পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরশয্যা বনফুল শরীরের সমস্ত রক্ত টগবগ, করিয়া ফুটিয়া উঠিল। অজ্ঞাতসারেই হাতের মুষ্টি দুইটি দৃঢ়বদ্ধ হইয়া গেল— নাসারন্ধ, স্ফীত হইতে লাগিল। মনে হইতে লাগিল এখনই যদি লোকটাকে হাতের কাছে পাই তাহার মুওটা ছিড়িয় ফেলি। স্থখের বিষয় হউক, দুঃখের বিষয় হউক, মুও হাতের কাছে ছিল না। ছিল খবরের কাগজটা। সেখানা ছিড়িয়া ফেলিলে লাভ নাই। নারীধর্ষণকারী অক্ষতই রহিয়া যাইবে । • • ইহার কিন্তু একটা প্রতিকার করা প্রয়োজন • দেশের নারীর এই লাঞ্ছনা যদি নীরবে সহ করিয়া চলি, তাহা হইলে আমার পৌরুষের মূল্য কি ?--সমস্ত ছাত্রজীবন নানাবিধ ব্যায়াম করিয়া হাতের গুলি ও বুকের ছাতি বাড়াইয়াছি -- কলেজের স্পোর্টে সকলের সেরা ছিলাম--কিন্তু শরীরে শক্তি সংগ্ৰহ করিয়া কি লাভ যদি নারীত্বের মর্য্যাদা না রক্ষা করিতে পারি ? ইত্যাকার নানারূপ যুক্তি মনের মধ্যে তারস্বরে চীৎকার করিয়া ফিরিতে লাগিল। করিলে কি হইবে—উপস্থিত কিছু করিবার উপায় নাই—এক উঠিয়া বসা ছাড়া। তাহাই করিলাম। উঠিয়া বসিলাম এবং জানাল দিয়া ভ্ৰকুটকুটিল মুখে বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিলাম। বাহিরেও অন্ধকার। গাঢ় অন্ধকার । আকাশে মিটিমিটি তারা জলিতেছে। মনে হইল সমস্ত আকাশের নক্ষত্রগুলা আমাদের স্বরবস্থা দেখিয়া মুখ টিপিয়া হাসিতেছে। অন্ধকারে সারি সারি দাড়াইয়া আছে ওগুলো তালগাছ না প্রেতের দল ! আমরা কি ভূতের রাজ্যে বাস করিতেছি --- দুরের পাহাড়টা অন্ধকারে মনে হইতেছে যেন একটা বিরাটু হিংস্র প্রাগৈতিহাসিক জৰ্ত্ত—ঘাপটি মারিয়া বসিয়া আছে— স্বযোগ পাইলে সমস্ত দেশটার ঘাড়ে লাফাইয় পড়িবে। আবার খবরের কাগজটা খুলিয়া পড়িলাম। এক জন অসহায় নারীকে প্রকাশু দিবালোকে.ছি, ছি, ভাবিতেও সমস্ত অন্তঃকরণ সঙ্কুচিত হইয় ওঠে ! দেশে কি পুরুষ নাই ? সাময়িক পত্রিকার পাতায় পাতায়—বহু সস্তরণশীল, ব্যায়ামশীল, লম্বনশীল বীরপুরুষদের ছবি দেখি—ফুটবল, হকি খেলার সময় সমস্ত দেশের যৌবন চঞ্চল হইয়া ওঠে অথচ সেই দেশে এখনও নারীর প্রতি পাশবিক অত্যাচার হয় অবারিত ভাবে প্রকাশু দিবালোকে ! আমরা জীবিত না মৃত । অভিভূতের মত বসিয়া রহিলাম।---সাৎ করিয়া একটা শব্দ হওয়াতে চমকাইয়া উঠিলাম। পাশের লাইনে আর একটা গাড়ী আসিয়াছে। তন্দ্র আসিয়াছিল, ভাঙিয়৷ গেল । মুখ বাড়াইয়া দেখিলাম যে-ষ্টেশনে নামিব তাহা নিকটবৰ্ত্তী হইয়াছে। ষ্টেশনের আলো দেখা যাইতেছে। এ-দেশে আর কখনও আসি নাই। চাকুরীর চেষ্টায় ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়াছি । শ্বশুর-মহাশয় তাহার পরিচিত একটি লোককে পত্র দিয়াছেন—তিনি চেষ্টা করিলে চাকুরী জুটিতে পারে। ર এই শহরে ইতিপূৰ্ব্বে কখনও আসি নাই। বিহারের একটি শহর। রাত্রিও বেশ অন্ধকার । শ্বশুর-মহাশয়ের পরিচিত সেই ভদ্রলোককে যদিও আমি চিনি, কিন্তু এই অন্ধকার রাত্রে এই অপরিচিত শহরে তাহার বাসা খুজিয়া বাহির করা সহজ নহে। ষ্টেশনে খোজ করিয়া গুনিলাম শহরের ভিতর একটি হোটেল আছে। ঠিক করিলাম— হোটেলে রাত্রিবাস করিয়া সকালে ভদ্রলোকের খোজ করিব। একটি এক্কার সহায়তায় উক্ত হোটেলে আসিয়া পৌছান গেল। হোটেলের মালিক দেখিলাম বেশ সদাশয় ব্যক্তি। তিনি আমার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থ৷ করিলেন–তিলের একটি কুঠরি দিলেন এবং সদাশয়তার আতিশয্যে একটি দড়ির খাটিয়াও দিলেন। যৎসামান্ত