পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণক্ষ্মণ বহ দিনের যে-সব সংস্কার-জড়িমাজালে তাদের চিত্ত আবদ্ধ বিজড়িত ছিল, যদিও আজ তা সম্পূর্ণ কেটে যায় নি তৰু তার মধ্যে অনেকখানি ছেদ ঘটেছে। কতখানি যে, তা আমাদের মত প্রাচীন বয়স যাদের তারাই জানে। আজ পৃথিবীর সর্বত্রই মেয়ের ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বিশ্বের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এসে দাড়িয়েছে। এখন এই বৃহৎ সংসারের দায়িত্ব তাদের স্বীকার করতেই হবে, নইলে তাদের লজ্জা, তাদের অক্ষতার্থতা । আমার মনে হয় পৃথিবীতে নুতন যুগ এসেছে। অতি দীর্ঘকাল মানবসভ্যতার ব্যবস্থ-ভার ছিল পুরুষের হাতে। এই সভ্যতার রাষ্ট্রতত্ত্ব, অর্থনীতি, সমাজশাসনতন্ত্র গড়েছিল পুরুষ। মেয়েরা তার পিছনে প্রকাশহীন অন্তরালে থেকে কেবল করেছিল ঘরের কাজ। এই সভ্যতা হয়ে ছিল একবোকা। এই সভ্যতায় মানবচিত্তের অনেকটা সম্পদের অভাব ঘটেছে ; সেই সম্পদ মেয়েদের হৃদয়ভাণ্ডারে রুপণের জিম্মায় আটকা পড়ে ছিল। আজ ভাণ্ডারের দ্বার খুলেছে । তরুণ যুগের মানুষহীন পৃথিবীতে পঙ্কস্তরের উপর ষে অরণ্য ছিল বিস্তৃত, সেই অরণ্য বহু লক্ষ বৎসর ধীরে প্রতিদিন স্বৰ্য্যতেজ সঞ্চয় ক'রে এসেছে আপন বৃক্ষরাজির মজ্জায়। সেই সব অরণ্য ভূগর্ভে তলিয়ে গিয়ে রূপান্তরিত অবস্থায় বহুযুগ প্রচ্ছন্ন ছিল। সেই পাতালের দ্বার যেদিন উদঘাটিত হ’ল, অকস্মাৎ মানুষ শত শত বৎসরের অব্যবহৃত স্বধাতেজকে পাথুরে কয়লার আকারে লাভ করল আপন কাজে, তখনি নূতন বল নিয়ে বিশ্ববিজয়ী আধুনিক যুগ দেখা দিল। একদিন এ যেমন ঘটেছে সভ্যতার বাহিরের সম্পদ নিয়ে, আজ তেমনই অন্তরের সম্পদের একটি বিশেষ খনিও আপন সঞ্চয়কে বাহিরে প্রকাশ করল। ঘরের মেয়েরা প্রতিদিন বিশ্বের মেয়ে হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই উপলক্ষে মানুষের স্বষ্টিশীল চিত্তে এই যে মৃভন চিত্তের যোগ, সভ্যতায় এ আরএকটি তেজ এনে দিলে। আজ এর ক্রিয়া প্রত্যক্ষে অপ্রত্যক্ষে চলছে। এক পুরুষের গড়া সভ্যতায় যে ভারসামগ্রস্যের অভাব প্রায়ই প্রলয় বাধাবার লক্ষণ আনে, আজ আশা করা ধায় ক্রমে সে যাবে সাম্যের দিকে। প্রচণ্ড ভূমিকম্প বার বার ধাক্কা লাগাচ্ছে পুরাতন সভ্যতার ভিত্তিতে। এই সভ্যতায় マー न्ततः। Sty-^9 বিপত্তির কারণ অনেক দিন থেকে সঞ্চিত হয়ে উঠছিল অতএব ভাঙনের কাজ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। একটি মাত্র বড় আশ্বাসের কথা এই যে, কল্পাস্তের ভূমিকায় নূতন সভ্যতা গড়বার কাজে মেয়েরা এসে দাড়িয়েছে—প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই ষে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়—যে-ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে। যে-মানবসমাজে তার জন্মেছে, সেই সমাজ আজ সকল দিকেই সকল বিভাগেই স্বম্পষ্ট হয়ে উঠল তাদের দৃষ্টির সম্মুখে । এখন অন্ধসংস্কারের কারখানায় গড়া পুতুলগুলো নিয়ে খেলা করা আর তাদের সাজবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবপালিণী বুদ্ধি কেবল ঘরের লোককে নয় সকল লোককে রক্ষার জন্যে কায়মনে প্রবৃত্ত হবে। আদিকাল থেকে পুরুষ আপন সভ্যতা-দুর্গের ইটগুলো তৈরি করেছে নিরস্তর নরবলির রক্তে ; তারা নিৰ্ম্মমভাবে কেবলই ব্যক্তিবিশেযকে মেরেছে কোনো একটা সাধারণ নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে ; ধনিকের ধন উৎপন্ন হয়েছে শ্রমিকের প্রাণ শোষণ করে; প্রতাপশালীর প্রতাপের আগুন জালানো রয়েছে অসংখ্য দুৰ্ব্বলের রক্তের আস্থতি দিয়ে, রাষ্ট্রম্বার্থের রথ চালিয়েছে প্রজাদের তাতে রজ্জ্ববদ্ধ করে। এ সভ্যতা ক্ষমতার দ্বারা চালিত, এতে মমতার স্থান অল্প। শিকারের আমোদকে জয়যুক্ত ক'রে এ সভ্যতা বধ ক’রে এসেছে অসংখ্য নিরীহ নিরুপায় প্রাণী ; এ সভ্যতায় জীবজগতে মানুষকে সকলের চেয়ে নিদারুণ করে তুলেছে মানুষের পক্ষে এবং অন্য জীবের পক্ষে। বাঘের ভয়ে বাধ উদ্বিগ্ন হয় না, কিন্তু এ সভ্যতায় পৃথিবী জুড়ে মানুষের ভয়ে মানুষ কম্পান্বিত। এই রকম অস্বাভাবিক অবস্থাতেই সভ্যতা আপন মুঘল আপনি প্রসব করতে থাকে। আজ তাই স্বরু হ'ল। সঙ্গে সঙ্গে ভীত মানুষ শাস্তির কল বানাবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত কিন্তু কলের শান্তি তাদের কাজে লাগবে না, শাস্তির উপায় যাদের অন্তরে নেই। ব্যক্তিহননকারী সভ্যতা টিকতে পারে না। সভ্যতা-স্বাক্টর নূতন কল্প আশা করা যাক। এ আশা যদি রূপ ধারণ করে তবে এবারকার এই স্বষ্টিতে মেয়েদের কাজ পূর্ণ পরিমাণে নিযুক্ত হবে সন্দেহ নেই। নবযুগের এই