিবীতে এমন ভাল করার লোক অতি অল্প । তার পর সেই কাদামাখা জামা লইয়া আসিতেছি । বাড়ির কাছে আসিয়া পা যেন আর চলিতে চায় না। কেমন করিয়া ঢুকি—হঠাৎ দেখা হইলে কি কৈফিয়ং দিব। আস্তে আস্তে পা টিপিয়া টিপিয়া খিড়কীর দরজা দিয়া চুধিলাম; সে দিকটায় বাগান অন্ধকার ; বেশ সস্তপণে আসিতেছি। --হঠাৎ কানে আসিল—কে রে ? মাথা হইতে পা পৰ্য্যন্ত সমস্ত শরীরে যেন এক নিমেষে। রক্ত-চলাচল বন্ধ হইয়া গেল । –কথা বলছিল না—কে ?—পন্টু বুঝি ? কাছে আসিতেই দেখিলাম--রাণুদি– রাগুদিকে দেখিয়াই আর থাকিতে পারিলাম ন+ অসহায়ের মত কাদিয়া ফেলিলাম। আমাকে কাদিতে দেখিয়া রাগুদি আমার মাথায় হাত দিয়া বলিল—পড়ে গিছলি বুঝি ? তা কাদছিস্ কেন ? কেন যে কাদিতেছিলাম তা কি আমিই জানি ? রাশুদি'র হাতের স্পর্শে কান্না যেন আরও প্রবল হইয়া গেল। কাদিতে কাদিতে সমস্ত ঘটনাটা রাখুদিকে বলিলাম। শেষকালে বলিলাম—তোমার পায় পড়ি রাখুদি– জ্যাঠামশাইকে বলে দিও নী— রাগুদি বলিল—তবে আগে পায়ে পড়— কি ভাবিয়া রাখুদি'র পায়ের উপর হাত দিতে গেলাম— রাগুদি দুই হাত দিয়া জামায় তুলিয়া ধরিল। হাসিয়া বলিল—সুর স্বাক ছেলে—একটু বুদ্ধি নেই তোর ?-- তার পর সে-রাত্রে রাখুদি'র চেষ্টায় কেমন করিয়া সমস্ত গোলযোগ মিটিয়া গেল। তার পর দিন জাম-কাপড় ফস1 অবস্থা,আমার ঘরে আলিয়া উপস্থিত। রানি না থাকিলে সেদিনধর্ম কি ছিল আমার কপালে, তা আমিই জানি। তার পর অনেক দিন কাটিয়া গিয়াছে••• . প্রবাঙ্গী ১২9®ই, জাঁকজমক করিয়া রাখুদি'র বিবাহ হইয়া গেল। বরকনে চলিয়া যাইবার সময় মোটরের পাশে গিয়া দাড়াইয়ছিলাম ; কিন্তু রাণুদি একবারও চাহিয়া দেখিল না। মনে আছে ; সেই অভিমানে খুব কাদিয়াছিলাম দিনকতক। রাগুদি'র চিঠি আসিয়াছে শুনিলে কান পাতিয়া থাকিতাম : চিঠিতে আমার কথা আছে কি না ? মনে মনে রাখুদিকে কত ডাকিতাম । তখন শীতকাল । কয়েক দিন ধরিয়া জর হইয়াছিল সবে সেদিন পথ্য করিয়াছি— জানালা হইতে দূরে করম্চ-গাছের দিকে চাহিতে চাহিতে কখন ঘুমাইয়া পড়িয়ছিলাম—আকাশের সাদা-কালো মেঘে কখন অজ্ঞাতে একটি স্বকঠিন বস্ত্র তৈরি হইতেছিল, টের পাই নাই। হঠাৎ জ্যাঠামশাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙিয়া গেল। থর-থর করিয়া কঁাপিতে কঁাপিতে বৈঠকখানায় গিয়া হাজির হইলাম। সবে মাত্র জর হইতে উঠিয়াছি—দুৰ্ব্বলতায় চোখে অন্ধকার দেখিতে লাগিলাম। জ্যাঠামশাইয়ের পাশে বেতের ছড়িটার উপর নজর পড়িল । কিন্তু—কি জানি কেন—জ্যাঠামশাই সেটি স্পর্শ করিল না ! কাছে যাইতেই বজ্ৰগম্ভীর কণ্ঠে বলিলেন—এটা কি ? নজর করিতেই দেখি : সৰ্ব্বনাশ ! আমার কবিতার খাতাখানা র্তাহার সামনে খোলা । মনের খেয়ালে কখন কি লিখিতাম। শরং লইয়া, জন্মভূমি লইয়া, মা লইয়া এমনই কত কি লইয়া ! রাণুদি’র জন্য যখন কাল্পায় গলা বন্ধ হইয়া যাইত তখন রাত জাগিয়া পন্থাকারে যাহা লিখিতাম, তখন সেগুলিকে ‘কবিতা' বলিতাম !---আমার নিজের জীবন হইতে প্রিয়তর জিনিষটির দুৰ্গতির কথা ভাবিয়া আমার চোখে জল আসিবার জোগাড় হইল। —এটা কি ? কে লিখেছে ? উত্তর দে। জ্যাঠ+ মশাইয়ের কণ্ঠে যেন বিষ আছে। ক্ষীণকণ্ঠে বলিলাম—আমার— ইম্—বলিয়া জ্যাঠামশাই চুপ করিলেন। - হয়ত আমার শরীর অনুস্থ বলিয়া শাস্তি হইতে রেহাই পাইলাম ; কিন্তু সে-শাস্তির বদলে ম্বেশাস্তি পাইলাম তাহ এ-জীবনে জুলিতে পারিলাম কই ? s *
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।