পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوچ چ বাড়ীর মধ্যে যে-ঘরখানির দাওয়ায় আমরা বসিলাম তাহা সবচেয়ে উচু এবং পূব-দুয়ারী। বাড়ীর অস্তান্ত ঘরগুলি হইতে পৃথক ; দিব্য নিকানো পরিষ্কার-পরিছন্ন। প্রতিমা-দর্শনকালে চারি দিকে যেমন ভিড় জমিয়া উঠে, আমাদের ঘিরিয়া তেমনই এক দল ছেলেমেয়ে বউ ফ্যাল ফ্যাল করিয়া চাহিয়া আছে। কৃশকায় কালো বয়স্থ একটি বউ পিতলের কান-উচু একখানা থালা আনিয়াছেন, গঙ্গাজলভরা মাজা চকচকে ঘটি আনিয়াছেন, নূতন শুকনা গামছাও একখানি তাহার কাধে রহিয়াছে। আমাদের পায়ের কাছে বসিয়া গড় হইয়া প্রণাম করিলেন, দেখাদেখি সেই সমবেত জনতা আমাদের সম্মুখে উপুড় হইয়া পড়িল । যেটুকু ধুলা পায়ে জমিয়াছিল, অতগুলি লোকের করম্পর্শে নিঃশেষে মুছিয়া গেল। তার পর দিদিমার একখানি পী টানিয়া বউটি সেই কানা-উচু পিতলের থালার উপর রাখিলেন এবং ঘটির জল দিয়া পা ধোয়াইয়া দিতে লাগিলেন। ধোয়ানো শেষ হইলে নূতন গামছা দিয়া পা মুছিয়া নিজের আঁচলে সযত্নে মুছাইয়া দিলেন। তার পর আমার পালা। আমি নিজে পা ধুইব বলতে বউটি বলিল— ওমা সে কি কথা ! আমাদের ছিচরণের চন্নামেত্ত দেবী না, বাবা ? তা কি হয় ? নক্ষী গোপাল একটু থির হয়ে বসে। আপত্তি বৃথা। উভয়ের ধৌত পাদোদকে থালা ভরিয়া উঠিল। অতঃপর ছেলে বুড়া মিলিয়া সেই ময়লা জল পরম পরিতৃপ্তিতে মাথায় ঠেকাইয়া খাইয়া ফেলিল—যেমন করিয়া আমরা দেবদেবীর চরণামৃত পান করি। কে জানে, ইহারা আমাদের দেবতা মনে করিয়াছে বুঝি 1 প্রথম পৰ্ব্ব মিটিলে বউটি করজোড়ে বলিল—কি সেবা হবে, মা ! ঘরে ঘি-ময়দ মজুদ, তরকারির মধ্যে পটল আছে, ভাল মিষ্টি ত নেই। দিদিমা বলিলেন—মিষ্টি কি হবে লা, ঘরের গুড় আছে ত ? বউটি ঘাড় নাড়িল—ছ, খাড় (অাকের ) গুড় আছে। —ওতেই হবে। —মোর মা, তোমার আঙী ( রাঙা গরু ) বিইয়েছে— অামি গাঙে একটা ডুব দিয়ে এসে গাই ছুইবো । হেই ম৷ একবারটি উঠে দেখ না—বিছান-টছানা সব ঠিক আছেন কিনা। সেই পোষ মাসে এয়েলে কেচেকুচে তুলে আকলাম । -खोल्नु ! —রাপ্ত ? তা বেশ, বড় মেয়ের ছেলে বুঝি ? দিব্যি থোকা—জাজপুখুর । দিদিমা জিজ্ঞাসা করিলেন—হালা বউ, তোর দেওরের বিয়ে দিবি কবে ? প্রক্ষণসী 袋Nジ3N?” —তার মা, বলিয়া বউ ফিসফিস্ করিয়া বলিল, সোমৰ্ত্ত বয়েস—বাড়ী আসে না আত্তিরে। এত চেষ্টা-চরিভির— মরদ একবার ইধারে মাথা চালে, একবার উধারে । স্বর আরও একটু নামাইয়া বলিল, জানই ত সৈরভ জেলেনীকে, শুনিছি গাছচালা জানে—মানুষ বশ করবে তার আর আশ্চৰ্য্য কি ! বলিয়া বউ গালে হাত দিল । দিদিমা বলিলেন—আচ্ছা আজ জামুক, আমি বলবো । —ব’লে, ম, ব’লে, তোমাদের আশীব্বেদে ধদি মতিগতি ফেরে। মোদের মা ইঙ্কিাই মেরে ওঠে । তোমার বড়ছেলের জুস্কুই ত ওই । বলে, বউ-নাঙল ধরবে কোন হাতে ? গুয়োটা যদি কথাটা শোনে ত মোদের মোয়াড় নেয় কে ? নেখন ! বলিয়া কপালে হাত দিয়া একটি নিশ্বাস ছাড়িল । আর দুটি বউ—মেজ এবং সেজ—পাশে বসিয়াছিল। রং কালো হইলেও বড় বউয়ের মত রোগ নহে, বেশ মোটসোটা । হাতে রূপার পৈছা, রূপার খাড়ু, কপালে উদ্ধি । দিদিমা মেজটির পানে চাহিয়া বলিলেন—পৈছে নতুন হ’ল বুঝি ? মেজবউ আহলাদে একমুখ হাসিয়া ঘাড় নাড়িল—হেঁম, আর দিদির গোট । বড়বউ হাসিয়া উঠিল—মুখে আগুন মোর, বলতে ভুলে গিছি মা। এই গোট মা, গেলবার কোষ্টা ( পাট ) বেচে কিছু হয়েলো ; তোমার ছেলে বললে, কে কি নেবা বল ? অামি বললাম, বয়স ভারি হয়েছে গোট দ্যাও, মেজোরে দ্যাও পৈছে। সেজ সাধ করে নিলে খাড়ু। —ত বেশ হয়েছে । গতর স্বথে থাক, ভোগদখল কর । তা কৰ্ত্তাদের কি হ’ল ? —কার আর কি হবে মা ! ন-কত্তা কিনেলো ছাইকেল । ও ত মারমুখে—সে-ও তেরিয়া । মাথা-ফাটাফাটি হয় ব'লে বললাম—হয় ধার হোক ছেয়ের ছাইকেল ওরে দাও। উই দ্যাখ, ম-ঠাং ভেঙে চালের বাতায় ঝোলছেন উনি । —ও মা গো, এক গাদা টাকা নষ্ট করলি ? তোরা চাষ করবি—তোদের এ-সব মতিগতি কেন ? —নজাটের নেখন৷ বলিয়া বড় বউ খানিক চুপ করিয়া থাকিয়া উঠিয়া গেল । দিদিমা কি কথা বলিবার আগে মেজবউ বলিল—এস মা, ঘর দেখবা । দিদিমার সঙ্গে আমিও উঠিলাম। পূবে অল্প একটু মোড় ফিরিতেই দক্ষিণমুখে প্রকাও এক দাওয়া। দাওয়ায় এক সারিতে চারি খানি ঘর। ঘরগুলিতে দেখিবার এমন বিশেষ কিছু নাই। চুকিবার স্বয়ার বিচিত্র আলিপনায় ভরা। সাদা পিটুলি-গোলার ধারায়, হলুদের আর লাল পিছরের ছাপে চৌকাঠ বিচিতি।