পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sの8 প্রবাসী SN9gN9 অসহায় ভাবেই নিখিল কিছুক্ষণ সেখানে স্তম্ভিত হয়ে অন্ধকারে দাড়িয়ে সীমার প্রত্যাগত ছায়ামূৰ্ত্তির দিকে চেয়ে রইল। ছায়া সেই আবছা আঁধারে ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে এল, ক্রমে তাকে চোখের আলোয় আর প্রত্যক্ষ করা গেল না কিন্তু নিখিলনাথের অস্তরের অস্পষ্ট অন্ধকারের সীমাস্তরেখা সে যেন কিছুতেই উত্তীর্ণ হতে পারল না । ومانيا এই কৰ্ম্মজলের বন্ধন থেকে মুক্তি দেবার কথাটা কেমন ক’রে পাৰ্ব্বতীর কাছে উপস্থিত করবে, শচীন্দ্র এই চিন্তায় আবিষ্ট হ’য়ে কপালের উপর নিজের বাহু ন্যস্ত করে আবার আরাম-চেয়ারে শুয়ে পড়ল। পাৰ্ব্বতী একটু অবাক হয়ে তার মুখের দিকে চাইলে । শচীন্দ্রের এমন ভাব-বৈলক্ষণ্য তার অভিজ্ঞতার মধ্যে ছিল না, স্থতরাং ঠিক কি কারণে সে অকস্মাৎ এমন চিন্তাকুল হয়ে উঠতে পারে তা বুঝতে না পারলেও শচীন্দ্র যে কোন একটা বিশেষ কথা তাকে বলতে গিয়ে সঙ্কোচে চুপ করে রইল এইটুকু বুঝতে তার দেরী হয়নি । সে নিজের গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে জিজ্ঞেস করলে “আপনার কিছু বলবার আছে মনে হচ্ছে—যেটা বলতে আপনি বাধা পাচ্ছেন। যদি আশ্রম-সংক্রান্ত কিছু হয় তবে আপনি নিঃসঙ্কোচে বলতে পারেন। কারণ ইচ্ছে ক’রে না হ’লেও দোষক্ৰটি সহজেই হ’তে পারে। তাছাড়া নির্জনে, এই চক্রে আবৰ্ত্তিত কাৰ্য্যপরম্পরা, দিনের পর দিন সম্পন্ন ক’রে যেতে মনের মধ্যে মাঝে মাঝে যে অবসাদ আসে ত আমি স্বীকার করছি—” শচীন্দ্রের মনটা যে স্বরলোকের বীণার স্বরে এই সন্ধ্যার তমসাচ্ছন্ন মোহময় মায়াজালের প্রভাবে রণিত হচ্ছিল সেখানে সহসা কঠিন বস্তুজগতের আঘাত পেয়ে সে সম্বস্ত হয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি পাৰ্ব্বতীকে থামিয়ে বললে "এ-কথা কেন বলছ পাৰ্ব্বতী ! এই সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানকে তুমি যে ভাবে গড়ে তুলেছ পৃথিবীতে অন্ত কোন মেয়ের পক্ষে ত কখনই সম্ভব হ’ত না । আমার কতটুকুই বা শক্তি ছিল যে একে আমি রূপ দিতে পারতুম। সম্পূর্ণ তোমারই শক্তিতে এমনটা যে সম্ভব হয়েছে তার ভিতরকার রহস্তটুকুই আমার কাছে পরমাশ্চর্য্যের বস্তু । সেই পরমাশ্চৰ্য্য অভিনবতার কাছে আমার কুষ্ঠিত চিত্তের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তোমাকে ছোট করতে চাই নে । কিন্তু কেন বল ত ? এই নিৰ্ব্বাসনের আত্মবিলোপী অন্ধকারের মধ্যে তোমার এমন অমূল্য জীবনকে বলি দিতে বসেছ ? প্রতি মুহূৰ্ত্তে এতে আমার মন অপরাধে সঙ্কুচিত