অগঞ্জিন আনন্দের লেশমাত্র নাই। বাপের উপর সে রীতিমত চটিয়া গিয়াছে। কলেজ খুলিতে মাত্র আর এক সপ্তাহ বাকী, কোথায় পড়াশুনার ব্যবস্থা সব ভাল করিয়া করিবেন, না কোথাকার এক ভূড়িওয়ালা বুড়োর ছেলের সঙ্গে বিবাহ দিবার জন্য আদাজল খাইয়া লাগিয়া গেলেন ! মমতা বিবাহ এখন কিছুতেই করিবে না, বাবা কেন যে অনর্থক এমন করিতেছেন তাহা তিনিই জানেন । আই-এতে কি কি সব জেক্ট লইবে তাহ নিৰ্ব্বাচন করিতেই সে ব্যস্ত, ভাবী স্বামী-নির্বাচনে তাহার উৎসাহ নাই। যামিনী যদি কিছু আগ্রহ দেখাইতেন, তাহা হইলেও মমতার মনটা একটু অনুকূল হইলেও হইতে পারিত, বলা যায় না। কিন্তু মায়ের যে মত একেবারেই নাই, তিনি যে এই ব্যাপার লইয়া দুঃখই পাইতেছেন, তাহা মমতা বুঝিয়াছে, এবং বুঝিয় তাহার মন একেবারে বিমুখ হইয়া গিয়াছে । দুপুর শেষ হইতে চলিল। স্বরেশ্বর আর সহ করিতে ন পারিয়া চাকর দিয়া যামিনীকে ডাকাইয়া পাঠাইলেন । ঘামিনী রান্নাঘর হইতে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ডাকছ কেন ?” স্নরেশ্বর স্বভাবসিদ্ধ কলহের স্বরে বলিলেন, “ডেকে এমন কি অপরাধ হয়েছে ? দরকারও ত মানুষের কিছু থাকতে পারে ?” কিছুতেই চটিবেন না, যামিনী এক রকম পণই করিয়া আসিয়াছিলেন, তিনি শাস্তভাবেই বলিলেন, “সেই দরকারটা কি তাই ত জিজ্ঞেস করছি।” স্বরেশ্বর বলিলেন, “ভদ্রলোকের ছেলেকে চা থেতে ত ডেকে পাঠালে, জোগাড়জাগাড় ঠিকমত হয়েছে ত ? এসে না মনে করে কি এক উজ বুকের বাড়ি এলাম।” যামিনী কষ্টে হাসি চাপিয়া বলিলেন, “না, তার উপযুক্ত অভ্যর্থনার কোনো ক্রটি হবে বলে ত মনে হচ্ছে না। বাঙালীর ছেলে বই আর কিছু ত নয় ? তাকে অবাক ক’রে দেবার মত কিছু ঘটবে না সম্ভবতঃ ” কথার স্বরে একটু যে শ্লেষ আছে তাহা স্বরেশ্বর ধরিয়া ফেলিলেন, ঝাঝিয়া বলিলেন, “নিজের জাকেই গেলে । কিসের যে এত জাক তাও যদি বুঝতাম—” আরও কি বলিতে যাইতেছিলেন, যামিনী বাধা দিয়া জন্মস্বত্ব ఇవనివసి বলিলেন, “দেখ বাপু অনৰ্থক বক্বক্ ক’রো না। বিন্দুঠাকুরঝির মাথা ধরেছে, নূতন রায়ার লোকটাকে সব জিনিষ একটা-একটা ক’রে বোঝাতে হচ্ছে । তোমার সঙ্গে বসে ঝগড়া করার সময় আমার নেই। তাহলে সব কাজ মাটি হবে। খুকীকে এখনও চুল বেঁধে দিতে হবে, আমার নিজের কাপড়চোপড় বদলাতে হবে, গা ধুতে হবে। দরকারী কথা কিছু থাকে ত বল, না হ’লে আমি চললাম।” যামিনী এমনভাবে কথা প্রায়ই বলেন না, সুরেশ্বরকে বাজে বকিবার যথেষ্ট অবসরই সচরাচর দিয়া থাকেন । স্বরেশ্বর ঠিক কি করিবেন, অতঃপর কোন পথে নুতন কলহের আমদানী করিবেন, তাহ স্তির করিবার আগেই যামিনী ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন । কচিছেলের কাচা ঘুম ভাঙিয়া গেলে যেমন মন খুৎ খুৎ করে, ঝগড়াটার পূর্ণ পরিণতি লাভে বাধা পড়ায় স্বরেশ্বরেরও তেমনই মন খুৎ খুং করিতে লাগিল, কিন্তু সত্যসত্যই কাজ পও হইবার ভয়ে তিনি আর যামিনীকে ডাকিতে ভরসা করিলেন না । কিন্তু একলা চুপ করিয়া বসিয়াই বা কতক্ষণ মনে মনে গজরান যায় ? অতএব চাকরকে ডাকিয় একটু গালাগালি করিলেন, স্বজিতকে ডাকিয় একবার ধমকাষ্টয়া দিলেন। তাহার পর মমতা এবং লুসিকে ভাকিয় পাঠাইলেন, অবশু বকিবার উদ্দেশ্যে নহে। মমতা মায়ের আদেশমত তখন সবে গা ধুইয়া বাহির হইয়াছে, লুসি গা ধুইতে গিয়াছে। বাপের ডাকে খোলা চুলটা টিপি করিয়া জড়াইয়া ভিজা তোয়ালে হাতেই সে তাহার শয়নকক্ষে গিয়া হাজির হইল। স্বরেশ্বর মেয়ের মূৰ্ত্তি দেখিয়া বলিলেন, “কি মা, এই চান ক’রে এলি নাকি ?” মমতা বলিল, “এই ত গা ধুয়ে বেরুলাম বাবা, লুসি এখনও গা ধুচ্ছে। তুমি ডাকছ কেন ?” কেন যে ডাকিয়াছেন তাহা স্বরেশ্বর নিজেও জানেন না । র্তাহাকে বাড়ির লোকে দু-দওও ভুলিয়া থাকে, ইহা তিনি সহ করিতে পারেন না, নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে স্ত্রী-পুত্র-কস্তা সকলুকে সচেতন করিয়া রাখাই তাহার ডাকিয়া পাঠানোর উদ্দেশু, অবশু সেটা তলাইয়া নিজেও ঠিক বুঝিতে পারেন কি না সন্দেহ। মেয়ের কথার উত্তরে বলিলেন, “তা যাও ম, চুল বেঁধে কাপড়চোপড়, ভাল ক’রে পর গিয়ে । আজ
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।