পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8حيst আহবান আমাদের মেয়েদের মনে যদি পৌছে থাকে তবে তাদের রক্ষণশীল মন যেন বহু যুগের অস্বাস্থ্যকর আবর্জনাকে একান্ত আসক্তির সঙ্গে বুকে চেপে না ধরে। তারা যেন মুক্ত করেন হৃদয়কে, উজ্জল করেন বুদ্ধিকে, নিষ্ঠা প্রয়োগ করেন জ্ঞানের তপস্যায়। মনে রাখেন, নির্বিচার অন্ধরক্ষণশীলতা স্বষ্টিশীলতার বিরোধী। সামনে আসছে নূতন স্বটির যুগ। সেই যুগের অধিকার লাভ করতে হ’লে মোহমুক্ত মনকে প্রৰণসী সৰ্ব্বতোভাবে শ্রদ্ধার যোগ্য করতে হবে, অজ্ঞানের জড়ত এবং সকল প্রকার কাল্পনিক ও বাস্তবিক ভয়ের নিম্নগামী আকর্ষণ থেকে টেনে আপনাকে উপরের দিকে তুলতে হবে। ফললাভের কথা পরে আসবে—এমন কি, না আসতেও পারে, কিন্তু যোগ্যতা লাভের কথা সৰ্ব্বাগ্রে । ২ অক্টোবর ১৯৩৬ শাস্তিনিকেতন নিখিলবঙ্গ মহিলাকৰ্ম্মলিম্মিলন উপলক্ষ্যে লিখিত ] সেকালের উৎসব স্ত্রীযোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় এই বৃদ্ধ বয়সে, যখন স্থদুর অতীত জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করি, তখন সৰ্ব্বাগ্রেই আমার মনে হয় যে, বাঙালীর জীবনের, বাঙালী সমাজের রসধারা যেন অতি দ্রুত শুকাইয়া যাইতেছে। আমরা বাল্যকালে বা যৌবনে, দেশে যেরূপ আনন্দের স্রোত প্রবাহিত হইতে দেখিয়াছি, আজকাল যেন আর সেরূপ দেখিতে পাই না । বয়স-দোষে হয়ত আমাদের রসামুভূতি অনেকটা হ্রাস পাইয়াছে, কিন্তু সেকালের মত আমোদ-প্রমোদের সাৰ্ব্বজনীন উপাদানও ত এখন আর দেখিতে পাই না । সেকালে লোকে যেমন নিমন্ত্রিত-অনিমন্ত্রিত, রবাহূত-অনাহুত সকলকে খাওয়াইয়া তৃপ্তি লাভ করিত, এখন আর সেরূপ দেখিতে পাই না। হয়ত মফস্বলে, পল্লীগ্রামে এখনও সেইরূপ ভোজে “দীয়তাং ভূজ্যতাং” হইয়া থাকে, কিন্তু কলিকাতা অঞ্চলে এবং মফস্বলের অনেক শহর অঞ্চলেও সেরূপ ঢালাও খাওয়ান আজকাল এক প্রকার উঠিয়াই গিয়াছে। পচিশ জন লোককে নিমন্ত্রণ করিলে যে এক শত লোকের মত আয়োজন করিতে হয়, তাহা এখন কয় জন গৃহস্থ বা ধনবান মনে করেন ? সেকালে সবই যেন অপরিমেয় ছিল, একালে সমস্ত ব্যাপারই যেন বাজেট করিয়া-মাপকাঠিতে মাপিয়া করা হয়। আমরা বাল্যকালে দেখিয়াছি, এক শত লোককে নিমন্ত্ৰণ করিলে লোকে এক মণ ময়দা, এক মণ মিষ্টান্ন, এক মণ দধি এবং তদনুরূপ তরকারির আয়োজন করিতেন। অথচ তাহারা জানিতেন যে, এক মণ ময়দার লুচি এক শত ব্যক্তি ভোজন করিয়া শেষ করিতে পারে না। তথাপি র্তাহারা যে ঐরুপ আয়োজন করিতেন, তাহার কারণ, তাহারা মনে করিতেন যে, এক শত লোককে নিমন্ত্রণ করিলে অন্ততঃ তিন শত জন সেই আহার্ষ্য ভোজন করিবে। আর আজকাল লোকে ভোজের আয়োজন করে, নিমন্ত্রিত ব্যক্তির সংখ্যা হিসাব করিয়া । কুড়ি জনের স্থানে পচিশ জন লোক যদি ভোজবাটতে উপস্থিত হয়, তাহা হইলে গৃহস্বামীকে বিষম বিপদে পড়িতে হয়, কারণ, তিনি কুড়ি জনকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া সেই কুড়ি জনের উপযুক্ত আহার্ষ্য জবাই প্রস্তুত করাইয়া থাকেন। সেকালের লোকে এইরূপ সঙ্কীর্ণতাকে ঘৃণা করিত। অনেকে হয়ত মনে করিবেন যে, সেকালে লোকের অবস্থা যেরূপ সচ্ছল ছিল, একালে সেন্ধপ নাই, সেই জন্তই লোকে ভোজ প্রভৃতি ব্যাপারে ততটা উদারতা দেখাইতে পারে না। কিন্তু তাহা নহে, সেকালের লোকের প্রাণ ছিল, তাহারা স্বয়ং অদ্ভুক্ত থাকিয়াও পরকে খাওয়াইতে পারিত। এখন লোকের সে প্রাণ নাই। সেকালে আমরা দেখিয়াছি, এক জন দরিদ্র গৃহস্থের সংসারেও তিন-চারি জন দূরসম্পৰ্কীয়