পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՊՊwՆ প্রবাসী ১৩৪২ ও ভাগবতে শ্ৰীকৃষ্ণের মানবচরিত্র নিষ্কলঙ্ক ও নির্দোষ প্রমাণ করিবার কোন চেষ্টা নাই। শ্ৰীকৃষ্ণ দুৰ্য্যোধন ও অর্জুন উভয়ের সাক্ষাতে প্রতিশ্রত হইয়াছিলেন তিনি যুদ্ধে অস্ত্র গ্রহণ করিবেন না এবং নিরস্ত্র ও নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকিবেন । কিন্তু এই প্রতিজ্ঞ তিনি রক্ষা করিতে পারেন নাই এবং দুইবার ভঙ্গ করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। তৃতীয় দিবসের যুদ্ধ অবহার হইবার পূৰ্ব্বে ভীষ্মের পরাক্রমে পাওব অনীকিনীসমূহ দলিত, মখিত, ক্ষুব্ধ, সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিল। ভীষ্মের বীর্য্য ও অর্জুনের স্বছত দেখিয়া মধুসুধন ক্রোধাম্বিত হইয়া বজ্ৰতুল্য ক্ষুরধার স্থদৰ্শনচক্র উদভ্ৰামণ পূর্বক রথ হইতে অবতরণ করিয়া ভীষ্মের প্রতি ধাবমান হইলেন। মহাকবি বর্ণনা করিয়াছেন নারায়ণের নাভিজাত পদ্মের দ্যায় বাস্থদেবের বাহুরূপ নালে স্থদৰ্শন-স্বরূপ পদ্ম শোভা ধারণ করিল । ধন্সৰ্ব্বাণ-হস্তে অসম্রাস্ত চিত্তে শাস্তস্থতনয় শ্ৰীকৃষ্ণকে ভজনা করিয়া কহিলেন, হে জগন্নিবাস, আমাকে অবিলম্বে রথ হইতে পাতিত কর! অর্জুন দ্রুতগতি জনাৰ্দ্দনের পশ্চাতে গিয়া তাহার পীন বাহুযুগল ধারণ করিলেন। ‘মহাবায়ু যেরূপ বৃক্ষ লইয়া গমন করে তদ্রুপ মহাত্মা বাস্থদেব সমধিক ক্রোধাম্বিত চিত্তে অর্জুনকে লইয়৷ ভীষ্মের প্রতি ধাবিত হইলেন। অর্জুন তাহার বাহু ত্যাগ করিয়া তাহার চরণদ্বয় ধারণ করিলেন এবং দশম পাদক্ষেপ সময়ে তাহার গতি রোধ করিয়া, তাহাকে সাঞ্চনা করিয়া রথে ফিরাইয়া লইয়া গেলেন । দ্বিতীয়বার যুদ্ধের নবম দিবসে আবার সেই ঘটনা। আবার সেই মহারথী ভীষ্মের অদ্ভুত বীৰ্য্য, বাস্থদেব ও ধনঞ্জয় ভীষ্মশরে ক্ষতবিক্ষত হইলেন । এবার স্থদর্শন গ্রহণ করিবারও বিলম্ব সহিল না। কশা-হস্তে কেশব রথ হইতে লম্ফ দিয়া ভীষ্মের অভিমুখে ধাবিত হইলেন। রণস্থলে কোলাহল উঠিল, ভীষ্ম হত হইলেন, ভীষ্ম হত হইলেন! আবার অতি কষ্টে অর্জুন ঐকৃষ্ণকে শাস্ত করিলেন, তাহার প্রতিজ্ঞ স্মরণ করাইয়া দিলেন, কহিলেন, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিলে লোকে তোমাকে মিথ্যাবাদী কহিবে। রাস্বদেব নিবৃত্ত হইলেন। এই সকল ঘটনায় শ্ৰীকৃষ্ণের আচরণ সাধারণ মানবের হুতায় । দেশদেশান্তরে যে-সকল লোকগুরুকে লোকে ঈশ্বরাবতার বলিয়া