পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী Nరిgsరి শান্তিনিকেতনে বর্ষামঙ্গল ঐপ্রভাতচন্দ্র গুপ্ত শাস্তিনিকেতনের ঋতু-উৎসবগুলিকে এখানকার শিক্ষাধারার একটি অপরিহার্য্য অঙ্গরূপেষ্ট গণ্য করা হয়। প্রকৃতির সঙ্গে যথার্থ আত্মীয়তাবোধ জন্মালে যে মানুষ একটি গভীর অস্তদৃষ্টি এবং পবিত্র সৌন্দৰ্য্যান্তভূতি লাভ করতে পারে, এই সত্যটি এখানকার আশ্রমে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রচণ্ড গ্রীষ্মে নদী পুকুর গুকিয়ে যায়, গাছপালার সবুজ শোভা আর থাকে না, জীবজন্তু ইপিয়ে ওঠে। তার পরে যখন এক দিন বর্ষা আসে মেঘের সমারোহ নিয়ে, তখন যেন প্রকৃতির চার দিকে নবজীবনের সাড়া পড়ে যায়। বৃষ্টির স্নিগ্ধ স্পর্শে মৃতপ্রায় লতাগুল্ম অকস্মাৎ সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে, শীর্ণ নদীস্রোতে আসে প্লাবন, মাঠে মাঠে শস্তের ক্ষেতে অন্ন আর আনন্দদানের আয়োজন চলে পূর্ণ উদ্যমে। বর্ষারম্ভে প্রকৃতির সাজগোজের অস্ত থাকে না ; রূপে, রসে, বর্ণে, গন্ধে নবযৌবন লাভ করে আমাদের প্রাচীন পৃথিবী আবার তরুণীর বেশ ধারণ করেন। প্রকৃতির দিকে আমাদের হৃদয়কে যদি অবরুদ্ধ করে না রাখি, তবে নববর্ষার এই স্বতউৎসারিত আনন্দ অতি সহজে আমাদের অনুভূতিতেও সঞ্চারিত হ’তে কিছুমাত্র ইতস্তত করে না । শাস্তিনিকেতনের বর্ষামঙ্গল এই আনন্দান্তভূতিকেই অর্ঘ্যদান করতে চায়। এবারকার বর্ষামঙ্গলে একটু নূতনত্ব ছিল। চিরপ্রচলিত প্রথাকে লঙ্ঘন ক’রে এবার উৎসব অমুষ্ঠিত হয়েছিল আশ্রমের বাইরে নিকটবৰ্ত্তী ভুবনডাঙা গ্রামে। সেখানকার একমাত্র সম্বল একটি বৃহৎ জলাশয় বহুকাল যাবৎ পঙ্কোদ্ধারের অভাবে লুপ্তপ্রায় হয়ে এসেছিল। গ্রামবাসীদের জলাভাবের অন্ত ছিল না। বিশ্বভারতীর ঐযুক্ত প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কৰ্ম্মীদের উদ্যোগে এবং গ্রামবাসীদের সহযোগে অধুনা এই পুকুরটিকে খনন করে নিৰ্ম্মল জলের সম্বল ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই জলাশয় প্রতিষ্ঠা এবার আমাদের বর্ষামঙ্গল-উৎসবের একটি অঙ্গরূপে পরিগণিত হয়। তাই ভুবনডাঙা গ্রামের প্রান্তে এই জলাশয়ের তীরেই উৎসবের মণ্ডপ রচিত হয়েছিল। এই জলাশয়ের তীরেই উৎসব-প্রাঙ্গণের একপ্রাস্তে শাস্তিনিকেতনের আর একটি দান প্রতিষ্ঠিত। শ্ৰীযুক্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের পরলোকগত পুত্র, এই আশ্রমের সৰ্ব্বজনপ্রিয় ছাত্র মুক্তিদাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের (মুলু) উদ্যোগে ভুবনডাঙাতে ১৩২৪ সালে একটি নৈশ বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তার মৃত্যুর পর বিদ্যালয়টি বালকপ্রতিষ্ঠাতার স্থতিরক্ষার্থ “প্রসাদ-বিদ্যালয়” নামে পরিবর্তিত হয়ে শ্ৰীযুক্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের অর্থসাহায্যে এবং শ্রীনিকেতনের তত্ত্বাবধানে এখনও গ্রামবাসীদের বিদ্যাদানকার্ধ্যে ব্রতী আছে। তাই এবারকার বর্ষামঙ্গল-উৎসব এই বিদ্যাদানের স্থতি এবং জলদানের প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে আশ্রমের বাইরে, অথচ, আশ্রমের কৰ্ম্মক্ষেত্রের গণ্ডীর মধ্যেই, অনুষ্ঠিত হয়ে একটি বিশেষ মৰ্য্যাদালাভ করেছিল। “বুক্ষরোপণ” এই উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ । কয়েকটি শিশুবৃক্ষকে বৈদিক মন্ত্র দ্বারা অভিনন্দিত করে এই উপলক্ষ্যে রোপণ করা হয়, যেন তারা দিনে দিনে বৰ্দ্ধিত হয়ে আমাদের ফলদান, ছায়াদান এবং আনন্দদান করে । ৭ই ভাদ্র স্বর্ধ্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুইটি তেঁতুলচারা সযত্নে চতুৰ্দোলায় স্থাপন করা হ’ল—তারাই ত উৎসবপতি। দুই জন লোক সেই চতুৰ্দোলা বহন করে চলল পুরোভাগে, আশ্রমবালিকার নৃত্যগীতসহযোগে অনুসরণ করতে লাগল পশ্চাতে । তাদের কারও হাতে মঙ্গলশঙ্খ, কারও হাতে ধূপধুনো চন্দন, কেউ থালায় সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ফুলের মালা, কেউ বা জলের পূর্ণকুম্ভ । আশ্রমের সীমা ছাড়িয়ে স্ববিস্তীর্ণ নূতন জলাশয়, তার উচু পাড় দিয়ে শোভাযাত্রা চলল ভূবনডাঙাতে উৎসবপ্রাঙ্গণ অভিমুখে। নীচে জলের ভিতরে তার ছায় কম্পমান, ডাইনে বহুদূর বিস্তৃত সবুজ শস্যক্ষেত, প্রভাতের অালোবাতাস জেগে উঠল গানে গানে— “মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল প্রাশ । ধূলিরে ধন্য কর করুশার পুণ্যে হে কোমল প্রাণ ॥*