পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বগীয় দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লিখিত একটি চিঠি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তোসামীর চীন সাগর কল্যাণীয়েযু দিল্প, কোথায় আছিস্ জানি নে। এ চিঠি যখন পৌছবে তখন নিশ্চয় তোদের ইস্কুল খুলেছে। তোদের শালবাগানে আষাঢ়ের নব মেঘ ঘনিয়ে এসেছে, তোদের জামগাছগুলোতে মেঘলা রঙের ফল ফলেছে, প্রান্তরলক্ষ্মী সবুজ রঙের আঁচল দিগন্তে বিস্তীর্ণ করে দিয়েছে। তোর বেণুকুঞ্জের সভাতে এস্রাজে মেঘ-মল্লারের স্বর লেগেছে। আমি তো কিছু কালের জন্ত চলে এলুম, আমাদের আশ্রমের আনন্দ-ভাণ্ডারের চাবিটি তোর কাছেই রইল, সকালে বিকালে শিশুগুলোকে স্বরের মৃধা বণ্টন করে দি । এবারে আশ্রমে চিঠি লেখবার লোকের অভাব নাই - , খবর খুব বিস্তারিত রকমেই পাবি সন্দেহ নেই ; আমি এবার চিঠি লেখায় সময় দিতে পারব না। সবুজপত্র যদি বেঁচে থাকে তবে তারি পত্রপুটে আমার লেখা দেখতে পাবি । যা-কিছু অবকাশ পাই তর্জমা এবং বক্তৃতা লেখায় কাটাতে হবে। এখন পশ্চিম দিকে মুখ ফিরিয়েছি মৃতরাং তোদের দিকে আমার পশ্চাং করতে হবে। কাল রাত্রে ঘোরতর বৃষ্টি বাদল স্বরু হ’ল । ডেকের কোথাও শোবার জো ছিল না। অল্প একটুখানি শুকনে জায়গা বেছে নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গান গেয়ে অৰ্দ্ধেক রাত্রি কেটে গেল । প্রথমে ধরলুম “শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে পড়ুক ঝরে” তার পরে "বীণা বাজাও” তার পরে “পুর্ণ আনন্দ” কিন্তু বৃষ্টি আমার সঙ্গে সমান টঙ্কর দিয়ে চলল—তখন একূট নুতন গান বানিয়ে গাইতে লাগলাম। শেষকালে আকাশের কাছে হার মেনে রাত্রি ১২টার সময় কেবিনে এসে গুলাম । গানটা সকালেও মনেছিল ( সেট নীচে লিখে দিচ্চি ) “বেহাগ তেওরা।” তুই তোর স্বরে গাইতে চেষ্টা করিস তো । আমার সঙ্গে মেলে কিনা দেখব । ইতিমধ্যে মুকুলকে ও পিয়াসনকে শেখাচ্চি। মুকুল যে নেহাৎ গাইতে পারে না তা নয়, সে সহজ স্বরে আসর জমিয়েছে । গান ভুবনজোড়া আসনখানি হৃদয়মাঝে বিছাও আনি ॥ রাতের তারা, দিনের রবি, অণধার আলোর সকল ছবি, আকাশভরা সকল বাণী হৃদয়মাঝে বিছাও আমি’ । তোমার তোমার ভুবন-বীণার সকল স্বরে হৃদয় পরাণ দাও না পুরে । দুঃখ মুখের সকল হরষ ফুলের পরশ, ঝড়ের পরশ করুণ শুভ উদার পাণি হৃদয়মাঝে দিকু না আনি ॥ আশ্রম-বালকদের আমাব আশীৰ্ব্বাদ ও বন্ধুদের অভিবাদন। ৯ই জ্যৈষ্ঠ; ১৩২৩ । ● রবিদাদা । তোমার তোমার