পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S66 প্রবাসী SNථHNO পৰ্য্যায়ভুক্ত নয় এমনটি দেখানোরও ভাব তার মনে ছিল । জ্যোৎস্নার মনের অবস্থাটা কি, তা না-জানতে পেরে আড়ালে থোকাকে প্রশ্ন করতে লাগল। বিশেষ কোন তথ্য সংগ্ৰহ করতে পারল না। মনে মনে জ্যোৎস্কার মনোভাব জানবার জন্তে সে ছটফট করতে লাগল । জ্যোৎস্নাকে সে অনেক দিন দেখে নি। তার মনেও তাকে দেখবার ইচ্ছা কিছু কম ছিল না। নিজের বাড়ীতে আনলে সে সুযোগ সহজে ঘটতে পারে বটে, কিন্তু স্ত্রীর সামনে পাছে অশোভন কিছু ঘটে কিংবা তার চেয়েও বিপদের কথা জ্যোৎস্না যদি ওর কাছে কোন কথা ফাস ক’রে দেয় তবে আর মুখ দেখাবার জায়গা থাকবে না । কোন কথা যে সে সহজে প্রকাশ করবে না এ-সম্বন্ধে এক প্রকার নিশ্চিত ধারণা তার মনের মধ্যে অবত ছিল। জ্যোংস্কাকে সে যত দূর দেখেছে তাতে ব্যস্ত হয়ে অশোভন কিছু করবার মত চপলত যে তার নেই এ সে জানত ; তাই তার মন কমলের প্রতি কতকটা কৃতজ্ঞও ছিল বটে—তবু ভয়ও তার ঘুচতে চায় না— স্ত্রীলোক— ! এমন সময় মালতী এক দিন তাকে বললে—কতদিন তাকে আন নি বল ত ? আজকাল তুমি যেন কেমন হয়ে যাচ্ছ! দিদির আর তেমন ক’রে খোজখবরই কর না। তোমাদের সবই নতুন নতুন। —তুমি আমার নিতুই নব-কি বল ? মালতী ঝঙ্কার দিয়ে বলে উঠল—ঢং । আর রসিকতায় কাজ নেই। বুড়ো বয়সে ঢং বাড়ছে! সমস্ত দিনরাতের মধ্যে চোখে দেখবার জো নেই, তার আবার কথা ! —ওগো সেও তোমারই জন্যে। কাজের চাপে সময় ক’রে উঠতে পারি কই ? আর কীট বছর সবুর কর, তার পর বুঝলে কি ন-হেঁ হেঁ— —বুঝেছি গো সব। ব্যবসা দুনিয়াতে ত কেউ আর করে না, সবাই যেন দিনরাত পাগলের মত হৈ হৈ ক’রে বেড়ায়, না ? —দেখো আসছে বছর, যখন গাড়ী কিল্ব। তখন যেখানে খুশী— মালতী আবার ঝাঁজিয়ে উঠল—গাড়ী-গাড়ী বাড়ীবাড়ী ক’রে দেহটা কি করেছ একবার দেখতে পাও? একটা শক্ত ব্যায়রাম-স্তায়রাম না হয়ে পড়লে তোমার মনস্কামনা ত সিদ্ধি হবে না | রাতদিন ঘুরে ঘুরে শেষে যদি বিছানায় পড়ে থাক তখন কি হবে বল ত ? ও সব আমি শুনতে চাই নে। তুমি দিদিকে শনিবারে নিয়ে আসবে কি না তাই বল।” —তোমার দিদিকে আনতে ত এখন লোকের দরকার হয় না। তিনি ত এখন স্বাধীন জেনান, লিখে দাও না আসতে। লোকের অভাব হবে না গো ! নন্দলাল আনতে গেলে কমলা যে আসবে না নন্দ তা এক রকম নিশ্চয়ই জানত। তা ছাড়া, সেদিনের পর ভাবগতিক না বুঝে কমলার কাছে যাওয়ার সাহস সে সঞ্চয় করতে পারছিল না। তৰু মনের ঝাজটুকু সামলাতে পারলে না। মালতী বললে—ও আবার কি কথার ঢং ? কেন, তুমি বুঝি আর একটু সময় করে গিয়ে নিয়ে আসতে পার না ? ওগো একটু সময় দিলে তোমার ব্যবসা একেবারে ফেল পড়বে না । —ঘরে লক্ষ্মী বাধা থাকতে ব্যবসা ফেল পড়া কি মুখের কথা ? কিন্তু তুমি কখনও যাবে না আর সে যদি রাগ করে না আসে ত আমি গেলেই কি আসবে ? —আমি জানি না বাপু ; ঘরসংসার সামলে, খোকাকে নিয়ে আমার ফুরস্কং কোথায় বল ত ? —তা বটে, এ ত আর ব্যবসা নয়। আধ ঘণ্ট না থাকলেই চাকরবাকর সব ঘর-সংসার লুটপাট করে রসাতলে দেবে। —দেবেই ত ? না সত্যি, তুমি যাও দিদিকে একটু ব’লে-কয়ে নিয়ে এস। —সে আমি পারব না। তোমার দিদিকে পার ত তুমি গিয়ে নিয়ে এস—আমি বড়জোর সঙ্গে যেতে পারি। অনেক বাকবিতণ্ডার পর সেই কথাই ঠিক হ’ল। শনিবার সকাল-সকাল ফিরে নন্দ স্ত্রী এবং খোকাকে নিয়ে জ্যোৎস্নাকে আনতে যাবে। Vo সেদিন নন্দলাল চলে যাবার পর কমলাকে এই কথাটাই বিচলিত করে তুলেছিল যে পৃথিবীতে তার এই অভিশপ্ত জীবনের কি আবশ্বক আছে। তার বেঁচে থাকায় কার কোন উপকারে সে এল। খোকনের জন্তে সংসারে তার জীবনধারণের যে দায়িত্ব তা যে কোনও দিন সে মাথা পেতে নিজের উপর তুলে নেবার অবকাশ পাবে এমন সম্ভাবনা সে দেখতে পেলে না। সন্তানহীন মালতীর কাছ থেকে তার ছেলেকে কেড়ে নিয়ে যাওয়ার ষে নিষ্ঠুরতা তা তার মাতৃস্নেহে বাধবে । অথচ নন্দলালের গৃহে তার সস্তানকে চিরকাল প্রতিপালন করতে হবে এ চিন্তা তার পক্ষে অসহ। চিত্তের এই নিরুপায় উদ্বেগের উত্তেজনায় তার মনে হ’তে লাগল যে মৃত্যু ব্যতীত এর বুঝি কোন সমাধান নেই। তার জীবনের উপর, তার অভিশাপগ্রস্ত রূপের উপর তার ধিক্কার জন্মে গেল। কিছু দিন তার মন যে কৰ্ম্মপ্রবাহের মধ্যে শাস্তিলাভ করেছিল সে শাস্তি তার মন থেকে ঘুচে