পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>२tr কাজ বটে ; কেননা বাগ দেবী বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী। শুক্রাচাৰ্য্যও বলিয়াছেন, যদ যংস্থাৎ বাচিকং সম্যক্‌ কম" ৰিদ্যাভিসংজ্ঞকম, যাহা যাহা সম্যক বাচিক কম তাহ বিদ্যা । বিদ্যালয়ে মনন ব্যতীত বাগিন্দ্রিয় প্রধান ; বিজ্ঞানালয়ে মনন ব্যতীত চক্ষুকৰ্ণনাসিকাদি পাচ জ্ঞানেন্দ্রিয় প্রধান। বিজ্ঞানালয়ে এই পাচ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জ্ঞানার্জন হইয়া থাকে । কিন্তু দর্শক এই উত্তরেও সস্তুষ্ট হন না। তিনি প্রশ্ন করেন, ফল কি ? উত্তরে প্রতিপ্রশ্ন করি, বিদ্যার ফল কি ? বিদ্যায়াশ্চ ফলং জ্ঞানং, আর, বিদ্যা দদাতি বিনমুং । বিদ্যার ফল জ্ঞান আর বিনয় ; বিজ্ঞানেরও ফল তাই । বোধ হয় বিজ্ঞানের দ্বারা বিনয় অধিক লাভ হয়। কারণ জ্ঞানের মূলে জ্ঞানেন্দ্রিয়, যাহার সাহায্যে আমরা সৎ-অসৎ, সত্যমিথ্যা পরীক্ষা ও বিবেক করিয়া থাকি। প্রকৃতির নিকট প্রতারণার ঠাই নাই। জ্ঞান ও বিনয়, এই দুই কামা করিয়া বলা যায়, বিদ্যার্থে বিদ্যা অভ্যাস কর, বিজ্ঞানার্থে বিজ্ঞান অভ্যাম কর। দুই-ই ফলে এক । কিন্তু জ্ঞান ও বিনয় এই দুইএর প্রয়োজন কি ? চরকে ভগবান আত্ৰেয় বলিয়াছেন, মানবের তিন এষণা, অন্বেষণ, ইচ্ছা আছে। প্রথম প্রাণৈযণ, প্রাণরক্ষার ইচ্ছা, কারণ প্রাণত্যাগে সৰ্ব্বত্যাগ। প্রাণৈষণার পর ধনৈযণ, ধন প্রাপ্তির ইচ্ছা, কারণ ধন না থাকিলে পাপী হইতে হয়, আয়ু দীর্ঘ হয় না। অনন্তর পরলোকৈযণ, পরলোকে সদগতির চিস্ত। এই তিন এষণার পক্ষে জ্ঞান ও বিনয় সহায় । . প্রাণৈষণা হইতে আয়ুবিদ্যার, ধনৈষণা হইতে বাত ও কলার, এবং পরলোকৈষণা হইতে দর্শন ও ধমশাস্ত্রের স্থষ্টি হইয়াছে। বিজ্ঞান দ্বারা প্রথম দুই এঘণার কতদূর সিদ্ধি হইয়াছে তাহা পৌরজনের নিকট অবিদিত নাই। নীতিকার শুক্রাচাৰ্য্যও বলিয়াছেন, সংস্থতে ৰ্যৰহারায় সারভূতঃ ধনং স্মৃতম–সংসারে ব্যবহারের নিমিত্ত ধনই সার। ধন নইলে প্রাণরক্ষা হয় না-ইহা ত প্রত্যক্ষ হইতেছে। কিন্তু কিসে ধন আসিতে পারে ? সুৰিদায়াস্ক সেৰাভিঃ শেীর্ষেণ কৃষিভিস্তথা। কৌসীদ বুদ্ধ্যাপণ্যেন কলাভিশ্চ প্রতিগ্রহৈঃ । যয় কয়াচাপি বৃত্তা ধনৰান স্যাৎ তথাচুরেং । প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড