পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S్సలిన్ల প্রবণসী SN98Nరి পাৰ্ব্বতীকে তার অবলম্বনরহিত শূন্ততা থেকে নিজের অন্তরের মধ্যে নিঃসঙ্কোচে টেনে নেবে ; না-হয় তাকে নিশ্চিস্ত মুক্তি দান করবে। এমনি ক’রে নিজের প্রতি করুণায় পাৰ্ব্বতীকে পীড়িত হতে দেবার তার কোন অধিকার নেই।” এবং এক সময় ভূমিকামাত্র না-ক'রে অতি ধীরে পাৰ্ব্বতীর হাত থেকে হাতটা মুক্ত করে নিয়ে শাস্ত কণ্ঠে বললে “চল, খেতে যাই।” যদিও শচীন্দ্রের ব্যবহারে বা স্বরে কোন রূঢ়তা প্রকাশ পায় নি তৰু এই সামান্ত একটু ভদী এবং তার কণ্ঠস্বরের অতর্কিত শাস্ত স্বাভাবিকতায় পাৰ্ব্বতী একটু আশ্চৰ্য্য হ'ল এবং কেন জানি না কেমন যেন একটু আঘাত পেল। তবু সে নিজেকে সংঘত রেখে প্রায় স্বাভাবিক গলায় “এক মিনিট অপেক্ষা করুন” বলে ঘরের দিকে চলে গেল এবং টেবিল সাজাবার নানা কাজে ব্যস্তভাবে নিজেকে ব্যাপৃত করে দিয়ে নিজের কাছ থেকে নিজেকে যেন কাজের মধ্যে হারিয়ে ফেলতে চাইলে । হাতখানা অমন ক’রে টেনে নেবার ইচ্ছ। শচীন্দ্রের ছিল না ; তবু তার অনতিপূৰ্ব্ব মুহূর্ভে নিজের মনের যে দুর্বলতা এবং দ্বিধায় তার অস্তনিহিত পৌরুষ অবমানিত হয়েছিল এই হাত ছাড়িয়ে নেওয়াটা বোধ করি তারই অনিচ্ছাকৃত মূঢ় প্রতিক্রিয়া। পাৰ্ব্বতী যে একটু আহত হয়ে চলে গেল এই বোধ শচীন্দ্রকে মনে মনে অস্বচ্ছন্দ করে তুললে । সে এক প্রকার অনুতপ্ত হয়েই পাৰ্ব্বতীর আহবানের অপেক্ষ না করে একেবারে খাবার ঘরের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হ’ল । ঘরটি ছোট । মাঝখানে একটা টেবিল সাদা ধবধবে চাদর দিয়ে ঢাকা । টেবিলের উপর দু’বাতির একটা শেজ জলছে । খাবার সরঞ্জাম সব সাজানো হয়ে গেছে। পাৰ্ব্বতী কি একটা গরম করবার জন্তে মাটিতে একটা ষ্টোভে ম্পিরিট জেলে সামনে বসে আছে। আগুনের এবং বাতির আলোয় তাকে অস্বাভাবিক রকম ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে । শচীন্দ্র দেখলে যে একদৃষ্টে সেই ক্রীড়ারত অগ্নিশিখাটুকুর দিকে চেয়ে তার চোখের জল যেন বাধা মানছে না । অত্যন্ত অনুশোচনায় তার মনটা ভরে গেল, এবং এক মুহূৰ্ত্তে পাৰ্ব্বতীর কৈশোরের দুঃখের ইতিহাস থেকে স্বরু ক’রে প্রত্যেকটি প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ ঘটনা প্রচ্ছন্ন গভীর বেদনার রূপ নিয়ে যেন তার আছে অকস্মাৎ স্বম্পষ্ট হয়ে উঠল। নিজের অপেক্ষাকৃত সহনীয় বিরহবেদনাকে এই পীড়িত নীরব স্নেহশালিনী নারীর দুঃখের বিরুদ্ধে দাড় করানো স্বার্থপরতার নামান্তর বলেই মনে হতে লাগল। পাৰ্ব্বতীর অশ্রীক্ষাত মুখের