আশ্বিন বন্যাসঙ্গিনী جدة سوا হবে ন—সে হাসির মধ্যে এ-অর্থটুকুও বোধ হয় লুকিয়ে ছিল । তবু সে মৃত্নকণ্ঠে বললে –আল্লার হুকুম যেদিকে হবে বাৰু। কথাটা সামান্য ও স্বলভ। কিন্তু এত বড় সত্য সংসারে বোধ হয় আর কিছুই নেই। সবাই মুখ চাওয়া-চায়ি করতে লাগল। এর পরে বিপিনের আর কিছু বলবার ছিল না। সন্ধ্য। উত্তীর্ণ হয়ে রাত্রি ঘনিয়ে এল। জোরে বৃষ্টি নামল, তার সঙ্গে ঝড়ের বাতাস । সম্মুখের বিশাল প্রাস্তরের বুকের উপর দিয়ে বিক্ষুব্ধ বর্ষার দুরন্তপন চলছে, কিন্তু তার কিছুই দেখা যায় না। দাওয়ার এক প্রান্তে কাঠের আগুন গতিকষ্টে জালানো হ’ল। পথশ্রমে সবাই অবসন্ন, তবু আহারের আয়োজন না করলে কিছুতেই চলবে না। দাওয়ার এক ধারে চালার নীচে দিয়ে জল পড়তে লাগল। রান্ত্রি খতিবাহিত করা এখন প্রবল সমস্ত । পরম উপাদেয় ভোজ্য রুটি, আলুসিদ্ধ আর হুল-সবাই মিলে অপরিসীম আগ্রহে আহার করলে । বুদ্ধ পেয়ে অশেষ আশীৰ্ব্বাদ জানালে, এবং রহমন সকতজ্ঞ দৃষ্টিতে এই পরোপকারীর দলের দিকে একবার চেয়ে এক পাশে গিয়ে প’সলে । আহারাদির পর শোবার পালা । কিন্তু সকলের স্থান সঙ্গুলান হওয়া সম্ভব নয়। ঠিক হ’ল, প্রতি দফায় আট জন ঘুমোবে, চার জন বসে থাকবে। এমনি ক’রে তিন দফায় রাত্রি কাঢ়বে। কুকুরটা থাকাতে সকলের মনে একটু সাহসও হ’ল। একটা আলো সমস্ত রাত জালানোই ধাকৃবে। প্রথম দফায় নবীন বাবু প্রমুখ আট জন জলের ছাট বাঁচিয়ে দয়াল ঘেযে জায়গা সঙ্কুলান ক’রে নিলেন। পা ছড়ান সবে ন জায়গা বড় সঙ্কীর্ণ। তবু পা গুটিয়ে কাং হয়ে ক্টার চোপ বুজলেন। হাতঘড়িট দেখে স্বরেশ্বর বললে - রাত এখন নট । তৃতীয় দফায় রাত শেস হবে । যারা পাহারায় বসেছিল ”দের চোথেও তন্দ্র নেমে এসেছে । আলোটা জলছে । ওয়ার নীচে থেকেই মৃদর প্রাস্তরের সীমানা সেখানে ইন্ধকারের পর অন্ধকারের দল। প্রেতপুরীর মত পৃথিবী নীরব, কেবল দূর-দূরান্তরের ঝিল্লী ও দাজুরীর আওয়াজ নিরস্তর নিশীথিনীকে বিদীর্ণ করে চলেছে। বৃষ্টির শব্দ আর শোনা যায় না । যারা পাহারায় বসেছিল, তাদের মধ্যে একটি ছেলে হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনে আচমকা তাকালো। অস্পষ্ট আলোয় এক ছায়ামূৰ্ত্তির দিকে চেয়ে বললে-কে তুমি, কি চাও? গলার আওয়াজটা তার অস্বাভাবিক রূঢ় আর উচ্চ । নবীন বাৰু এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকর ধড়মড় ক’রে জেগে উঠে বসলেন । -কে হে কালু, কোথায় কে ? আরে, কে তোমরা ? বলতে বলতেই দেখা গেল একটি লোক ছোট একটা তোরঙ্গ মাথায় নিয়ে এসে দাড়িয়েছে, তার সঙ্গে একটি বার-তের বছরের কিশোরী মেয়ে।' ' লোকটি বললে –চলেক্ট যাচ্ছিলাম, আলো দেখে এলাম এদিকে বাবু, একটু জায়গা দেবেন আপনার, রাতটুকু কাটিয়ে যাব ? বিস্ময়ের ঘোর তপন ও কাটে নি । কোথা থেকে আসড় তোমরা ? আসছি তারকপুর থেকে । জলে গ্রাম ঘিরে ফেললে, সন্ধে থেকে ছুটতে ছুটতে আসছি, এবারে বন্যে ভয়ানক বাৰু ! আমার নাম ঈশ্বর, এটি আমার মেয়ে ; এর মা নেই । মেয়েটি এবার বললে –দী ও না বাবুর একটু জায়গা, কাল সকালেষ্ট চলে যাব । - নবীন বাবু এবার তাড়াতাড়ি বললেন—এস মা এস, এখানে আমরাও যা, তোমরাও তাই। এস ভাই ঈশ্বর, বিপিন বললে -- -মীমাও তোমার তোরঙ্গ । অনেক দূর হাটতে হয়েছে, কেমন ? ঈশ্বর বললে—ষ্ট্য। বাবু, প্রায় বিশ মাঈল আসতে হ’ল। —বিশ মাইল ! দূর পাগল, এইটুকু মেয়ে বিশ মাইল-- মাইলের জ্ঞান তোমার খুব দেখছি। ঈশ্বর বললে বিশ্বাস যাবেন না বাবু, আটথান মাঠ পার হয়ে এলাম...আমার মেয়ে আরও বেশী ইটে । সবাই স্তম্ভিত হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল । নবীন বাৰু, কেবল অস্ফুট কণ্ঠে বললেন -রাত কত হে স্বরেশ্বর ? в হাতঘড়ি দেখে সুরেশ্বর বললে তিনটে বঙ্গে মাষ্টার মশাই ।
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।