উত্তমবিদ্যা, উত্তমসেবা যেমন রাজসেবা, শৌর্য যেমন সৈনিকের, কৃষি, কুসীদকৃত্তি যেমন মহাজনি বেঙ্কিং, বাণিজ্য, কলা ও প্রতি গ্রহ—দান প্রাপ্তি ও গ্রহণ, ইত্যাদি বৃত্তি এমন আচরণ করিবে যাহাতে ধনবান হইতে পারিবে। ইহা আমাদের দেশের নীতি, সৰ্ব্বদেশের সৰ্ব্বকালের নীতি। জ্ঞান ও বিনয় থাকিলে এইসকল বৃত্তি সম্যক আচরিত হয় । কিন্তু কলা কাহাকে বলে ? সংস্কৃত কলন বশীভূতত্ব, বশত। ইহা হইতে, অনেক-রূপাৰিঙাৰন্থতি জ্ঞানং কলা স্মৃত । এক পদার্থের নানা আকারে আবির্ভাব করিবার জ্ঞানের নাম কল । যেমন কাপাসের স্বত্রকতন এক কলা, বস্ত্রবয়ন আর-এক ক করিতে জানার নাম কলা। একারণ শুক্রাচার্য্য বলিয়াছেন, শক্তে মূকোহপি যংকৰ্ত্তং কলাসংজ্ঞং তু তং স্তম্—যাগ মূক ব্যক্তিও করিতে পারে তাহা কলা। মূক বিদ্যাবান হইতে পারে না। বিদ্যা বাচিক কৰ্ম্ম, কল হাস্তকৰ্ম্ম, বিজ্ঞান বুদ্ধীন্দ্রিয় কৰ্ম্ম। কার হাস্ত কম করে, এবং যে কারু কলাভিজ্ঞ ও কলা-সংস্কৰ্ত্ত। তিনি শিল্পী। সংস্কৰ্ত্ত তংকলাভিজ্ঞ । শিল্পী প্রোক্তে মনীষিভিঃ (শুক্ৰ) । প্রকৃতিদত্ত পদার্থে বুদ্ধিপ্রয়োগ করিয়া হস্তদ্বারা সিদ্ধির নাম কলা। অাকর হইতে লৌহবহিষ্করণ লৌহকল, বালুক ও ক্ষারযোগে কাচকরণ কাচকল, এবং পুষ্পমাল্যরচনা মাল্যকলা, গীতবাদ্যাদি সঙ্গীতকলা, ইত্যাদি । কোন কলা লৌকিক উপযোগের নিমিত্ত, কোন কলা আনন্দের নিমিত্ত। কারুকলা ও নন্দকল৷ বলি, ভাগ যাহাই করি, বিদ্যাহ্যনন্তাশ্চ কলা: সংখ্যাতুং নৈব শক্যতে—বিদ্যা ও কলা অনন্ত, সংখ্যা করিতে পারা যায় না। কিন্তু বিদ্যা ও কল অভ্যাস ব্যতীত জীবিকার অন্য উপায় আছে। তন্মধ্যে বৈশ্ব অর্থাং প্রজাবর্গের যে বৃত্তি তাত বাৰ্ত্তা। কুসীদকৃষিবাণিজ্যং গোরক্ষ বাৰ্ত্তয়োচ্যতে। —কুসীদ প্রয়োগদ্বারা ধনবৃদ্ধি, কৃষি, বাণিজ্য ও পশুপালন এই চারি বাৰ্ত্ত নামে কথিত হয়। কৃষি ও পশুপালনের নিমিত্ত মানুষ আয়োজন করে, কিন্তু ফল প্রকৃতিদত্ত। আয়ুৰ্ব্বেদ বিদ্যাবিশেষ ; কিন্তু চিকিৎসাবৃত্তি বিদ্যা নহে, কলা নহে। বাণিজ্য-বৃত্তি ত্ৰিবিধ দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়। (১) স্বচ্ছন্দলন্ধ দ্রব্যের, যেমন মণি মুক্তার ও কাষ্ঠ ও


