পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কানে একেবারে শোনেন না এবং চোখেও প্রায় কিছুই দেখেন না । সুতরাং যাহাকে হউক ধরিয়া আনিয়া নৈকষ্য কুলীন-কন্যা বলিয়া তাহার কাছে চালাইয়া দেওয়া যায়। তরল জরের ঘোরে অজ্ঞান, নসের ঠিকুজী-কোষ্ঠী দেখিবার মত ক্ষমতা তাহার নাই। কাকু ওসবের ধার ধারে না, মা সারিয়া উঠিলেই সে বঁাচে । কিন্তু অত টাকা যে খরচ হইয়া যাইবে ? কিন্তু লোক না হইলেই বা চলে কিরূপে ? টাকা খরচের ভয় রমাপতির অত্যধিক বটে, কিন্তু প্রাণের ভয়ও সে কিছু কিছু করে । টাইফয়েড ব্যাপারটি ত কম নয়, সব কয়জনকে চাপিয়া ধরিলে কাহারও আর নিস্তার থাকিবে না । ভরলা শুইয়া ত সংসার অচল হইয়াছে। রমাপতি আর কান্ত বাজারের খাবার কিনিয়া খাইয়াছে, রমাপতির মা শুধু দ্বধ আর ফল খাইয়া আছেন। স্ত্রীলোকেরও যে জগতে প্রয়োজন আছে, তাহা রমাপতি এইবার স্বীকার না করিয়া থাকিতে পারিল না। দুপুরবেলাট আজও বাজারের খাবার কিনিতে হইল। কামুর পেট কামড়াইতেছে, সে বেশী কিছু থাইতে চাহিল নী, কাজেই রমাপতি তাহার ভাগটা রাত্রে কাজে লাগাইবার আশায় তুলিয়া রাখিল । তরল জরের ঘোরে অচেতন, সে নিশ্চয়ই কিছু খাইতে চাহিবে না, কাজেই তাহার জন্ত কোনও ব্যবস্থার প্রয়োজন হইল না। বুড়ী মা একটু জোলো দুধ খাইয়া খানিক বক্‌ বক্‌ করিয়া থামিয়া গেলেন। মুখে একটাও দাত নাই, তাহাকে অন্য খাবার কিনিয়া দিয়াই বা লাভ হইবে কি ? সামনে আসিয়া দাড়াইল। রমাপতি তাড়াতাড়ি ছুটিয়া গিয়া দরজা খুলিয়া দিল। ডাক্তার নামিলেন আগে এবং র্তাহার পিছন পিছন নামিল একটি মাঝবয়সী স্ত্রীলোক । তাহার হাতে একটি বড় কেম্বিসের ব্যাগ। এই তাহা হইলে নস ? আর রক্ষা নাই। রমাপতির গায়ের রক্ত হিম হইয়া আসিল, সে ব্যাকুল চোখে ডাক্তারের দিকে চাহিয়া রহিল। ডাক্তার তখন কিছু না বলিয়া সোজা রোগিণীর ঘরে ঢুকিয়া গেলেন, স্ত্রীলোকটিও তাহার পিছন পিছন চলিল । ব্যাগটা একটা জানালার উপর নামাইয়া রাখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এরই অস্থখ বুৰি ?” ডাক্তার বলিলেন, “হ্য, এর চুলটুলগুলো আঁচড়ে পরিষ্কার কর, আর বিছানা কাপড়চোপড়ও বদলে দাও, বড় সব নোংরা হয়ে রয়েছে।” তাহার পর রমাপতির দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “এই একে নিয়ে এলাম আর কি ? পাস-করা নস নয়, তবে রোগীর কাজ মোটামুটি জানে । দেখিয়ে দিলে সবই করতে পারবে। আপনাদের যে আবার হাজার হ্যাঙ্গাম, খ্ৰীষ্টান চলবে না, হেন তেন। এ হিন্দুরই মেয়ে । কোথায় কি আছে ব’লে-টলে দিন।” বলিয়া তিনি রোগিণীকে পরীক্ষা করিতে লাগিয়া গেলেন। স্ত্রীলোকটির বয়স বছর ত্রিশ হইবে । রং বেশ পাকা কালে, হৃষ্টপুষ্ট দোহার চেহারা। মাথায় চুল বেশী নাই । হাত খালি, পরনে সাদা নরুলপাড়ের ধুতি আর সাদা একটা ব্লাউসের মত কি। রমাপতির দিকে চাহিয়া বলিল, “এর কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর এসব কোথায় ? বদলে लिझे ” - রমাপতি তরলার বাক্স বিছানা সব দেখাইয়া দিল । বোনের আঁচল হইতে চাবি খুলিয়া কাপড়চোপড় কিছু কিছু বাহির করিয়াও দিল। তাহার পর ডাক্তারের পিছন পিছন সে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । ডাক্তার ত বসিলেন প্রেস্ক্রপশন লিখিতে। রমাপতি জিজ্ঞাসা করিল, “ওঁকে কত ক’রে দিতে হবে ? ওঁর নাম-কি ?” ডাক্তার মুখ না তুলিয়াই বলিলেন, “মাস-হিসাবে হ'লে মাসে ত্রিশ টাকা, দিন-হিসাবে হ’লে কিছু বেশী পড়বে। ওর নাম সরযু সেন।” ত্রিশ টাকা । খানিকক্ষণ রমাপতির মুখ দিয়া আর কথা বাহির হইল না। তাহার পর বলিল, “খেতে দিতে হবে ত?” ডাক্তার চটিয়া বলিলেন, “তা আপনার বাড়ী কি না খেয়ে কাজ করবে মশায় ?” - রমাপতি বলিল, “না না, না খেয়ে কাজ করবে কেন ? তবে রান্নাবাল্লা সব আমার বোনই করত কিনা, এখন কি ব্যবস্থা হবে তা ত ভেবে পাচ্ছি না ?” ডাক্তার প্রেসক্লপশন টেবিলের উপর চাপ দিয়া রাখিয়া বলিলেন, “সে যা হয় আপনি করবেন। নসের ব্যবস্থা