পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ ਾਂ শিখিয়াছি। কিন্তু জৰ্ম্মান দর্শনের অভু্যদয়ের বহু পূৰ্ব্বে দ্রষ্টা দৃশ্ব, বিষয় বিষয়ী, বিবৰ্ত্ত পরমার্থ প্রভৃতি শব্দ প্রচলিত ছিল। সম্প্রতি বাগসর আলোচনায় আমরা intellect is intuitions: rost so ato's করিয়াছি। কিন্তু বুদ্ধি ও বোধির প্রভেদ এদেশে স্বপ্রাচীন। মনোবিজ্ঞানের আলোচনায় আমাদিগকে motor nerves os sensory nerves ao CSCMÃ "25"| করিতে হয় । কিন্তু আজ্ঞ নাড়ী ও সংজ্ঞা নাড়ীর প্রভেদ অবগত থাকিলে এজন্য পরিভাষা , গঠনের ব্যথভ্রম আবশ্যক হয় না। পাশ্চাত্য বিজ্ঞান আলোচনায় আমরা অবরোহণ প্রণালীর ব্যাপ্তি গ্রহ সাধনের জন্য তিনটি শব্দের আশ্রয় লইতে বাধা *—observation, experiment 3 inference ; কিন্তু ইহাদিগের প্রতিশব্দ গড়িবার প্রয়োজন নাই, কারণ প্রাচীন কাল হইতে এদেশের দার্শনিকগণ সমীক্ষা পরীক্ষা ও অন্ধীক্ষার সাহায্যে ব্যাপ্তিগ্রহ করিতে আমাদিগকে শিখাইয়াছেন। এইরূপ কত না শব্দসম্ভারে আমাদের প্রাচীন সাহিত্য সজ্জিত। বাংলার দর্শন-সাহিত্যের জন্য ঐসকল শব্দের আবিষ্কার অত্যাবশ্যক। এক সময় আমি এইরূপ শব্দগুচী সংকলনের স্বত্রপাত করিয়াছিলাম, কিন্তু অল্পদুর অগ্রসর হইয় সে কাৰ্য্য স্থগিত হইয় গেল। কারণ–উখায় হৃদি লীয়স্তে উকীলানাং মনোরথা । এইরূপ শব্দস্বচী সংকলিত হইলে প্রাচীন শব্দের নবীন অপপ্রয়োগের পথে কতকটা কাটা পড়িবে। আমরা সহযোগী সাহিত্যে প্রায়ই শুনিতে পাই যে, এদেশে কিছুদিন হইতে নাটকীয় প্রতিভার’ উদ্ভব হইয়াছে। আমরা আরও শুনিয়াছি যে, এযুগে বঙ্গদেশে বহু প্রতিভাশালী লেখকের উদয় হইয়াছে। সংস্কৃত-সাহিত্যের আলোচনা করিলে জানা যায় যে, আমরা এসকল স্থলে প্রতিভা শব্দের অপপ্রয়োগ করিতেছি। ন্যায়সূত্রের ভায্যে বাংলায়ন লিখিয়াছেন :-স্মৃত্যন্ত মানাগম সংশয় প্রতিভা স্বপ্ন জ্ঞানোখ স্থখাদি প্রত্যক্ষম্‌ ইচ্ছাদয়শ্চ মনসে লিঙ্গানি। এখানে প্রতিভা শব্দের অর্থ ইন্দ্রিয়াদি নিরপেক্ষ জ্ঞান বিশেষ। বাস্তবিক ইহাই প্রতিভা শব্দের প্রকৃত অর্থ। পাতঞ্জল দর্শনের ব্যাসভায্যে আমরা পড়িস্বাছি—তারকং স্বপ্রতিভোখম অনৌপদেশিকং (৩৫৪ স্বত্রের ভাষ্য)। প্রশস্তপাদের পদার্থধৰ্ম্মসংগ্রহে’, এবং প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড শ্ৰীধরের "ন্যায়-কন্দলীতে’ এই প্রতিভ জ্ঞানের ব্যাখ্য' ' আছে। তথাপি প্রতিভা শব্দের বর্তমান প্রয়োগ বরং কতকটা মাজনীয়, কারণ দণ্ডীতে প্রয়োগ আছে—ন বিদ্যতে যদ্যপি পূৰ্ব্ববাসন। গুণাবন্ধি প্রতিভানমভূতম্ | মহা ভারতকার লিথিয়াছেন —প্রজ্ঞা নবনবোন্মেষশালিনী প্রতিভা মত । কিন্তু বাংলায় যে Scienceএর প্রতিশব্দ রূপে আমরা বিজ্ঞান শব্দ গ্রহণ করিয়াছি তাহার মার্জন নাই। ঐতরেয় উপনিষদে আমরা সংজ্ঞানং, আজ্ঞানং, বিজ্ঞানং, প্রজ্ঞান, শুনিতে পাই । ছান্দোগ্য উপনিষদ বলিয়াছেন :– বিজ্ঞানং বাব