পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ এই নূতনলন্ধ স্বাধীনতাটার সে ভাল করিয়াই সদ্ব্যবহার করিতেছিল। পাড়ার যেখানে যত ছেলে-মেয়ে ছিল, ভদ্রলোক ছোটলোক-নিৰ্ব্বিশেষে সে সকলের সঙ্গেই বন্ধুক্ত। জমাষ্ট্ৰয়া তুলিয়াছিল। সবচেয়ে প্রিয় ছিল তাহার ছিদাম মুসলমানের বাড়ীটা। সমধয়সী ছুটি ছেলেমেয়ে ত এখানে ছিলই, তাহার উপর ছিল একটা ছাগলছাম এবং গোটা-দুই কুকুরছানা । ছাগলছানাটাই তাহার বেশী প্রিয় হইয়া উঠিয়াছিল। নিজের নামের সহিত নাম মিলাইয়া ছানাটার সে নাম রাখিয়াছিল পান্থ, এবং নিজের এই বছরের কেন নূতন পূজার কোটটা তাঙ্গীকে দান করিয়া ফেলিয়াছিল । সরোজিনী অবশ্য সেটা উদ্ধার করিয়া আনিল। জুতা-জোড়া দিতেও তাহার আপত্তি ছিল না, কিন্তু ভাংরি ছুপাটি জুতাতে পান্থর চারটি পায়ের শোভাবৰ্দ্ধন কর। সহজ নয় দেখিয়া সে-সংকল্পট বামুকে ত্যাগই করিতে হইল। কি ও তাহার মামার বাড়ীর ব্রাহ্মণ্য তাহাকে বড়ই জালাইয়া তুলিয়াছিল। যখন-তখন তাহাকে ছিদামের বাড়ী হইতে গ্রেপ্তার করিয়া আনিয়া স্নান করাইয়া শুদ্ধ করিয়া তোলা ত কান্থর মায়ের এক নিত্যকৰ্ম্মের মধ্যে দাড়াইয়া গিয়াছিল । সরোজিনীর নিজের বে গোড়ামী খুব বেশী ছিল তাহ নয়, তবে মাসী পিসীর পাল্লায় পড়িয়া খানিকট জাত বঁIচানোর চেষ্টা না করিয়া তাহার উপায় ছিল না। তবে অল্প ক’দিনের জন্ত সে বীপের বাড়ী আসিয়াছে অনেক দিন পরে, কাজেই কান্থ মাঝে-মাঝে ছুটী পাইতই। মায়ের বয়স অল্প, সঙ্গিনীরও অভাব নাই। পূজার দিন-কটা বড়ই যেন তাড়াতাড়ি কাটিয়া গেল। সধোজিনীর এর পর না ফিরিলেই নয় ; অনেক বৎসর বাপের বাড়ী যায় নাই, পনেরো ষোলো দিনের বেশী কখনই থাকিবে না, ঠাকুব-ঝি শ্বশুর-বাড়ী যাইবার আগেই সে নিশ্চয় ফিরিয়া আসিবে, ইত্যাদি অনেক প্রকার কথার জোরে তবে সে স্বামীর কাছে ছুটি পাইয়াছিল। তাহার ননদণ্ড দিন কয়েকের জন্য দয়া করিয়া সংসার চালাইবার ভার লইয়াছিল। বিদায়ের দিন কান্থকে অনেক কষ্টে ছিদামের বাড়ী প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ২য় খণ্ড হইতে টানিয়া আনা হইল। পাছকে সে ছুই হাতে জড়াইয়া ধরিয়া রাখিল, কিছুতেই তাহাকে ছাড়ানো যায় না। তাহার কান্নায় ব্যথিত হইয়া বৃদ্ধ ছিদাম বলিল, "দিদি ঠাকুরোন, আপনি ওটারে নিয়ে যান।” সরোজিনী বলিল, "না, না, নেব কেন । ছেলেটার যত অনাছিষ্টি আবদার। এই নে, ছাড়, বলছি ছাড় .” সে একরকম জোর করিয়া কামুকে টানিয়া লইল । "তোমার ছাগল ছানা নিয়ে যাও বাপু, চোখের সামূনে থাকূলে, ও কিছুতেই বায়না ছাড়বে না।” গাড়ীতে উঠিবার বেলা তাহার মাসী বলিলেন,"দেখ, বাছ, ছেলেটাকে অত করে ঠ্যাঙাস না, মরে হেজে ঐ একটা গুড়োতে ঠেকেছে। আর বামুনের মেয়ে একটু জাভজন্ম বঁচিয়ে চলিস,ণ্ডা না হ’লে কি ঘরে লক্ষ্মী থাকে । ছত্ৰিশ জাতের সঙ্গে ছোয়াছুয়ি করিস, এতে কি কম পাপ হয় ?” रै বাড়ী ফিরিয়া আসিয়া কাছ কেমন ধেন মনমরা ইইয়া রহিল। বিকালবেলা তাহাকে দুধ খাওয়াইতে গিয়া সরোজিনী দেখিল সে চুপ করিয়া ঘরের কোণে বসিয়া আছে । মা ব্যস্ত হইয়! জিজ্ঞাসা করিল, “কি রে, অম্লখ করেছে নাকি " কাকু মাথা নাড়িয়া জানাইল আমুখ তাহার করে নাই । “তবে অমন মুখ হাড়ি করে বসে আছিস কেন ?” কামু হঠাৎ ভ্যা করিয়া কাদিয়া উঠিয়া বলিল,"আমার ক্ষিদে পেয়েছে বে।” - সরোজিনী দুধের বাটি তাহার মুখের কাছে আগাইয়া ধরিয়া বলিল, “ক্ষিদে পেয়েছে তা মুখ ফুটে বলতে কি হয় ? এমনি ছেলের মুখে থৈ ফোটে, আর দরকারের সময় কনে বৌয়ের মত মুখ বুজে বসে আছে।” কাহু দুই ঢোক দুধ গিলিয়াই বাটিটা ঠেলিয়া দিল । সরোজিনী বলিল, "এরি মধ্যে গেলা হ’য়ে গেল ?” কামু বলিল,"ধ বিচ্ছিরি, আমি খাব না।” তাহার মা বলিল, “বিচ্ছিরি না তোমার মাথা । ওখান থেকে এসে অবধি ছেলে যেন কি হয়েছে,