পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

عصوا سواوج প্রবাসী INEONළං বেলা ২টা ২ হইতে আরম্ভ করিয়া রাত্রি ১০টা ১১টা পৰ্য্যস্ত নানা পল্লীর ভিতর দিয়া বাধাই পথে পথে বেড়াইত । তাহার পর ফল্গুৎসব বা দোলযাত্রা। পাচ জনে না মিলিলে হোলিখেলায় আনন্দ হয় না, তাই দোলযাত্রাও উৎসব বলিয়া গণ্য । বাংলা দেশ অপেক্ষা উত্তর-ভারতে অর্থাৎ বেহার, যুক্তপ্রদেশ, রাজপুতানা প্রভৃতি স্থানে হোলিখেলায় অনেক অধিক জাকজমক হয় । সেকালে বঙ্গদেশেও হোলিখেলায় আমোদ বড় অল্প ছিল না। আমরা বাল্যকালে দেখিয়াছি, অশিক্ষিত-শিক্ষিত, ইতর-ভদ্র, দরিদ্রধনী সকলেই রং মাখিয়া ও মাখাইয়া আমোদ-প্রমোদে উন্মত্ত হইত। পল্লীর সর্বজনশ্রদ্ধাভাজন প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ ভদ্রলোকেরা পৰ্য্যন্ত দোলের দিন রং মাখিয়া সং সাজিতে কুষ্ঠিত হইতেন না ; আবীরে বুদ্ধদের শ্বেত কেশ লাল হইয়া যাইত। আজকাল দেখিতে পাই, ইংরেজী-শিক্ষিত যুবকগণ গায়ে রং মাখিতে ঘৃণা বোধ করেন। র্তাহারা হয়ত মনে করেন যে, এইরূপ আবীর বা রং লইয়া মাতামাতি করা বৰ্ব্বরতার চিহ্ন, কেননা শ্বেতাঙ্গগণ ইহাকে বর্বরত বলিয়া মনে করেন । কিন্তু ইউরোপীয়গণ আমাদের কোন প্রথা বা আচার-ব্যবহারকে বর্বরতা বলিলেই কি সেই প্রথা বর্বর হইবে এবং সেই প্রথাকে পরিবর্জন করিতে হইবে ? ইউরোপীয় সমাজের “বল” নৃত্যও ত আমাদের নিকট অত্যন্ত রুচিবিগর্হিত এবং বর্বর বলিয়া মনে হয় । অৰ্দ্ধাৰ্বতবক্ষ রমণীদিগের পরপুরুষকে আলিঙ্গন করিয়া সলঙ্ক নৃত্যকে প্রাচ্যদেশবাসীরা বর্বরতার চরম বলিয়াই মনে করে। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলমানের দৃষ্টিতে এই প্রকার মৃত্য শ্লীলতাবর্জিত ও বিকৃত রুচির পরিচায়ক বলিয়াই মনে হয়। কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে আফগানিস্থানের কোন ভূতপূৰ্ব্ব যুবরাজ ইউরোপে ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলেন। তাহার সম্মানের জন্ত লওনের রাজপ্রাসাদে “বল”-নৃত্যের আয়োজন হইয়াছিল। মৃত্য আরম্ভ হইবার কিছু পরে আফগান-বুবরাজ রাজপ্রাসাদে উপনীত হইলে তাহাকে সসম্মানে নৃত্যসভাতে লইয়া যাওয়া হইল, কিন্তু তিনি মৃত্যসভাতে প্রবেশ করিয়াই নৃত্যপরায়ণ : রমণীদিগের পরিচ্ছদ দেখিয়াই সলজে সেই কক্ষ ত্যাগ করিয়া অঙ্ক কক্ষে গমন করিলেন। তাহার এই আচরণে সকলে অতিমাত্রায় বিস্মিত হইয়া নৃত্যকক্ষ পরিত্যাগের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিয়াছিলেন, যেখানে সন্ধান্ত মহিলারা অসমৃত পরিচ্ছদে উপস্থিত থাকেন, সেখানে কোন ভজলোকের থাকা কি উচিত? আফগান-যুবরাজের এই মন্তব্য শুনিয়া সে-সময়ে ইংলওে বেশ আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল। এক দল লোক যুবরাজের এই মন্তব্যকে একান্ত সঙ্গত বলিয়াই মনে করিয়াছিলেন । উচ্চপদস্থ ধৰ্ম্মযাজকগণ যুবরাজের মন্তব্যের সমর্থন করিয়াছিলেন। আবার অন্ত দল এই বলিয়া মনকে প্রবোধ দিয়াছিলেন যে, অর্ধসভ্য আফগান, পাশ্চাত্য সভ্যতার মহিমা উপলব্ধি করিতে অসমর্থ বলিয়াই আফগান-যুবরাজ ঐক্লপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিলেন। আফগান-যুবরাজের মন্তব্য শুনিয়াও ইংরেজ জাতি “বল”-নৃত্য পরিবর্জন করেন নাই । কোন প্রথা বিদেশীয়ের দৃষ্টিতে বিসদৃশ বোধ হইলেই যে সেই প্রথাকে ত্যাগ করিতে হইবে, এরূপ যুক্তি অর্থহীন । অনূ্যন চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে আমাকে বিষয়কাৰ্য্য উপলক্ষ্যে কলিকাতার বড়বাজারে, মাড়োয়ারী মহাজনদিগের গদীতে বা কাৰ্য্যালয়ে যাতায়াত করিতে হইত। র্তাহাঁদের মধ্যে এক-এক জন অত্যন্ত গম্ভীরপ্রকৃতি অর্থাৎ “রাসভারি” লোক ছিলেন, তাহাদের সম্মুখে যাইতে বা তাহদের কথার প্রতিবাদ করিতে সাহস হইত না। কিন্তু দোলের দিন দেখিয়াছি, তাহাদের সেই গুরুগম্ভীর প্রকৃতি যেন অন্তহিত হইয়া যাইত ; র্তাহারাও রং লইয়৷ বালকের মত ছুটাছুটি লাফালাফি করিতেন, সেদিন র্তাহাদের লঘু-গুরু, অধমৰ্ণ-উত্তমণ জ্ঞান লোপ পাইত, যাহাকে সম্মুখে দেখিতেন, তাহাকেই আবীরে ও রঙে লাল করিয়া ছাড়িয়া দিতেন। কিন্তু পরদিন তাহারাই যখন গদীতে বসিয়া বিষয়কৰ্ম্মে ব্যাপৃত হইতেন, তখন তাহাদিগকে দেখিলে, কেহই বলিতে পারিত না যে, ইহারাই পূৰ্ব্বদিন রং লইয়া মাতামাতি করিয়াছিলেন । যখন আফ্রিকায় বুয়ার-যুদ্ধ হয়, তখন আমি কলিকাতার কোন শ্বেতাঙ্গ বণিকের আপিসে কাৰ্য্য করিতাম। লেডীস্মিথ নামক স্থানে ইংরেজ-বাহিনী বুয়ারদিগের দ্বারা অবরুদ্ধ হইলে আমাদের আপিসের প্রত্যেক শ্বেতাঙ্গ কৰ্মচারীর মুখে এরূপ বিষাদের ছায়া পতিত হইয়াছিল যে, দেখিলে মনে হইত,