ধানা ভয় । বিজ্ঞানেন বা ঋগ বেদং বিজানাতি । তৈত্তিরীয় উপনিষদ বলিয়াছেন – বিজ্ঞানং যজ্ঞ তযুতে। বৃহদারণ্যক উপনিষদ হইতে শিথিয়ছি :বিজ্ঞানমানন্দং ব্রহ্ম । বৌদ্ধ দর্শনে বিজ্ঞান স্বন্ধের উল্লেখ দেখিয়াছি এবং ক্ষণিকবিজ্ঞানবাদী মাধ্যমিকের সহিত আস্তিক দার্শনিকের তর্কযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করিয়াছি । ব্যাসভাষ্যে পড়িয়াছি – নাস্তার্থ বিজ্ঞান বিসহচর । এসকল প্রয়োগের সহিত science অর্থে বিজ্ঞানের প্রয়োগের কোনই যোগ নাই। কিন্তু "প্রতিভা' এদেশে যেরূপ বদ্ধমূল হইয়াছে এবং science, অর্থাৎ বিজ্ঞান যেরূপ শিকড় গাড়িয়াছে তাহাতে এই দুই শব্দের অপ | প্রয়োগ নিষেধ কৰু অসম্ভব । দার্শনিক শব্দ-স্বচীর সঙ্গে সূত্রাকারে গ্রথিত প্রাচীন মূল দর্শনসমূহে প্রযুক্ত শব্দসকলেরও স্বচী প্রস্তুত করিতে হইবে । ইহার উপকারিত ও উপযোগিতা মণ্ডিতমণ্ডলীর নিকট প্রদর্শন করা বোধ হয় অনাবশ্যক, তথাপি ব্রহ্মস্থত্রের দৃষ্টান্ত দিয়া দুই এক কথা বলিতে ইচ্ছা করি। সকলেই অবগত আছেন যে, বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্র জ্ঞানকাওঁী বেদের অর্থাং প্রধানতঃ উপনিষদের বিরোধাদি মীমাংসার জন্য রচিত। এইসকল স্থত্রের ভিত্তি অধিকাংশ স্থলে উপনিষদবাক্য। কোন স্বত্র কোন উপনিষদ-বচনকে লক্ষ্য করিতেছে, সে সম্বন্ধে ভায্যকারদিগের মধ্যে স্থানে ১ম সংখ্যা ] স্থানে মতভেদ দৃষ্ট হয়। সেইজন্য সংক্ষিপ্ত স্বত্রকে বিবাদী ভায্যকারগণ ইচ্ছাপূৰ্ব্বক যে যাহার দিকে টানিয়াছেন। অথচ অনেক স্বত্রে বাদরায়ণ উপনিষদের ব্যবহৃত শব্দ অবিকল প্রয়োগ করিয়াছেন । অপীতি অন্ন আরম্ভণ ঈক্ষতি সেতু সদ্ধ প্রভৃতি ঐক্কপ শব্দ। উপনিষদ-বাক্যকোষ হইতে আমরা সহজেই পরিতে পারি, কোথায় ঐসকল অপ্রচলিত শব্দ প্রযুক্ত হইয়াছে এবং তাহ হইতে কোন সূত্রের সম্বন্ধি কোন উপনিষদবচন, তাহ নিৰ্ব্বচন করা সহজ হয়। যখন আমরা "তদ অনন্যত্বম্ আরম্ভনশন্দাদিভ্যঃ” এই ব্রহ্মস্থত্রের আবৃত্তি করি, সঙ্গে সঙ্গে "বাচারম্ভনং বিকারে নামধেয়ং মৃত্তিক ইতোব সত্যমূ”—এই ছান্দোগ্য-শ্রুতির স্মরণ হয়। যখন "ঈক্ষতে নর্ণশব্দম”–এই স্বত্র পাঠ করি, তখন “সোহকামস্থত একোহং বহুস্তাম" এই শ্রুতিবাক্য স্মৃতিপথে উপস্থিত হয়। এইরূপ অন্যান্য স্থত্রেরও উল্লেখ করা যাইতে পারে । অনুবাদ ও মৌলিক গ্রন্থ রচনা। কিন্তু পরিভাষা রচনা ও শব্দ-সূচী সংগ্ৰহ করিলেই যথেষ্ট হইবে না, সঙ্গে সঙ্গে আমাদিগের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রসিদ্ধ দার্শনিক গ্রন্থসমূহের অনুবাদ করিতে হইবে। আমরা দেখিতে পাই যে, সংস্কৃত ও পালির প্রধান প্রধান দার্শনিক গ্রন্থ প্রায়ই ইংরেজীতে অনূদিত হইয়াছে। শুনিয়াছি, জৰ্ম্মান ভাষায় আরও সমধিক ভারতীয় গ্রন্থের অনুবাদ সাধিত হইয়াছে। এ দেশ হইতে যদি না লজ্জা কাদম্বরীর ভাষায় 'লজিতৈব পলাশিত হইয় থাকে, তবে ইহাতে আমাদের