পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক ঘরের মাটির দেওয়ালেও হলুদ আর সাদা পিটুলির জাক । কড়ির আলন, কুলুজীতে মাটির পুতুল ; পেতে, ধাম, কুল, ধীন ও আনাজপাতিতে ঘর ভৰ্ত্তি। একখানা করিয়া তক্তাপোষ পাতা। আর যে কি আছে ভাল করিয়া নজরে পড়ে না। ঘরের ঐ একটি মাত্র দুয়ার, জানালা নাই, কিন্তু গ্রীষ্মকাল হইলেও ঘরের মধ্যে বেশ ঠাণ্ডা। কোন ঘরে নক্সা-করা কাঠের সিন্দুক আছে, কোন ঘরে জলচৌকীর উপর ঝকৃঝকে সাদা কাসার বাসন সাজানো। কাথা বালিশগুলি পরিষ্কার। মাটির হইলেও ঘরের মধ্যে বা দাওয়ায় কোথাও ধুলা জমিয়া নাই বা কোথাও ভাঙাচোরা নহে। পশ্চিমের দাওয়া একটু দূরে—সেখানিতে রান্না চলে। উত্তরে গোয়ালঘর। বাড়ীর প্রকাও উঠান, কোথাও জঞ্জাল জমিয়া নাই, একটা দুৰ্ব্বাও অঙ্কুরিত হইতে পায় না। কেবল আমাদের পূব-দ্বয়ারী ঘরের দাওয়ার পাশে মাটির মঞ্চে স্বাস্থ্যবান এক তুলসীগাছ—প্রভাতের জলসিঞ্চনে পরিপুষ্ট ও সন্ধ্যার দীপালোকে দীপ্তিময়। ঐশ্বর্ষ্যের সঙ্গে পাল্প দিবার স্পৃহা এ-বাড়ীর কোথাও নাই। অথচ নিঃশব্দে যাহা প্রকাশ পাইতেছে তাহাকে ঐশ্বৰ্য্য ছাড়া কি-ই বা বলিতে পারি। প্রকাও উঠানে বড় মরাইট ঘিরিয়া যে চারিটি ছোট মরাই রহিয়াছে উহার কোনটিতে মুগ, কোনটিতে কলাই বা মুম্বর। ঘরের দাওয়ায় গুপীকৃত আলু, পেয়াজ, সরিষা, ফুটি, কাকুড় ইত্যাদি নিত্যব্যবহার্ষ্য গৃহস্থালীর কোন দ্রব্যটিরই বা অভাব ? বলদ ছাড়া আট-দশটি গাভী, ছোট গোয়ালে কতকগুলি ছাগলও ডাকিতেছে। এইমাত্র পুকুর হইতে জোড়-দশেক হাস ‘প্যাক “প্যাক’ শব্দ করিতে করিতে উঠানের উপর দিয়া গোয়ালের পাশে দৰ্শ্বাঘেরা কুঠুরিতে গিয়া ঢুকিল। রান্নাঘরের পাশে টেকিঘর । দমাদম শব্দে টেকি পড়িতেছে। কাল ছেলের ভাত, আনন্দ-নাড়ুর চাল কোটা হইতেছে। এত ক্ষণ দিদিম আসেন নাই বলিয়া এই সমস্ত কাজে পূর্ণোদ্যমে উহার লাগিতে পারে নাই। একছুটে বাহিরটাও দেখিলাম । প্রকাও চণ্ডীমণ্ডপ, সামনে হাল, লাঙল এবং খানদুই গরুর গাড়ী পড়িয়া আছে। দাওয়ায় বসিয়া মুনিষজন তামাক টানিতেছে, আর সামান্ত কথায় হাসির ঢেউ তুলিতেছে। মাষ্ঠীর লীগাও পুকুর। আমাদের দেশে ডোব বলি– উহারা বলে পুকুর। জ্যৈষ্ঠের দিন বলিয়া হাটুভোর জল উহাতে আছে। তবু শোনা গেল এ অঞ্চলে উহাই নাকি বড় পুত্র! অনেকগুলি ফাঙ্কনেই ফুটিফাটা হইয়া যায়-চৈত্রে জলবিলুও খুজিয়া মিলে না। পুকুরপাড়ে কয়েকটা নারিকেল ও ভাল গাছ । নারিকেল গাছগুলিতে তেমন তেজ নাই। নোনা জমি না