পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"ঙ্কলজেজু দ্বজত্ৰ רכב করলাম বলে রাধুনীর ব্যবস্থাও আমি করতে পারব না। চললাম এখন, ঢ়ের রুগী এখনও বাকি আছে।” বলিয়া বাহির হইয়া চলিয়া গেলেন । রমাপতি দরজা বন্ধ করিয়া ভিতরের দিকে চলিল । আজ আগাগোড়া সবই মন্দ। ভালর মধ্যে শুধু এই যে ডাক্তার তরলাকে বালির জল ভিন্ন আর কিছু খাইতে বলে নাই। নবাবী রকম পথ্যের ব্যবস্থা দিয়া গেলে বেচারা রমাপতিকে আজ ধনেপ্রাণে সারা হইতে হইত। কিন্তু বালির জলই বা করে কে ? রমাপতিকে কি শেষে এই বয়সে হাত পুড়াইয়া রাধিতে বসিতে হইবে ? নসটাকে বলিয়া দেখিলে কেমন হয় ? চটিয়া উঠিবে না ত ? নসরা স্ত্রীজাতীয় হইলেও, ঠিক স্ত্রীলোকের মত ব্যবহার তাহাদের সঙ্গে করা চলে কি না সে বিষয়ে রমাপতির যথেষ্টই সন্দেহ ছিল। কাকু তখন বাহিরের ঘরে তক্তপোষের উপর বসিয়া ছলিয়া দুলিয়া নামত মুখস্থ করিতেছে। সময় কাটাইবার ইহার চেয়ে উৎকৃষ্টতর উপায় সে বেচারা আর কিছু ভাবিয়া পায় নাই। রমাপতি অন্দরে গিয়া তরলার ঘরের ভিতর একবার উকি মারিয়া দেখিল। সরযু সেন নস হইলেও স্ত্রীলোকের মতই কাজ করিতেছে। তরলার বিছানাট পরিষ্কার করিয়াছে, কাপড়চোপড় বদলাইয়াছে, চুলও বোধ হইল আঁচড়াইয়া দিয়াছে। ঘরটাও যেন অনেকখানি পরিচ্ছন্ন বোধ হইতেছে, সে কি ঝণটও দিয়াছে নাকি ? তাহ হইলে উকুন ধরাইয়া বার্লি সিদ্ধ করিতে বলিলে মারিতে নাও আসিতে পারে। রমাপতি দরজার কাছে দাড়াইয়া ইতস্তত: করিতে লাগিল । এ-বাড়ীতে ইলেক্‌টিক লাইট নাই, কেরোসিনের ল্যাম্পই জলে। তরলার ঘর প্রায় অন্ধকার হইয়া আসিয়াছে, সরযু রমাপতির দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আলো কোথায় ?” রমাপতি তক্তপোষের তলায় অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া দেখাইয়া দিল একটি চিম্নী-ভাঙা হারিকেন লণ্ঠন রহিয়াছে। আরও বলিল, “উপরে উঠবার সিড়ির পাশে বোতলে তেল আছে।” নস লণ্ঠনট টানিয়া বাহির করিল। তাহার পর এক টুকরা ছেড়া ছাকড়ার সাহায্যে চিম্নীটাকে পরিষ্কার করিতে লাগিল। রমাপতির খুবই ইচ্ছা করিতে লাগিল, মায়ের ঘরের ও নিজের ঘরের লণ্ঠন দুইটাও আগাইয়া দেয়, কিন্তু প্রথম দিন অতখানি ভরসায় কুলাইল না। সরযু চিম্নি পরিষ্কার করিয়া, তেল ভরিয়া, আলো জালাইয় ঘরে ঢুকিয়া গেল। বুড়ীর ঘরের আর রমাপতির ঘরের আলো অসংস্কৃতই রহিয়া গেল। রমাপতি “লণ্ঠন দুইটি জালাইয়া যথাস্থানে রাখিয়া আবার বাহিরের ঘরে চলিয়া গেল। কান্ত তখনও পড়া করিতেছে। বাহির হইতে নস আবার জিজ্ঞাসা করিল, “বালি কি করা হয়েছে ? কোথায় আছে ? আর আপনার মা জল চাইছেন, আমি কি তাকে জল দেব ?” রমাপতিকে আবার উঠিয়া আসিতে হইল। সাহস সঞ্চয় করিয়া বলিল, “বালিটা যদি ক’রে নেন, রাধুনীটার অস্থখ করেছে বলে চলে গেছে। মায়ের ঘরেই ত জল আছে, আমি দিচ্ছি।” : সরযু গালে হাত দিয়া বলিল, “ওমা তাই নাকি ? তা আমাকে আগে বলেন নি কেন ? এতক্ষণে হয়ে যেত । বসেই ত আছি তখন থেকে । আমি জল গড়িয়ে দিচ্ছি, আমার হাতে থাবেন কি না তা ত জানি না, তাই জিগগেষ করছিলাম।” মানুষটা ত বেশ ভালই বোধ হইতেছে ; রমাপতি যেন হাতে স্বর্গ পাইল । তাহারাও বৈদ্য, এই স্ত্রীলোকটিকেও তাহাই বোধ হইতেছে। ইহার হাতে জল খাইতে মায়ের আপত্তি হইবে কেন ? তবে আজকার মত থাকৃ। সে সরযুকে রান্নাঘরের দরজাটা দেখাইয়া দিয়া বলিল, “ঐ যে রান্নাঘর, এখন অবধি উল্লুনে আঁচ পড়ে নি। সকালে বাজারের খাবার কিনে খেতে হয়েছে। আপনি উকুনটা ধরান, আমি মাকে জল দিয়ে আসছি। কাঠ, কয়ল, ফুটে সব ওখানেই আছে।” মা এতক্ষণ নিজের ঘরে আপন মনে বকৃবক্ করিতেছিলেন। “চার পহর বেলা গড়িয়ে গেল, এখন অবধি মুখে এক ফোটা জল পড়ল না। তরি মরেছিস্ নাকি ? যমে অামায় ভুলে আছে। ওরে ও মুখপোড়া রম, তোরা সব গেলি কোথায় ?” রমাপতি ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “যাব আর কোন চুলোয়, বাড়ীতেই আছি। কার বা মুখে জল পড়েছে ? তরিত