পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃপণের স্বর্গ ঐসীতা দেবী রমাপতির যে আবার কোনও দিন বিবাহ হইবে এ ছরাশা তাহার আত্মীয়-স্বজন কাহারও ছিল না । বন্ধু-বান্ধবে বহুদিন তাহার সম্বন্ধে হাল ছাড়িয়া দিয়াছে । আর তাহাদের এখন রমাপতির ভাবন ভাবিবার অবসরও নাই, রুচিও নাই । বাড়ীতেই প্রত্যেকের একটি, দুইটি, কোনও দুর্ভাগ্য ব্যক্তির বা ততোধিক অবিবাহিত কস্ত বসিয়া আছে, তাহাদের বিবাহের ভাবনা ভাবিবে, না প্রৌঢ় রমাপতির ভাবনা ভাবিবে ? ভাবিবার দিন যখন ছিল তখন বন্ধু আত্মীয় কেহই ভাবিতে ক্রটি করে নাই, কিন্তু রমাপতির কোনই গা ছিল না, কাজেই বিবাহ হইল না। রমাপতি অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে । বাপ দেশে জমিজমা বাড়ী রাখিয়া গিয়াছেন, কলিকাতায়ও রাখিয়া গিয়াছেন ব্যাঙ্কে প্রচুর টাকা এবং খান-দুই পাকা বাড়ী। ছেলেমেয়ে অনেকগুলিই তাহার হইয়াছিল, কিন্তু বাঙালী-সংসারের যেমন নিয়ম, তাহার অৰ্দ্ধেকগুলি শিশুকালেই চলিয়া গিয়াছে। বুড়া ষদ্ধপতি মরিবার সময় রাখিয়া গেলেন, দুই ছেলে গণপতি আর রমাপতি, আর তিন মেয়ে, সরল, তরলা অার বিমলা। মেয়ে তিনটিরই বিবাহ তিনি দিয়া গিয়াছিলেন বটে, কিন্তু মেজমেয়ে তরলা ইহারই মধ্যে আবার বাপের বাড়ী ফিরিয়া আসিয়াছে বিধবা হইয়া, সঙ্গে একটি ছেলে । অন্ত দুই বোন স্বামীর সংসারেই স্বখে দুঃখে দিন কাটাইতেছে। ধন্থপতির বৃদ্ধ গৃহিণী বাতে একেবারে পঙ্গু, নড়িয়া বসিবার সাধ্য র্তাহার নাই। কাজেই বিধবা কন্যাকে দেখিয়া তিনি দিনে দশবার চোখে স্বাচল দেন বটে, তবে সঙ্গে সঙ্গে ইহাও স্বীকার করেন যে তরি না থাকিলে দিনান্তে বুড়ী মায়ের গলায় জলবিন্দুও পৌঁছিত না। সম্রাস্ত ঘরের বিধবা তিনি, ঝি-চাকরের হাতে জল খাইতে ত পারেন না 7 ঘরে একটা বউ নাই যে দুইটা রাধিয়া দিবে, বা এক ঘটি জল অগ্রসর করিয়া দিবে। কিন্তু বউই বা নাই কেন ? যদুপতি যখন মারা যান তখন বড় ছেলে গণপতির বয়স সাতাশ আর রমাপতির পচিশ। পড়াশুনা তাহাদের শেষ হইয়াছে, স্বাস্থ্য এই বয়সের পাঁচটা ছেলের যেমন হয় তেমনই, বাপের যথেষ্ট বিষয়সম্পত্তি আছে, তবু ঘরে বউ আসে নাই কেন ? ছেলেদের তেমন বদনামও ত কিছু নাই ? অার বদনাম থাকিলেই কি হিন্দুর সংসারে পুরুষ মানুষের বিবাহ আটকায় নাকি ? তবু তরি না রণধিয়া দিলে তাহার বিধবা মাতার খাওয়া হয় না কেন ? অবশুই তাহার কিছু কারণ আছে। গণপতি কিঞ্চিৎ সাহেবী মেজাজের মানুষ । বাড়ীর সাবেকী চালচলন, সনাতনপন্থী আবহাওয়া তাহার একেবারে ভাল লাগে না। বাপ থাকিতে প্রতিবাদ করিবার উপায় ছিল না। যতই আড়ালে তাহাকে ওল্ড ফসিল ( old fossil ) বলিয়া গালি দেওয়া যাকু না কেন, সামনাসামনি তাহার অর্থকে খাতির করিয়া চলিতে হয়। এ যে দায়ভাগের দেশ, এদেশে পিতা ধৰ্ম্ম, পিতা স্বর্গ না বলিয়া উপায় কি ? কলমের এক আঁচড়ে পথে বসাইয়া দিতে পারে যে ! সুতরাং বিলাত যাইবার ইচ্ছা গণপতিকে মনেই চাপিয়া রাথিতে হইয়াছিল, এবং ঘরে মাছের ঝোল এবং আলু-পটোলের ডালনা দিয়াই দম্বোদর পূর্ণ করিতে হইত। অবশু পয়স-কড়ি যখনই হাতে আসিত, তখনই বাহিরে গিয়া সে নানাভাবে মুখ বদলাইয়া আসিত। বিবাহ সম্বন্ধেও তাহার রুচি ছিল আধুনিক রকম। মেমসাহেব বিবাহে তাহার বিন্দুমাত্র আপত্তি ছিল না, যদি মেমসাহেবের আপত্তি না থাকে, কিন্তু হায় হতভাগ্য, এ-কথা সে বলিবে কাহার কাছে ? তাহার মত মনোবৃত্তি ত এ-বাড়ীতে আর একটা কাহারও নাই। স্ত্রীলোকগুলিকে ত সে মানুষের মধ্যেই ধরিত না, কারণ তাহারা সকলেই শাড়ী পরে, এবং শুধু মাত্র শাড়ীই পরে। বাপ ত মূৰ্ত্তিমান সনাতন ধৰ্ম্ম, এবং ভাই রমাপতি একে বোকা তায় দারুণ কৃপণ। মেমসাহেব বাড়ীতে আসিলে কি পরিমাণ পয়সা খরচ হইবে তাহা ভাবিলেই আতঙ্কে তাহার