T ১ম সংখ্য। ] আরণ্যবৃক্ষ-ফলাদির ; (২) কৃষি ও পশুপালন দ্বারা লব্ধ দ্রব্যের, যেমন ধান গমের ঘি দুধের ; (৩) কলাজাত দ্রব্যের। বাণিজ্য ব্যতীত সমাজ টিকিতে পারে না এবং কলা ও বাৰ্ত্তার নিমিত্ত বাধুষির প্রয়োজন। বাত ও কলা হইতে বিজ্ঞানের উৎপত্তি। বাত ও কলায় বিজ্ঞানের স্থিতি। জীবনধারণপ্রবৃত্তি বাত ও কলার জননী। বাত ও কলার অনুষ্ঠানে প্রকৃতির রহস্য উদ্ভেদ আরম্ভ হইয়াছিল। একথাও স্বীকার্য্য,—জ্ঞানান্বেষণা, জ্ঞানৈষণা, মানবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এই এষণার মূলে কিন্তু জীবনসংগ্রাম বিদ্যমান। প্রকৃতি স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক কিছুই দেন না; সব বুদ্ধিবলে কাড়িয়া লইতে হয়। আমি আহার বিনা পড়িয়া থাকি, প্রকৃতি বলেন, কর কি ! কিন্তু এই পৰ্য্যন্ত। তারপর আমাকে দেখিয়া শুনিয়া শিথিয় খুজিয়৷ লইতে হইবে । কোথায় কোন দেশে কোন গাছে সুমিষ্ট ফল পাকিয়াছে, তাহ আমাকে খুজিয়া লইতে হইবে। তেমন ফল আমার দেশে আমার গ্রামে বাড়ীর কাছে ফলাইতে পারি, কি না, এই এষণা আসিবে। এইরূপ এষণা হইতে বিজ্ঞানের জন্ম । কৃষক উত্তম শস্য অন্বেষণ করে; অধিক শস্ত আকাজক্ষা করে ; কিন্তু পায় না। দেখে, কোথায় উত্তম শশু অধিক শস্য জন্মিয়াছে। কেন জন্মিয়াছে তাহার কারণ অন্বেষণ করে। কারণ ঠিক কি না পরীক্ষা করিয়া দেখে। হয়ত কারণ অসিদ্ধ হয়, হয়ত সিদ্ধ হয়। অসিদ্ধি ও সিদ্ধি, সিদ্ধি ও অসিদ্ধি, চলিতে থাকে। বিজ্ঞানেও তাই । - বিজ্ঞানের অনুসন্ধানমার্গ পুরাতন। চরকে, পার্থিব ঔদ্ভিদ জাঙ্গম এই ত্ৰিবিধ দ্রব্য কথিত হইয়াছে। ইহাদের জাতি গুণ ক্রিয়। অনুসন্ধানে জ্ঞানের উৎপত্তি। জ্ঞানের পরীক্ষা চতুবিধ, প্রত্যক্ষ, অহমান, যুক্তি ও আথোপদেশ। আত্মা মন ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়বিষয় অর্থাৎ পঞ্চভূত, ইহাদের যোগে প্রত্যক্ষ জ্ঞান হয়। অনুমান ত্রিবিধ; ধূম হইতে বহির আহমান—কাৰ্য্যলিঙ্গাচুমান ; বৃক্ষ হইতে বীজের অনুমান—কারণলিঙ্গাতুমান ; বীজদর্শনে তৎকারণভূত ফলের প্রত্যক্ষ দ্বার। তৎকার্য্য ভাবী ফলের অনুমান— কাৰ্য্যকারণলিঙ্গাহমান। লিঙ্গ অর্থে হেতু। যে বুদ্ধি বহুকারণযোগজাত ফল দশন করিতে সমর্থ হয়, তাহার নাম ר צ দেশে বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠা ১২৯ - ০৭:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৭:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~~ যুক্তি অর্থাৎ অনেক কারণের যোগে ফল বলিয়া যুক্তি। জল কৃষি বীজ ও ঋতুর বোগে শস্ত হয়। ইহা যুক্তি। যাহার জ্ঞানী ও শিষ্ট, যাহঁাদের জ্ঞান নিৰ্ম্মল ও সৰ্ব্বদা অব্যাহত, তাহারা অাপ্ত । আপ্তের বাক্যে সংশয় নাই, তিনি সত্য কহেন। আমরা আপ্তোপদেশ ব্যতীত একদণ্ড চলিতে পারি না। কণাদ অণুপরমাণু গণিয়াছেন, কণাদ আপ্ত ; নিউটন মাধ্যাকর্ষণে পৃথিবীকে ঘুরাইয়াছিলেন, নিউটন আপ্ত। অণুপরমাণু গণিবার, মাধ্যাকর্ষণ প্রমাণ করিবার বুদ্ধি আমার নাই। সে বুদ্ধি আমার থাকিলে কণাদ ও নিউটনকে আপ্ত বলিতাম না। আপ্তোপদেশ মানিলেও চিন্তা যে স্বাধীন হইতে পারে, তাহ আমাদের দর্শনে ও ধৰ্ম্মবিশ্বাসে স্বম্পষ্ট রহিয়াছে । কাৰ্য্যকারণ-অনুসন্ধানের পূৰ্ব্বে ভূয়োদর্শন আবশ্বক। বহুবার দর্শন এবং দর্শন হইতে অনুমান করিলে ভূয়োদশন বলা যায়। জল বিনা বীজের অস্কুর হয় না ; ইহা কৃষক জানে, ভূয়োদর্শনে জানে। কিন্তু কৃষকের দৃষ্টি এটা ওটা সেটার প্রতি, যে যে বীজের অঙ্গুরোদগম সে প্রত্যক্ষ করিয়াছে। বৈজ্ঞানিকের দৃষ্টি এটা ওটা নহে, এ বীজ সে বীজ নহে; তিনি দেখিলেন যাবতীয় বীজ, বীজ নামায়, বীজবর্গ, জল না পাইলে অঙ্কুরিত হয় না। কৃষকের জ্ঞান অস্পষ্ট, তাহার চিস্তাপদ্ধতি অস্পষ্ট, তাহার ভূয়োদর্শন গৌণ। বৈজ্ঞানিকের জ্ঞান স্পষ্ট, তাছার পদ্ধতি স্পষ্ট, তাহার ভূয়োদর্শন মুখ্য। ভূয়োদর্শন হইতে বর্গীকরণ, আরোহ, তাহার উদ্দেশ্য। যে বিজ্ঞানে বর্গীকরণ যত, সে বিজ্ঞান তত উন্নত বলা যায়। দ্রব্যের বড় বড় তালিকা, গুণের বিশদ বর্ণন, কিংবা পূৰ্ব্বাপরত্বস্বচনা বিজ্ঞান নহে। কিন্তু একটা মুখ্য উদ্দেশু, একটা স্বত্র ধরিয়া দ্রব্য গুণ ক্রিয়া বর্ণিত হইলে বিজ্ঞান হইতে পারিবে । নদীর বালি গণিয়া মাপিয়া জুখিয়া ভাঙ্গিয়া আকৃতি বর্ণ প্রভৃতি লিখিয়া এক বিপুল গ্রন্থ পূর্ণ করিলেই বালুক-বিজ্ঞান হইবে না। নানারূপতার মধ্যে একরূপতার সাধন চাই । নানারূপ এক নির্দিষ্ট স্বত্রে গাথা চাই। ভূয়োদর্শন উদ্দেশানুসারে বিন্যস্ত হইলে বিজ্ঞান হয়, নতুবা দর্শনমাত্র হয়। একারণে বলা যায়, স্ববিন্যস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান। কিন্তু জ্ঞানের অভাবে, উপাদানের অভাবে বিজ্ঞান