পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-S3 দয়ালের র্কাধ টিপিলেন। দয়ালও বসিয়া বসিয়া ঝিমাইতেছিল। হরিবিলাসের হাতের স্পর্শ পাইয়া উঠিয় দাড়াইল । “দেখছিস্ দয়াল, কাছারী-বাড়ির ঠিক সোজা নিশুতির উপর কিছু দেখছিস্ ?” চোপ দুইটি আবার বেশ ভালরকম মুছিয়া লইয়। দয়াল দেখিল, সত্যই নিশুতি বিলের বুকে চার-পাচটা প্রদীপ ক্রমাগত ঘুরিতেছে!” “এই কিন্তু সময়, দয়াল ! এখনই উঠে পড় ।” “যস্তরটা আর একবার চোখে লাগিয়ে দেখুন, হুজুর ! সত্যিই দৈবী পিবৃদৗম্ ম আর কিছু !” “আর দেখতে হবে না। আমি অনেক ক্ষণ থেকেই দেখছি। প্রদীপ সব একই জায়গায় ঘুরছে। যদি মামুষিক প্রদীপ হ’ত তবে বাতাসে ভাসতে ভাসতে এত ক্ষণ কোথায় চ’লে যেত ।” হরিবিলাস ঠিকই বলিয়াছেন। আরও কিছু সময় লক্ষ্য করিয়া দয়ালও দেখিল প্রদীপগুলে| সেই একই জায়গায় ঘুরপাক খাইতেছে। আর বিলম্ব নয়। মনে মনে মনসাকে স্মরণ করিয়| বিড়-বিড় মন্ত্র আওড়াইতে আওড়াইতে দয়াল ডিঙি অভিমুখে অগ্রসর হইল। ঠিক সেই সময় দেয়ালের ফাটল হইতে একটা কালে পেচা দয়ালের মাথার উপর উড়িয়া আসিয়া ডাক ছাড়িল – । যাত্রাকালে অমঙ্গল-দর্শনে দয়াল থমূকিয় দাড়াইতেষ্ট হরিবিলাস সাহস দিয়া বলিলেন, “ভয় নেই দয়াল ! এ লক্ষ্মী-পেঁচ । রোজ ঐ ফাটল থেকে বেরিয়ে ঘরের ভেতর আমার লোহার সিন্দুকের উপরে বসে।” দয়াল গিয়া ডিঙিতে চড়িল । প্রদীপ লক্ষ্য করিয়া অগ্রসর হইতে হইতে ক্রমে অন্ধকারে মিলাইয়া গেল। হরিবিলাস কান পাতিয়া রহিলেন। সব নিস্তব্ধ, প্রায় কুড়ি মিনিটের পর বিলের জলে কুপ-ঝাপ, শব্দ হইল। যেন একট; লোক জলে ঝাপাইয়া পড়িল ; সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপ সব নিবিয়া গেল। সিন্দুক পাইয়। তবে দয়াল নিশ্চয়ই জলে ঝাপ দিয়াছে। এখন তলাইয়া না গেলেই হয়! কোন রকমে পাড়ের কাছে টানিয়া আনিতে পারিলেই রক্ষা ! আরও কিছু সময় কাটিল। এই বাদলারাতেও দরদর করিয়া প্রবাসী ১৩৪২ ঘাম ছুটিতেছিল। ঐ একটা লোকের সাতার-কাটার শব্দ কানে বাজিতেছে না ? শব্দটা ক্রমেই কাছারী-বাড়ির দিকে আগাইতেছিল । উল্লাসে হরিবিলাস গলা ছাড়িয়া ডাকিলেন—“দয়াল, দয়াল !” প্রায় ত্ৰিশ হাত পূরে ভূ ভূ’ একটা আওয়াজ শোনা গেল । হরিবিলাস টর্চ টিপিলেন। ঐ যে, একহাতে ডিঙিনৌকায় ভর রাখিয়া অপর হাতে জলের নীচে কি একটা ভারি জিনিষ টানিতে টানিতে দয়াল অতিকষ্টে তীরের দিকে সাতার কাটিয়া অগ্রসর হইতেছে। হরিবিলাসের আর ধৈর্য্য রহিল না। “কি পেলি রে, দয়াল ! সিন্দুক না ঘড় ?” তীরের দিকে আগাইতে আগাইতে দয়াল বলিল— "সিন্দুক নয়, ঘড়াও নয়, কৰ্ত্ত ! ইয়৷ মোট দুটে রুই আর কাতলা।” মাথায় হাত দিয়া হরিবিলাস বসিয়া পড়িলেম । দয়াল বলিয়া চলিল—“কম 'কেলেশটি দিয়েছে নাকি । ডিঙি থেকে জলে লাফিয়ে পড়ে তবে ধরলুম। ধরেও ডিঙিতে তোলা গেল না । লাফিয়ে ডিঙি ভেঙে ফেলে আর কি ?” হরিবিলাস এখন রাগিয়া টং হইয়া গিয়াছেন । “মাছ কি রে ব্যাট ? শুধু হাতে মাছ ধবৃলি কি ক’রে ?" “শুধু হাতে নয়, হুজুর ! জালে আটকা পড়েছিল।” হরিবিলাস গৰ্জিয়া উঠিলেন –“জাল ? তবে রে ব্যাট ছুচে, ডিঙিতে ক’রে লুকিয়ে জাল নিয়ে গিয়েছিলি বুঝি ? ফাকি দেবার আর জায়গা পাও নি ?” “দোহাই কৰ্ত্তা ! ম-মনসার দিব্যি ! ডিঙিতে ক’রে কিছুই নিয়ে যাই নি। বিকেলে পাটুলি নদীর উজানে পাহাড়ের কাছেই বিলের খানিকট জায়গা বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলুম। ভেবেছিলুম, রাতে যেসব মাছ আটকা পড়বে, কাল ভোরে সেগুলো তুলে নেব। তা সন্ধ্যে থেকেই জোর বৃষ্টি নামূল কি না, তাই পাহাড়ী জল ছুটে তোড়ের মুখে খুটিগুলো সব উপড়ে জালটা ঐখানে নিয়ে এল।” দাত-মুখ খিচাইয়া হরিবিলাস বলিলেন—“বটে, জালের ঠ্যাং বেরিয়েছিল কিনা, তাই তাতে ভর করে জলের উপর একই জায়গায় এত ক্ষণ দাড়িয়ে রইলে!”