হয়ে ওঠে ; আজ সেই কথাই তোমাকে বলবার চেষ্টা করছি। এই অন্ধকূপ থেকে জোর করে না বেরিয়ে পড়লে তোমার পরিত্রাণ নেই ।” পাৰ্ব্বতী চুপ করে রইল। শচীন্দ্রের কথা পাৰ্ব্বতীর বুকের ভিতর ষে কি আন্দোলনের স্বষ্টি করেছে শচীন্দ্রের উত্তেজিত মস্তিষ্কের মধ্যে তার ধারণা করবার অবসর ছিল না। খানিক ক্ষণ চুপ করে থেকে সে আবার স্বরু করলে “পাৰ্ব্বতী, তোমার অভাব এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যে কতদূর ক্ষতিকর তা আমি জানি। তবু আমি এই কলের র্যাতায়, তোমার জীবনটাকে চূর্ণ হয়ে যেতে দিতে পারি না। স্বার্থপরতারও একটা সীমা থাকা উচিত।” সম্প্রতি শচীন্দ্রের অন্তরে অস্তরে পাৰ্ব্বতী সম্বন্ধে তার পূৰ্ব্বতন সহজ বন্ধুতার পরিবর্তে যে একটা ভাবপ্রবণ ঘনিষ্ঠতর সম্পর্কের আভাস ঘনিয়ে উঠেছে এ-কথা পাৰ্ব্বতীর কাছে সম্পূর্ণ স্পষ্ট না থাকলেও সম্পূর্ণ অগোচরও ছিল না। তবু শচীন্দ্রের আজকের এই চাঞ্চল্যের সম্যক রূপটি তার নিজের বিক্ষুব্ধ চিত্তের মধ্যে প্রতিবিম্বিত হ’ল না । - পাৰ্ব্বতীর চিত্তে নানা সন্দেহ আশা-নিরাশার দোলায় আসা-যাওয়া করতে লাগল। কিন্তু শচীন্দ্রের মনের কথা ঠিকমত কল্পনা করতে না পেরে শাস্ত কণ্ঠে তর্কের স্থর মিশিয়ে বললে “দেখুন, মানুষের জীবন কার কি ভাবে সার্থক হয় তা কি কেউ ঠিক বলতে পারে? আমার শক্তি দিয়ে জগতের মঙ্গল কাজে যদি কিছুমাত্র সহায়তা হয়ে থাকে ত সেই কাজের মধ্যে দিয়েই আমি কি সার্থক হই নি ? আপনার অর্থ, আপনার অস্তরের প্রেরণা, এমন কি আপনার মৃত পত্নীর প্রতি আপনার যে অক্ষয় প্রেম, তাজমহলের মত কি তা এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সার্থকভা লাভ করে নি ?” কথাটার মধ্যে অনিচ্ছাকৃত একটা মৃদু তিক্ততা ও শ্লেষের আভাস ছিল কি না কে জানে। কিন্তু শচীন্দ্র সেটুকু কল্পনা করেই বোধ করি একটু তর্কের উত্তেজনা মিশিয়ে বললে, “হয়ত করেছে। কিন্তু - -” “এর মধ্যে কিন্তু কোথাও নেই শচীন বাবু। যে অনন্তনিষ্ঠ প্রেম আপনাকে এই কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে সে একমাত্র আপনাতেই সম্ভব—এটাই কি আপনি মনে করেন ? ছোটখাটো হ’লেও প্রত্যেক মানুষই নিজের শক্তি অন্তসারে জগতে এই তাজমহল গ’ড়ে চলে । মহত্তর কিছু করবার প্রেরণা তারা তাদের প্রাণ থেকেই পায় p. শচীন্দ্র তার তর্কের স্বরে অস্তরের ক্ষোভের আভাস পেয়ে একদৃষ্টে নদীর দিকে চেয়ে চুপ করে ছিল। তার পর ধীরে ধীরে শান্ত গভীর স্বরে বললে “পায়। কিন্তু তাদের পিছনে থাকে তাদের সার্থক প্রেমের অমৃত উৎস। চিরদিন তাজমহলের মরীচিকা গড়ে তুলতে আমি তোমাকে দিতে