নিশ্চয়ই লজ্জ বোধ করা উচিত। মুখের বিষয়, আমাদের পণ্ডিতমণ্ডলী এ বিষয়ে ঔদাসীন্য পরিত্যাগ করিয়াছেন। উহাদের মধ্যে অনেকের পূৰ্ব্বে ধারণা ছিল যে, দরিদ্র বঙ্গভাষায় সংস্কৃত দর্শনের গুরু গম্ভীর ভাব ব্যক্ত করাই অসম্ভব। কিন্তু স্বৰ্গীয় কালীবর বেদান্তবাগীশ, চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার, পূর্ণচন্দ্র বেদান্তচুধু এবং মহামহোপাধ্যায় প্রমথনাথ তর্কভূষণ, পণ্ডিত শশিভূষণ তর্কবাগীশ, দুর্গাচরণ সাংখ্যবেদান্তর্তীর্থ, পঞ্চানন তর্করত্ন, হরিহরানন্দ আরণ্য প্রভৃতি পণ্ডিতগণ প্রাচীন ভাষাসমূহের বঙ্গভাষায় অনুবাদ ye ভারতীয় দর্শন 〉》○ করিয়া সংস্কৃতানভিজ্ঞ পাঠকের পন্থা স্বগম করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে রায় বাহাদুর রাজেন্দ্রচন্দ্র শাস্ত্রী ও প্রযুক্ত শরচ্চন্দ্র ঘোষালের নাম উল্লেখযোগ্য। ইহারা প্রাচ্য ও প্রতীচ্য উভয় দর্শনশাস্ত্রে অভিজ্ঞ এবং ইহাদিগের চেষ্টায় ভাষা-পরিচ্ছেদ এবং বেদাস্ত-পরিভাষা নামক দুইখানি কঠোর সংস্কৃত গ্রন্থ বঙ্গীয় পাঠকের আয়ত্ত হইয়াছে। প্রযুক্ত দেবেন্দ্রবিজয় বস্তুর বিরাট গীতাগ্রন্থ, ঐযুক্ত কোকিলেশ্বর ভট্টাচার্য্যের উপনিষদের উপদেশ এবং প্রযুক্ত সীতানাথ তর্কভূষণের উপনিষদ্যাদিও এই সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এক্ষেত্রে আদিম কৃতকৰ্ম্ম শ্রযুক্ত মহেশচন্দ্র পাল। পচিশ বৎসর পূৰ্ব্বে তিনি সভাষ্য উপনিষদ সাংখ্যদর্শন পাতঞ্জল-দর্শন পঞ্চদশী বেদান্তসার প্রভৃতি গ্রন্থের বঙ্গাহবাদ প্রকাশ করিয়া সংস্কৃত শাস্ত্রদ্বার বঙ্গীয় পাঠকের জন্য অপাবৃত করিয়াছিলেন। পরন্তু কেবল সংস্কৃত ও পালি হইতে দার্শনিক রত্বরাজি সংগ্ৰহ করিলে যথেষ্ট হইবে না। পাশ্চাত্য সাহিত্যে যেসকল প্রসিদ্ধ দর্শনগ্রন্থ আছে তাহার দ্বারাও আমাদের দার্শনিক-সম্ভার সমৃদ্ধ করিতে হইবে। প্লেটাে ও অ্যারিষ্টটল প্রভৃতি গ্ৰীক দার্শনিক, লাইবনিটস, ক্যান্ট, ফিক্টে, হেগেল প্রভৃতি জৰ্ম্মান দার্শনিক, বাগস প্রভৃতি ফরাসী দার্শনিক, হামিলটন স্পেনসার প্রভৃতি ইংরেজ দার্শনিক প্রত্যেকেরই প্রধান প্রধান গ্রন্থের সহিত বাংলা ভাষার সাহায্যে বাঙ্গালী পাঠকের পরিচয়ের স্বযোগ হওয়া উচিত। এ সম্বন্ধে ইংরেজী-সাহিত্য আমাদিগের দৃষ্টান্তস্থল হইতে পারে। শুনিয়াছি ইংরেজী-সাহিত্যের অনুবাদশাখ বেরূপ সমৃদ্ধি শালী, সেরূপ যুয়োপীয় কোন সাহিত্যই নহে। অথচ ইংরেজীতে মৌলিক সদগ্রন্থ আদৌ বিরল নহে। সঙ্গে সঙ্গে ইসলামীয় দৰ্শন-সাহিত্য বঙ্গভাষায় অনূদিত হওয়া আবশ্বক। ইসলাম আমাদিগের অতি নিকট প্রতিবে৯, অথচ তাহার দার্শনিক গ্রন্থের সহিত আমাদিগের একেবারেই পরিচয় নাই। অভিজ্ঞ মৌলভী দ্বারা ইসলামের দর্শনভাণ্ডার হইতে রত্ব আহরণ করিয়া বাংলা ভাষায় অনুবাদ করিতে হইবে । বলা বাহুল্য, ভাষার সৌষ্ঠবসাধনের জন্য অনুবাদ পৰ্য্যাপ্ত নহে। যদি বাংলা সাহিত্যের দার্শনিক শাখাকে