বন্দনা করে তাহাদিগের মধ্যে কৃষ্ণচরিত্র সৰ্ব্বাপেক্ষা সৰ্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ ও জটিল। গীতায় তিনি যেরূপ ভাব ধারণ করিয়াছেন এরূপ কুত্ৰাপি কোন অবতার বা জগদগুরু করেন নাই । তিনি এমন কথা বলেন নাই যে, তিনি ও ঈশ্বর এক, অথবা তিনি বিষ্ণুর পূর্ণ কিংবা অংশাবতার ; তিনি সাক্ষাৎ ঈশ্বর স্বয়, ইহাই তাহার মুক্ত ও দৃঢ় বাণী। যুগে যুগে ধরাতলে তাহারই আবির্ভাব হয়, তিনিই শিষ্টের পাতা ও অশিষ্টের শাস্তা। তাহারই উদ্দেশে কৰ্ম্মফল ও পুণ্যফল উৎসর্গীকৃত হইবে। শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রকলার সংখ্যা এত অধিক, র্তাহাতে পরস্পর-বিসম্বাদী এত প্রকার ভাব লক্ষিত হয় যে সাধারণ নিয়মাদি বা বিশ্বাস দ্বারা তাহার চরিত্রতত্ত্ব কোনমতে গ্রহণ করিতে পারা যায় না, কাহারও সহিত তাহার তুলনা করা যায় না। মানবশরীরে তাহার সহিত বুদ্ধদেবের অথবা যীশুখ্রীষ্টের কোন সাদৃপ্ত লক্ষিত হয় না। র্তাহারা উভয়ে সৰ্ব্বত্যাগী, শ্ৰীকৃষ্ণ কিছুই ত্যাগ করেন নাই। তিনি রাজপুত্র এবং স্বয়ং রাজার তুল্য, তাহার পিতা নামমাত্র রাজা । তাহার যেরূপ পদ তিনি সেইরূপ স্বখৈশ্বর্ঘ্যে বাস করিতেন। র্তাহার বহু পত্নী, পুত্র ও প্রপৌত্র। বিষয়বুদ্ধিতে তিনি অদ্বিতীয়। তিনি চতুর, ক্ষমতাশালী, লোকব্যবহারে কুশলী। সত্য কথা বলিতে হইলে, তিনি আবশুক হইলে, ফুটাচরণও করিতেন। ভীমের গদাঘাতে উভয় উরু ভঙ্গ হইয়া দুৰ্য্যোধন রণভূমিতে পতিত হইয়া শ্ৰীকৃষ্ণকে সম্বোধন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করিয়াছিলেন । কয়েকটি অভিযোগ সত্য ৷ শ্ৰীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে কথিত হইয়াছে রাজা পরীক্ষিৎ শুকদেবের মুখে কৃষ্ণচরিত্র শ্রবণ করিয়া সন্দিহান চিত্তে গীতার উক্তি পুনরাবৃত্তি করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ব্ৰহ্মণ, ধর্মের সংস্থাপন এবং অধৰ্ম্মের দণ্ডবিধান করিবার নিমিত্তই জগদীশ্বর ভগবান অবনীতে অবতীর্ণ হন। তাহার এরূপ নিন্দনীয় আচরণের অভিপ্রায় কি ? উত্তরে শুকদেব বলিলেন,— ব্যতিক্ৰম ? ঈশ্বনাশা সনি। তেজীয়সাং ন দোষায় বহে সৰ্ব্বভুজে বখ ॥ ঈশ্বরদিগের ধৰ্ম্মতিক্রম এবং সাহস দেখা গিয়াছে। তেজৰীদিগের তাহাতে দোষ হয় না। অগ্নি যেমন সমস্তই ভোজন করিয়া থাকেন, তেমনই ঈশ্বরের কোন বিষয়ে দোষ সম্ভবে না । এই যুক্তি হইতে প্রেমাণিত হইতেছে যে ঐকৃষ্ণ সাধারণ