দিকে চেয়ে শচীন্দ্রের চিত্তের সমস্ত অবরুদ্ধ স্নেহ করুণা প্রীতি কৃতজ্ঞতা উদ্বেল হয়ে উঠে ভাবরসবন্যায় তার হৃদয়ের বিচারক্ষেত্রের মুম্পষ্ট ছবিগুলিকে প্লাবিত করে একাকার করে দিয়ে গেল । সেই ভাববন্যার আবেগে তার অস্তরের হৃদয়োচ্ছাসকে সে প্রেম বলেই মেনে নিলে। এই জটিল চিন্তার তরঙ্গাঘাতে বিপৰ্য্যস্ত তার চিত্ত নিজেকে বিশ্লেষণ করবার ধৈর্ষ্য আর স্বীকার করতে চাইলে না। অল্পক্ষণ পূৰ্ব্বে সে যে তার পত্নীর প্রতি একনিষ্ঠতার অভিমানে আত্মপ্রসাদ সম্ভোগ করছিল সে কথা তার মনে রইল না । ঘরে ঢুকে পাৰ্ব্বতীর কাছে এসে বললে, “আমাকে ক্ষম কর পাৰ্ব্বতী—” পাৰ্ব্বতী এত নিবিষ্ট হয়ে নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল যে হঠাৎ শচীন্দ্রের আগমনে সে চমকে একটা অব্যক্ত শব্দ ক’রে উঠল । তার পর নিজেকে সামলে নিলে। শচীন্দ্রের কথার মধ্যে থেকে তার অনুকুল চিত্তের দক্ষিণ পবনের স্নিগ্ধতা ধেন তার ললাটকে এসে স্পর্শ করলে । চোখ মোছবার কোনো চেষ্ট না করে মৃদ্ধ হেসে আস্তে আস্তে বললে ‘নটি বয়' ; বলে উঠে, হৃদয়োচ্ছাস-প্রকাশে-উদ্যত শচীক্সের মুখের উপর একটা হাত চাপা দিয়ে হাত ধ’রে তাকে একটা চেয়ারে নিয়ে বসাল। শচীন্দ্র নিজের আনন্দ এবং উচ্ছ্বসিত অভুক্ত হৃদয়ের প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ পাৰ্ব্বতীর হাতটা মুখের উপর চেপে ধরলে। পাৰ্ব্বতী বাধা দিলে না—শচীন্দ্র মুঠোর মধ্যে তার মরম হাতটুকু নিয়ে আদর ক'রে ধীরে রইল । শচীন্দ্রের এই আত্মনিবেদনের ইঙ্গিতে পাৰ্ব্বতীর বুকের মধ্যে তোলপাড় করতে লাগল। কিন্তু তার অশ্রুঞ্জলের করুণায় বিগলিত শচীন্দ্রের এই নিবেদন তার সন্মোহিতপ্রায় আত্মমধ্যাদাকে সচেতন করে তুললে ; এবং ধীরে অতি ধীরে অথচ সুস্পষ্ট নিশ্চয়তার ভঙ্গীতে, কোনে কথা না বলে, সে নিজের হাতটা মুক্ত করে নিয়ে নিবে-যাওয়া ষ্টোভটা জালাবার চেষ্টায় গিয়ে শচীন্দ্রের দিকে পিছন ফিরে বসল। শচীন্দ্রের পুরুষের মন বাধা মানতে চায় না । তার নিবেদিত প্রেমকে স্বীকার না-করার স্বব্যক্ত ইঙ্গিতে তার আত্মাভিমান অনাহত রইল না এবং তার প্রেম যে অবিমিশ্র প্রেমই, কোন একটা অকাট্য প্রমাণের দ্বারা তা জানিয়ে দিতে তার মনটা উষ্ঠত হয়ে উঠল। কিন্তু পাৰ্ব্বতীর মুখের দিকে চেয়ে সে চুপ করে গেল। পাৰ্ব্বতীর স্নেহশীলতার অন্তরালে যে একটি আত্মসমাহিত দুরত্ব তাকে সৰ্ব্বদা ঘিরে থাকত সেই ব্যবধান শচীন্দ্রের মনে শাসিত চপল বালকের মত একটা সলজ্জ সম্রম জাগিয়ে কোনরূপ উচ্ছ্বাস প্রকাশের চপলতা থেকে তাকে নিবৃত্ত ক’রে রাখলে। ( ক্রমশ: ) 용