পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిలి “সিজুর ” "সিঙ্গুর —সে ত বাবা তারকেশ্বরের লাইন। এ গাড়ী ত নয় ; ঐ সামনেরটা ।” গনশ। কতকটা অবিশ্বাসে, কতকটা উদ্বেগে বলিল—“কে বললে!” দ্বিতীয় ঘণ্টা পড়িল । বৃদ্ধ বোধ হয় একটু রগচটা ; বলিল—“কেউ বলে নি ; তুমি উঠে এস। ওতে যাবে না, শেষে এটাও হাতছাড়া করবে, গাটের পয়সা দিয়ে যখন টিকিট কিনেছ - উঠে পড় ।” হুইস্ল দিয়া গাড়ী টাট দিল । গনশা চাংকার করিয়া বলিল—“গোর, শি-শি-শিগগির নেমে পড় ; বলছে---” গোরাচাদের খটকা লাগিয়াই ছিল একটু ; “কে বলছে ? — কে বলছে র্যা ?”—বলিতে বলিতে হস্তমস্ত হইয়া, লোকদের পা মাড়াহয়, মোট ডিঙাইয়া আসিয়া কোন মতে নামিয়া পড়িল । গনশ চোখ রাঙাইয়া বলিল—“ত-ত্তবে যে তুই বললি—বাদিকেরটা।” গোরাচাদ চলন্ত গাড়ীটার দিকে চাহিয়া বলিল—“যাঃ চুপড়িটা গেল ছেড়ে, হাড়িম্বন্দু ! হায়, হায়,--” একটু অগ্রসর হইতে হইতে বলিল—“মশাই! চুপড়িটা । ফেলে দিন না এদিকে—ঐ বাঙ্কে রয়েছে—উজুর দিকে— মানে পূৰ্ব্ব দিকের উত্তর—মানে উত্তর কোণটায় আর কি...” গনশ দাতমুর্থ খিচাইয়া বলিল—“ছে-চ্ছোট, দৌড়ে দিল্লী পৰ্য্যন্ত ঐ বলতে বলতে---” পাশের গাড়ীর প্রথম বেল পড়িল ৷ এক জন রেলকৰ্ম্মচারী একটু দূরে দাড়াইয় ছিল ; গনশ জিজ্ঞাসা করিল— “এটা তারকেশ্বর লাইনের গাড়ী ত স্তার ?” “হ্যা, শিগগির উঠে পড় গিয়ে।” ভুলের সমস্ত সম্ভাবনা এড়াইবার জন্ত গোরাচাদ প্রশ্ন করিল—“যে তারকেশ্বর লাইনে সিঙ্গুর আছে—?” গনশাও উত্তরটা শুনিবার জন্ত ঘাড় বাকাইয়া দাড়াইয়ছিল, একটা ধমক খাইয়া দুই জনে তাড়াতাড়ি গিয়া গাড়ীতে উঠিল। গনণা প্লাটফরমের দিকের বেঞ্চটায় বসিয়াছিল ; গোরাচাদ পকেট হইতে মনি-ব্যাগ বাহির করিতে করিতে প্রবাসী SNS3へこ বলিল—“গলা বাড়িয়ে দেখ, ত গনশী—খাবারের ভেণ্ডারট আছে কাছেপিটে —বেশ খানিকটা ছুটোছুটি, হয়রাণি হ’ল কিনা ৷” দ্বিতীয় ঘণ্টা পড়িল, হুইস্ল দিয়া গাড়ী ছাড়িয়া দিল । গোরাচাদ ব্যাগটা যথাস্থানে রাথিয় দিল। একটি দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া বলিল—“সে চুপড়িটা এতক্ষণ বোধ হয় লিলুয় পেরিয়ে গেল—হাড়িম্বন্ধু! একটাও যে মুখে ফেলে দে এমন ফুরসৎ হ’ল না ।” যাহোক, গাড়ীটার গতিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দু-জনেরই মনমর ভাবটা কাটিয়া গেল। গনশ, চাকরের মুখে মানায় এই রকম ভাব ও ভাষার একটা গান ধরিল—“পরাণ যদি লিলেই রে প্রাণ --- ? সেটা জমিয়া উঠিতে কোলের কাছে যখন একটু জায়গা খালি হইল, গোরাচাদ গিয়া সেইথানটিতে বসিল । প্রথম গুনগুন করিয়া গানে একটু যোগ দিল, কিন্তু গনশার তোৎলামির জন্য কোরাসে অসুবিধা হওয়ায়, গাড়ীর বাহিরে হাত বাড়াইয়া শুধু তবলা বাজাইতে লাগিল । গাড়ী রিষড়ায় আসিয়া দাড়াইলে এক দল বরযাত্রী নামিল। খানিকটা উল্লসিত চেঁচামেচি, এসেন্সের, জুইয়ের গোড়ের গন্ধ ; চেলিপরী, কপালে চন্দনের ফুটকি-দেওয়৷ বর -- গনশার গানটা মৃদু হইতে হইতে থামিয়া গেল। গাড়ী ছাড়িয়া খানিকটা গেলে বলিল—“হঁ্যা, হঠাৎ মনে পড়ে গেল, তোর শা-শ-শালীর বয়স কত র্যা গোরা ? মানে যদি বিয়ের যুগ্যি হয় ত শিবপুরে পাত্তোরটাত্তোর দেখি ; একটা ভদল্লোকের উপগার করতে পারা মস্ত একটা ভাগ্যি কি না ।” গোরাচাদ বলিল—“বোঁয়ের ষোল যাচ্ছে, এ কাত্তিকেয় সতেরয় পড়বে ; শালী হ’ল দু-বছর তিন মাসের ছোট— তাহ'লে---” গনশা হিসেবের গোলমালের দিকে না গিয়া বলিল— “বিটুইন তেরো এও চোদ্দো । হেলথ, কেমন ?” “বৌয়ের চেয়ে ভালই ব’লতে হবে। বেটা ম্যালেরিয়ায় বডড ভুগলো কিনা ; একেবারেই হাডিডসার হয়ে গিয়েছিল, ধন্তি বলতে হবে পাল্লালাল ডাক্তারকে—যাকে বলে মড় মানুষ চাঙ্গা ক’রে- • ” গনশা প্রশ্ন করিল—“দে-দেখতে কেমন ?”