পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনের মূলধারা চলেছে এক প্রশস্ত পথে। প্রকৃতি তাকে যে হৃদয়-সম্পদ দিয়েছেন নিত্য কৌতুহলপ্রবণ বুদ্ধির হাতে তাকে নূতন নুতন অধ্যবসায়ে পরখ করতে দেওয়া হয় নি। নারী পুরাতনী। পুরুষকে নানা দ্বারে নানা আপিসে উমেদারিতে ঘোরায়। অধিকাংশ পুরুযই জীবিকার জন্যে এমন কাজ মানতে বাধ্য হয় ধার প্রতি তার ইচ্ছার তার ক্ষমতার সহজ সম্মতি নেই। কঠিন পরিশ্রমে মানা কাজের শিক্ষা তার করা চাই—তাতে বাপে আনা পুরুযই যথোচিত সফলতা পায় না। কিন্তু গুহিণীরূপে জননীরূপে মেয়েদের যে কাজ, সে তার আপন কাজ, সে তার স্বভাবসঙ্গত । মানা বিঘ্ন কাটিয়ে অবস্থার প্রতিকূলতাকে বীৰ্য্যের দ্বারা নিজের অনুগত ক’রে পুরুষ মহত্ব লাভ করে। সেই অসাধারণ সার্থকতায় উত্তীর্ণ পুরুষের সংখ্যা অল্প। কিন্তু হৃদয়ের রসপাতায় আপন সংসারকে শস্তশালী ক'রে তুলেছে এমন মেয়েকে প্রায় দেখা যায় ধরে ধরে । প্রকৃতির কাছ থেকে তার পেয়েছে অশিক্ষিতপটুত্ব, মাধুয্যের ঐশ্বৰ্য্য তাদের সহজে লাভ করা । যে মেয়ের স্বভাবের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে সেই সহজ রসটি না থাকে কোলো শিক্ষায় কোনো কৃত্রিম উপায়ে সংসারক্ষেত্রে সে সাঙ্গকত পায় । । যে সম্বল অনায়াসে পাওয়া যায় তার বিপদ আছে । বিপদের এক কারণ অন্যের পক্ষে তা লোভনীয় । সহজ ঐশ্বধলান দেশকে বলবান নিজের একান্ত প্রয়োজনে তাত্মসাৎ ক’রে রাখতে চায়। অতুৰ্ব্বর দেশের পক্ষে স্বাধীন থাক সহজ। যে পার্থীর ডানা সুন্দর ও কণ্ঠস্বর মধুর তাকে খাচায় বন্দী ক'রে মানুষ গৰ্ব্ব অন্তভব করে : তার সৌন্দর্য্য সমস্ত অরণ্যভূমির এ-কথা সম্পত্তি-লোলুপর ভুলে যায়। মেয়েদের হৃদয়-মাধুৰ্য্য ও সেবা-নৈপুণ্যকে পুরুষ সুদীর্ঘকাল আপন ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে কড়া পাহারায় বেড়া দিয়ে রেখেছে। মেয়েদের নিজের স্বভাবেই বঁাধন-মানা প্রবণতা আছে, সেই জন্যে এটা সৰ্ব্বত্রই এত সহজ झुंझ८छ । বস্তুত জীবপালনের কাজটাই ব্যক্তিগত। সেটা নৈর্ব্যক্তিক তত্ত্বের কোঠায় পড়ে ন—সেই কারণে তার আনন্দ বৃহৎ তত্বের আনন্দ নয় ; এমন কি মেয়েদের নৈপুণ্য যদিও বহন করেছে রস, কিন্তু স্বাক্টর কাজে আজও যথেষ্ট সার্থক হয় নি । তার বুদ্ধি, তার সংস্কার, তার আচরণ নিদিষ্ট সীমাবদ্ধভার দ্বারা বহু যুগ থেকে প্রভাবান্বিত - তার শিক্ষা তার বিশ্বাস, বাহিরের বৃহৎ অভিজ্ঞতার মধ্যে সত্যতা লাভ করবার সম্পূর্ণ সুযোগ পায় নি। এই জন্যে নিৰ্ব্বিগরে সকল অপদেবতাকেই সে তামুলক ভয় ও অধোগ্য ভক্তির অধ্য দিয়ে আসছে । সমস্ত দেশ জুড়ে ঘদি দেখতে পাই তবে দেখা যাবে এই মোহমুগ্ধতার ক্ষতি কত সৰ্ব্বণেশে, এর বিপুল ভার বহন করে উন্নতির দুর্গম পথে এগিয়ে চলা কত দুঃসাধ্য। আবিলবুদ্ধি মুঢ়মতি পুরু দেশে যে কম আছে তা নয়, তার শিশুকাল থেকে মেয়ের হাতে গড় এবং তারাই মেয়েদের প্রতি সবচেয়ে অত্যাচারী। দেশে এই যে সব আবির্ণ মনের কেন্দ্রগুলি দেখতে দেখতে চারি দিকে গড়ে উঠছে, মেয়েদের অন্ধ পিচার-বুদ্ধির উপরেই তাদের প্রধান নির্ভর । চিত্তের বন্দীশাল। এমনি ক'রে দেশে ব্যাপ হয়ে পড়ছে, এবং প্রতিদিন তার ভিত্তি হয়ে উঠছে দৃঢ় । এদিকে প্রায় পৃথিবীর সকল দেশেই মেয়েরা আপন ব্যক্তিগত সংসারের গণ্ডি পেরিয়ে আসছে। আধুনিক এশিয়াতেও তার লক্ষণ দেখতে পাই । ভার প্রধান কারণ সৰ্ব্বত্রই সীমান-ভাঙার যুগ এসে পড়েছে । যে-সকল দেশ আপন আপন ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রিক প্রাচীরের মধ্যে একান্ত বদ্ধ ছিল তাদের সেক্ট বেড়া আজ আর তাদের তেমন করে ধিরে রাখতে পারে না,—তারা পরস্পর পরস্পরের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। স্বতই অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়েছে, দৃষ্টিসীমা চিরাভ্যস্ত দিগন্ত পেরিয়ে গেছে । বাহিরের সঙ্গে সংঘাতে অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, নূতন নুতন প্রয়োজনের সঙ্গে আচারবিচারের পরিবর্তন অনিবাধ্য হয়ে পড়ছে। আমাদের বাল্যকালে ঘরের বাইরে আবশ্বকে মেয়েদের ছিল পালকির যুগ । মানী ঘরে সেই পালকির উপরে পড়ত ঘেটাটোপ। বেথুন স্কুলে যে মেয়ের সব-প্রথমে ভৰ্ত্তি হয়েছিলেন তার মধ্যে অগ্রণী ছিলেন আমার বড়দিদি । তিনি দ্বারথোলা পালকিতে ইস্কুলে যেতেন, সেদিনকার সম্রাস্তবংশের আদর্শকে যাতায়াতের