পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেটা অল্প পীড়া দেয় নি। সেই একবস্ত্রের দিনে সেমিজপরাটা নিল জস্তার লক্ষণ ছিল ৷ শালীনতার প্রচলিত রীতি রক্ষা করে রেলগাড়ীতে ষাতায়াত করা সহজ ব্যাপার ছিল না । অাজ সেই ঢাকা পালকির যুগ বহু দূরে চলে গেছে। মৃদুপদে যায় নি, দ্রুতপদেই গেছে। বাইরের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবর্তন আপনিই ঘটেছে—এ নিয়ে কাউকে সভাসমিতি করতে হয় নি। মেয়েদের বিবাহের বয়স দেখতে দেপতে এগিয়ে গেল, সেও হয়েছে সহজে। প্রাকৃতিক কারণে নদীতে জলধারার পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তবে তার তটভূমির সীমা আপনিই হটে যেতে থাকে। মেয়েদের জীবনে আজ সকল দিক থেকেই স্বতই ভার তটের সীমা দূরে চলে যাচ্ছে। নদী উঠছে মহানদী হয়ে । এই যে বাহিরের দিকে ব্যবহারের পরিবর্তন এ তো বাইরেই থেকে যায় না। অন্তর-প্রকৃতির মধ্যেও এর কাজ চলতে থাকে । মেয়েদের যে - মনোভাব বদ্ধ সংসারের উপযোগী, মুক্ত সংসারে সে তো অচল হয়ে থাকতে পারে না। আপনিই জীবনের প্রশস্ত ভূমিকায় দাড়িয়ে তার মন বড় ক’রে চিস্তা করতে বিচার করতে আরম্ভ করে । তার পূৰ্ব্বতন সংস্কারগুলিকে যাচাই করার কাজ আপনিই স্বরু হতে থাকে। এই অবস্থায় সে নানা রকম ভুল করতে পারে, কিন্তু বাধায় ঠেকতে ঠেকতে সে ভুল উত্তীর্ণ হ’তে হবে। সঙ্কীর্ণ সীমায় পুৰ্ব্বে মন যে-রকম করে বিচার করতে অভ্যস্ত ছিল সে অভ্যাস অঁাকড়ে থাকলে চারি দিকের সঙ্গে পদে পদে অসামঞ্জস্য আনতে থাকবে। এই অভ্যাসপরিবর্তনে দুঃগ আছে বিপদও আছে, কিন্তু সেই ভয় ক’রে আধুনিক কালের স্রোতকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া क्षुब्रि =tl । গৃহস্থালির ছোট পরিধির মধ্যে মেয়েদের জীবন যখন অীবদ্ধ ছিল তখন মেয়েলি মনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলি নিয়ে সহজেই তাদের কাজ চলে যেত ৷ এজন্তে তাদের বিশেষ শিক্ষার দরকার ছিল না বলেই একদিন স্ত্রীশিক্ষা নিয়ে এতই বিরুদ্ধতা এবং প্রহসনের স্বাক্ট হয়েছে। তখন পুরুষের নিজে যে-সব সংস্কারকে উপেক্ষা করত, যে-সব মত বিশ্বাস করত না, যে-সকল আচরণ পালন করত না, মেয়েদের বেলায় সেগুলিকে সযত্নে প্রশ্রয় দিয়েছে । তার মূলে তাদের সেই মনোবৃত্তি ছিল, যে-মনোবৃত্তি একেশ্বর শাসনকর্তাদের । তারা জানে অজ্ঞানের, অন্ধ সংস্কারের আবহাওয়ায় যথেচ্ছ-শাসনের সুযোগ রচনা করে, মঙ্গুষ্যোচিত স্বাধিকার বিসর্জন দিয়েও সন্তুষ্টচিত্তে থাকবার পক্ষে এই মুগ্ধ অবস্থাই অমুকুল অবস্থা। আমাদের দেশের অনেক পুরুষের মনে আজও এই ভাব আছে। কিন্তু কালের সঙ্গে সংগ্রামে তাদের হার মানতেই হবে। কালের প্রভাবে মেয়েদের জীবনের ক্ষেত্র এই যে স্বতই প্রসারিত হয়ে চলেছে, এই যে মুক্তসংসারের জগতে মেয়েরা আপনিই এসে পড়ছে, এতে ক’রে আত্মরক্ষা এবং আত্মসম্মানের জন্যে তাদের বিশেষ ক'রে বুদ্ধির চর্চা বিদ্যার চর্চা একান্ত আবশ্বক হয়ে উঠল। তাই দেখতে দেখতে এর বাধা দূর হয়ে চলেছে। নিরক্ষরতার লজ্জা অাজ ভদ্রমেয়েদের পক্ষে সকলের চেয়ে বড় লজ্জা ; পূৰ্ব্বকালে মেয়েদের ছাতা জুতো ব্যবহারের যে লজ্জা ছিল এ তার চেয়ে বেশি ; বাঢ়ন-বাটা কোটন-কোটা সম্বন্ধে অনৈপুণ্যের অখ্যাতি তার কাছে কিছুই নয়। অর্থাৎ গাহস্থ্যি বাজারদরেই মেয়েদের দর, এমন কথা আজকের দিনে বিয়ের বাজারেও যোলো আন খাটছে না। যে .বিদ্যার মূল্য সাৰ্ব্বভৌমিক, যা আণ্ড প্রয়োজনের ঐকাস্তিক দাবী ছাড়িয়ে চলে যায়, আজ পাত্রীর মহার্যতা যাচাইয়ের জন্তে অনেক পরিমাণে সেই বিদ্যার সন্ধান নেওয়া হয়। এই প্রণালীতেই আমাদের দেশের আধুনিক মেয়েদের মন ঘরের সমাজ ছাড়িয়ে প্রতিদিন বিশ্বসমাজে উত্তীর্ণ হচ্ছে । প্রথম যুগে একদিন পৃথিবী আপন তপ্ত নিঃশ্বাসের কুয়াশায় অবগুষ্ঠিত ছিল, তখন বিরাট আকাশের গ্রহমণ্ডলীর মধ্যে আপন স্থান সে উপলব্ধি করতেই পারে নি। অবশেষে একদিন তার মধ্যে স্বৰ্য্যকিরণ প্রবেশের পথ পেল। তখনই সেই মুক্তিতে আরম্ভ হ’ল পৃথিবীর গৌরবের যুগ। তেমনই একদিন আদ্র হৃদয়ালুতার ঘন বাস্পাবরণ আমাদের মেয়েদের চিত্তকে অত্যন্ত কাছের সংসারে আবিষ্ট করে রেখেছিল। আজ তা ভেদ ক’রে সেই আলোকরশ্মি প্রবেশ করছে, যা মুক্ত আকাশের, বা সৰ্ব্বলোকের।