পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীর্তিক ঠাকরুণকে দেখবার জন্যে প্রাণটা কেমন আইচাই করছে ; অনেক দিন পায়ের ধুলো নিই নি কিনা।” গনশা ভিতরে ভিতরে জলিয়া থাক হইতেছিল, গোরাচাদের দিকে একটা উগ্র কটাক্ষ হানিয়া সংযতভাবে কহিল—“বি-বিনি পায়ের ধুলোয় যখন চারটে মাস কাটালে চোপ কান বুজে, তাখন আর একটা কি ছুটে ঘণ্ট। কোন রকমে কাটাও না দীঠাউর ; মা-ঠাকরুণ ত এক্ষনি নেমস্তন্ন থেয়ে ফিরবেন,—ছিচরণ সঙ্গে নিয়ে ..” শ্বশুর মাথা মাড়িয়া বলিলেন—“সে আজ সমস্ত রাত আসবে না,—তার কেউ না ; সম্পর্কে আমার নাতনীর বিয়ে কিন, গিন্নী বাসর জাগাবে-ওকি !—ধর—ধর ” শেষ আশা একটু ছিল, শাশুড়ীর ; সেটুকুও বাওয়ায়, গভীর নিরাশায় শরীরটা হঠাৎ শিথিল হহয় পড়ায় গোরাচাদ ভাণ্ড চেয়ার হইতে আছাড় খাওয়ার দাগিল হইয়াছিল, গনশ, নিধিরাম ধরিয়া ফেলিল । শ্বশুর বলিলেন—“আহা, ঘুম ধরেছে।” নিধিরাম বলিল—“চাপ খাওয়া হয়েছে কি ন৷ ” শ্বশুর উঠিয়া বলিলেন—“তবে বাবাজী চল, দুর্গ শ্ৰীহরি ব’লে শুয়েই পড়বে চল। খিদে যখন নেই-ই বলছ, শুধু প্রণাম করবার জন্তে কোশটাক পথ ভেঙে মাঝরাত্রে গিয়ে কি দরকার ? ওঠ, তাহলে। দুর্থীরামকে না-হয় গোটকয়েক খইচুর এনে দোব ?” গনশা উত্তর দেওয়ার আগে গোরাচাদ প্রতিহিংসাবশে বলিল—“ন, না ; খাওয়ার ওপর খেয়ে একটা কাণ্ড ক’রে বসবে শেষে ; ওর ভরসায়ই বাবা আমায় এখানে পাঠিয়েছেন, মলমাস অগ্রাহি ক'রে ।” গনশার পানে না চাহিয়া শ্বশুরের পিছনে পিছনে ভিতরে চলিয়া গেল । (t প্রায় ঘণ্ট-দেড়েক আরও কাটিল। গোরাচাদ ভিতর বাড়ীতে ক্ষুধার জালায় এবং খাদ্য সম্বন্ধে হতাশায় বিছানাতে পড়িয়া এপাশ-ওপাশ করিতেছিল, এমন সময়ে ঘরের দুয়ারের কাছে গনশা ডাকিল—“দা’ঠাউর।” গোরাচাদ উত্তর দিতে যাইতেছিল, নিধিরামের গলার ৰর ও নফর వె6 আওয়াজ শুনিল—“ঘুমে এলিয়ে পড়েছেন, আর তুলে কাজ নেই। তুমি তাহলে এই দোর-গোড়াটায় ওয়ে থাক দুর্থীরাম ভাই ; আমি যাই কৰ্ত্তার কাছে" এই সতরঞ্চি রইল।” নিধিরাম চলিয়া গেলে গনশ ভিতর-বাড়ীর কপাট বন্ধ করিয়া যখন ফিরিয়া আসিল, গোরাচাদ ধীরে ধীরে ডাকিল —“গনশ p “জেগে আছিস্ !” বলিয়ু গনশা দুয়ার ঠেলিয়া ভিতরে ঢুকিল । গোরাচাদ চিচি করিয়া বলিল—“ঘুমুতে পারছি না ভাই, আর সাহসও হচ্ছে না। এস্সা গিদে গনশা ! মনে হচ্ছে ঘুমুলে আর ওটা হবে না, জামাইকে ওদের সকালে টেনে বের করতে হবে।” গনশা মশার কামড়ে চুলকাইতে চুলকাহঁতে বলিল— “চাকর সেজে এলে আবার মশারি দেবে না মনে ছিল না রে—উ !—তার ওপর দু-বেট আফিমখোরের বক্তার –নেশা চটে গেছে কিনা---" গোরাচাদ বলিল—“তাও যেমন ভগবান দয়া ক’রে ভুল গাড়ীতে চড়িয়ে দিয়েছিলেন,—যদি রেখে দিতেন পেটটা খালি থাকলে পুড়ে যাওয়ার মত জালা করে রে— জানতাম না।--নিধেটা কি ধড়িবাজ দেখেছিস্ ?” “দুটোই থিদেয় মরছি, অথচ কেমন বলিয়ে নিলে— খেয়ে এসেছি ! ন-ন্ন। ব’ললে আর মান থাকত না ।” খানিকটা চুপচাপ গেল। তাহার পর গনশা মাথাটা মশারির মধ্যে গলাইয়া দিয়া পূর্বের চেয়েও চাপা গলায় বলিল—“গোরে, এক মতলব বের করেছি ; ভাবছি রাজী হবি কিনা ; তোর আবার শ্বশুরবাড়ী কিনা---" গনশার মতলব বের করায় কত বড় বড় সমস্তার সমাধান হয়, গোরাচাদ পরম আগ্রহে বলিয়া উঠিল—কি মতলব র্যা গনশা ?” “বুড়ো সেই খইচুরের কথা বলেছিল---” “দিয়েছে না কি ?”—বলিয়া গোরাচাদ মশারি জড়াইয়৷ এক রকম পড়-পড় হইয়া নামিয়া গনশার সামনে দাড়াইল। গনশা বলিল—“দেয় নি ; তবে—ত্তবে বাড়ীতেই ভ আছে- - -”