পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবাণুর আলো মান্থব এ পর্যাস্ত যত রকমের আলোক উৎপাদন করিতে সমর্থ হইয়াছে তাহাতে আলো অপেক্ষ উত্তাপের ভাগই বেশী। কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত আলোকের প্রায় চৌদ্দ আনাই উত্তাপে বাজে খরচ হইয়া যায়। মোটের উপর আজ পর্য্যস্ত বৈজ্ঞানিকের কাৰ্য্যকরী ভাবে কৃত্রিম ঠাণ্ড আলোক উৎপাদন করিতে কৃতকাৰ্য্য হন নাই । অথচ স্বাভাবিক উপায়ে জাত বিভিন্ন রকমের ঠাণ্ড আলো অহরহ আমাদের নজরে পড়িয়া থাকে। জোনাকী, কেঁচো ও আল্লাহু কীটপতঙ্গ অতি স্নিগ্ধ আলো প্রদান করিয়া থাকে । দাজিলিঙের কোন কোন অঞ্চলে দুই ইঞ্চি আড়াই ইঞ্চি লম্বী এক প্রকার কীড়া দেখিতে পাওয়া যায় । ইহাদের শরীরের চতুর্দিক হইতেই এক প্রকার উজ্জ্বল স্নিগ্ধ, নীলাভ আলোক নির্গত হইয় থাকে । সময়ে সময়ে অনেকে এই আলো কাজে লাগাইয়া থাকে। দক্ষিণ-আমেরিকায় অগ্নিমক্ষিক নামে জোনাকী-পোকার মত উজ্জ্বল আলোপ্রদানকারী এক প্রকার বড় বড় পতঙ্গ দেখিতে পাওয়া যায়। আদিম অধিবাসীর কয়েকটি পোকা একত্র রাখিয় অন্ধকারে সেই আলোতে কাজকৰ্ম্ম করে। আমাদের দেশেও জোনাকী-পোকা ফাৎনায় আটকাইয়া রাত্রির অন্ধকারে অনেককে ছিপে মাছ ধরিতে দেখিয়াছি । এই সব কীটপতঙ্গের শরীর-অভ্যস্তরস্থ আলোবিকীরণকারী কোষ হইতে নির্গত স্বক্ষাতিস্থঙ্ক রেণুসমূহের মধ্যে লুসিফেরিণ নামক এক প্রকার পদার্থ আছে । এষ্ট লুসিফেরিণই আলোক প্রদান করিয়া থাকে ; কিন্তু তৎসঙ্গে লুসিফারেজ নামে এক প্রকার 'এনজাইম' আলোক উৎপন্ন করিতে সহায়তা করে । সুইচ, টিপিলে যেমন আলো জ্বলিয় উঠে, সেইরূপ ঘর্ষণ বা অন্ত কোনরূপ আলোড়নের ফলে এন্‌জাইম আলো জ্বালিয়া দেয়। এই জাতীয় জাস্তব আলো জ্বলিবার জন্ত অক্সিজেন একাত্ত প্রয়োজনীয় । কীটপতঙ্গ ব্যতীত কোন কোন ফুল এবং ব্যাঙের ছাত৷ হইতেও আলোক নির্গত হইয় থাকে । আমাদের দেশে, বিভিন্ন অঞ্চলের বনে জঙ্গলে স্কিন্ধ নীলাভ আলোপ্রদানকারী গাছপালাও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক প্রকার আণুবীক্ষণিক ছত্রাক-স্বত্রই গাছপালার আলোক উৎপাদনের কারণ বলিয়া নির্ণীত হইয়াছে। আমাদের দেশের আলোবিকীরণকারী গাছপালা সম্বন্ধে প্রায় চোঁদ-পনৱ বৎসর পূৰ্ব্বে প্রবাসীতে আলোচনা করিয়াছিলাম । এতদ্ব্যতীত সমুদ্র ও নদীর মোহানায় নোনাজলে অন্ধকারে এক প্রকার আলো দেখিতে পাওয়া যায়। সাগরের উপকূলে সুন্দরবন অঞ্চলের নদীনালার জলের মধ্যে অন্ধকার রাত্রিতে এইরূপ আলোর খেলা দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলাম। একটু জোরে বাতাস বহিলে বা জল একটু আলোড়ন করিলেই যেন তরল অগ্নির মত জ্বলিয়া উঠে । উত্তাপবিহীন স্বাভাবিক আলোর কথা বহু প্রাচীন কাল হইতেই মানুষ অবগত ছিল । কিন্তু তাহার এই আলোক-উৎপত্তির সঠিক কারণ নিৰ্দ্ধারণ করিতে না পারিয়৷ ইহাতে দৈবশক্তির সম্বন্ধ আরোপ করিত। সমুদ্রের মধ্যে জাহাজের মাস্কলের উপর সময়ে সময়ে ‘সেন্ট এলমোজ, ফায়ার' নামে এক প্রকার নীলাভ বৈদ্যুতিক অগ্নিস্ফূলিঙ্গ বিকীরিত হইয় থাকে। প্লাটনের মনে করিত ক্যাক্টর ও পোলাক্স নামে আমাদের অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের মত হই যমজ দেবতা এই অগ্নি স্বাক্ট করিয়া থাকেন। অত্যুচ্চ পিরামিডের শীর্ষদেশে উঠিয়া হাত উচু করিয়া তুলিলে ঋতু বিশেষে সময় সময় শরীরের মধ্যে স্বচ ৰিধিবার মত এক প্রকার অব্যক্ত যন্ত্রণ অনুভূত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে এক প্রকার ক্ষীণ আলোকরেখা দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। এই ব্যাপারকে তন্ধেশবাসী আয়ৰ পথপ্রদর্শকেরা, পিরামিড-গহবরে সমাহিত মৃতের আত্নাক্স কোন অলৌকিক ক্রিয় বলিয়া বিশ্বাস করিত। কিন্তু সমুদ্রজলে আলোর খেলা সম্বন্ধে প্রাচীনের বিশেষ কিছু লিপিবদ্ধ করিয়া ৰান নাই। এমন কি হোমারের মত কবি, ধিনি সাগরের উত্তাল তরঙ্গরাজির জীবন্ত বর্ণনা দিয়া গিয়াছেন, তিনিও সাগরোশ্মির এই অদ্ভূত হৃদয়গ্রাহী আলোর খেলার কথা উল্লেখ করেন নাই। ডারউইন দক্ষিণ-প্রশান্তমহাসাগরের আলোর মনোমুগ্ধকর বিচিত্র লীলা দেখিয়া লিখিয়াছিলেন,—অন্ধকার রজনীতে একদিন যখন আমাদের জাহাজ চলিতেছিল তখন সমুদ্রজলে এক অপরূপ দৃশু চোখের সম্মুখে প্রতিভাত হইয়া উঠিল। তখন অল্প অল্প স্নিগ্ধ হাওয়া বহিতেছিল। দিনের বেলায় ঢেউএর মাথায় যেসব সাদা