হইলে ফলন নাকি তেমন হয় না। { চাবাদের ছেলেগুলি যেমন কালো তেমনি রোগ, কিন্তু মণ্ডল-বাড়ী SRS কথাবার্তাতে অকপট । বেশ একটু গ্রাম্য টান আছে। অল্প সময়ের মধ্যে এমন অনেক গাছ চিনাইয়া দিল যাহার অভিজ্ঞতা লইয়া শহরের আত্মম্ভরী ছেলেগুলিকে অনায়াসে ঠকাইয়া দিতে পারি। খেজুর গাছ দেখাইয়া বলিল—শীতকালে আসিলে পেটভোর রস খাওয়াইয়া দিতে পারিত, এখন মাঠে কি-ই বা আছে । তখন ক্ষেতে ক্ষেতে মটরশুটি, ছোলার গুটি, আক প্রচুর পাওয়া যায়। মাটি খুঁড়িলে এত বড় বড় শাকালু বাহির হয়। মূল তুলিয়া খাইতেও কম মজা নহে। ছোট বাঁকড়া গাছগুলিতে কেমন সুন্দর কুল পাকিয়া থাকে। এখন খালি ফুটি আর তরমুজ । মাঠের মাঝে বসিয়া তরমুজ ভাঙিয়া খাইলাম। কি মিষ্ট, কেমন ঠাণ্ডা জল। কতক খাইলাম, কতক ফেলিলাম । এমন করিয়া প্রকৃতি মা’র কোল হইতে জিনিষ উঠাইয়া লইয়া খাইতে যা তৃপ্তি কাপড়ে ধুলা লাগিয়াছে, তরমুজের জল মুখ বাহিয়া জামা ভিজাইয়া দিয়াছে, চলিতে চলিতে প-ব্যথা হইতেছে, সন্ধ্য অত্যাসল্প—তবু এই অজানা সীমাহীন মাঠে অজানা সঙ্গীর সঙ্গে কলরব করিয়া ছুটিয়া বেড়াইতে এতটুকু আশঙ্ক, ক্লাস্তি বা বিরক্তি বোধ করিতেছি না। ইচ্ছা হইতেছে, এমনি করিয়া সারা রাত্রি সারা মাঠখানিতে ঘুরিয়া বেড়াই, এমনি করিয়া অনর্গল বকিয়া যাই, ভূমি হইতে খাদ্যকণা খুটিয়া খাই, আর নী-ঘুমাইয় ওই তারাভরা আকাশের পানে চাহিয়া বসিয়া থাকি ! ফিরিয়া দেখি, আমার খোজে চারি দিকে হুলস্থুল পড়িয়া গিয়াছে। লণ্ঠন জালিয়া কৰ্ত্তারা বাহির হইতেছেন, সোরগোলে কান পাতা দায়। দিদিমা কেবল “হায়’ ‘হয়’ করিতেছেন। আমাদের দেখিয়া সকলে হৈ হৈ করিয়া উঠিল। আলো ফেলিয়া কৰ্ত্তারা ছেলেগুলিকে ধরিয়া প্রহার দিল— আর কি সে অকথ্য গালাগালি ! বড়কৰ্ত্ত। অামাকে ছু-হাতে মাথার উপর তুলিয়া একবারে বাড়ীর মধ্যে দিদিমার সম্মুখে আসিয়া বলিল—কেমন গা মা-ঠাকরোণ, ইনিই-ত এনার জন্তে ছেলেগুলোকে আজ খুন করলাম না, নইলে চাষার আগ (রাগ) জানই ত ! দিদিমা আমায় খুব খানিকটা বকিলেন ; কি করিব চুপ করিয়া দাড়াইয়া নিঃশবে সে বকুনি হজম করিলাম। বাহিরে রোরুদ্যমান বালকগুলির বেদনায় বুকটা কেমন মোচড় দিয়া উঠিল। আহা! আমারই জন্ত ত বেচারীরা মার খাইল । বড়কৰ্ত্ত দাওয়ার উপর বসিল। জোয়ান চেহারা, কিন্তু বড় কর্কশ। কালো দৈত্যের মত বাকড়া চুলে ভরা মাথ, ཀླཝུ་ཨྰཿཧྰུཾ།:ཨཱ་ཨཱཿཧཱ་མཱ་ཡཱ་ཀཱ་ཝཱ་ལཱི་སཱི་ཧྥུ། ििशया কথা কহিতেছেন, ফিরাইয়া অঙ্ক দিকে চাহিলাম। মুখ