পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল থেকে জরে অজ্ঞান, কে কার পিণ্ডির ব্যবস্থা করে ? এই নাও জল ।” মা জলের ঘটি হাতে করিয়া বলিলেন, “তুই দিলি । তোর ত আচার-বিচার কিছু নেই। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, এখন যার তার হাতে খাব ? তরির আবার জর হ’ল ? দুটো চাল ডাল সেদ্ধ করে কে ?” : রমাপতি চটিয়া বলিল, “আছ কেবল নিজের তালে। আর ত্যাচারের ভাবনা ভাবতে হবে না, যা হাতের কাছে পাছ, গেল । তfর বলে মরছে, সে আসবে তোমার চাল ভাল সেদ্ধ করতে ” মা জিজ্ঞাসা করিলেন, "তাকে কে দেখছে ?” রমাপতি বলিল, “ডাক্তারবাবু এক জন নস নিয়ে এসেছেন, সেই দেখছে।” মায়ের হাত হইতে জলের ঘটিটা ঠন্‌ করিয়া পড়িয়া গেল, ঘরের মেঝেতে ঢেউ খেলিতে লাগিল । তিনি চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “ওমা কোথায় যাব গো ! গীরিষ্টানের হাতে থাবে নাকি আবাণী শেষে ? আমার ঘরে যেন কেউ না ঢোকে তা বলে দিচ্ছি, আমি তাহলে মাথা খুঁড়ে মরব।” রমাপতি মাকে টানিয় জলপ্লাবন হইতে সরাইয়া বসাইয়া দিল। বিরক্ত ভাবে বলিল, “শ্ৰীষ্টাম নয়, খ্ৰীষ্টান নয়, তোমাকে চেচিয়ে পাড় মাথায় করতে হবে না। হিন্দুর মেয়ে, বৈদ্যের মেয়ে, তুমিও ত তার হাতে জল খেতে পার। কাল থেকে তাই পেতে হবেও, না-হয় ত গুকিয়ে থেক । আমি ত আর কাজকৰ্ম্ম ফেলে তোমায় আগলে বসে থাকতে পারব না ?” মা বলিলেন, “হঁ্য ষ্টিদুর মেয়ে, ষ্ট্রিদু ত কাদছে ! তাহলে নসের কাজ করবে কেন ?” এই বেয়াক্কেল বুড়ীর সঙ্গে বকিয়া লাভ নাই, রমাপতি বাহির হইয়া চলিয়া গেল। পেটে আগুন ধরিলে মা ঠিক খাইবেন সরযুর হাতে, তখন আর অত বিচার থাকিবে না। সরযু বার্লি জাল দিয়া অনিয়া রোগিণীকে খাওয়াইল । তাহার পর বাহিরের ঘরের দরজার কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আর সকলের রাতে খাওয়ার কি ব্যবস্থা হবে ?” রমাপতি বিব্রত ভাবে বলিল, “তাই ত ভাবছি। বাজার থেকে খাবার কিনে আনব ?” নস বলিল, “না না, বাজারের খাবার ভারি খারাপ জিনিষ, ওসব খাবেন না। এক জন ত অমুখে পড়েছে, বাকিদের হলে মহা মুস্কিল হবে।” রমাপতি বলিল, “তাহলে ?” নস বলিল, “উহুনে আঁচ ত দেওয়াই আছে, আমিই ছটো চাল ডাল সেদ্ধ করে নিচ্ছি। ভাড়ারে সব আছে ত ?” রমাপতি মহোৎসাহে বলিল, “এই ত পরশু এক মাসের ভাড়ার আনলাম, সবই আছে নিশ্চয়। আলু পটোলও আছে।” ভাগ্যে হিন্দু নস আনার প্রস্তাব সে করিয়াছিল, ন হইলে এ স্থবিধাটুকু ত হইত না । সরযু চলিয়া গেল। তরল ঘুমাইতেছে, তাহার কাছে বসিবার তখন দরকার নাই। খণ্ট দেড়েকের ভিতর সে খিচুড়া রাধিয়া ফেলিল, আলু পটোলও ভাজিয়া লইল । তাহার পর কাঠু ও রমাপতিকে ডাকিয়া আনিয়া থাইতে বসাইয়া দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার মা কি খাবেন ?” রমাপতি খাইতে খাইতে বলিল, “তিনি দুধ ছাড়া রাত্রে কিছু খান না, আপনি গেয়ে নিন।” সরযু রান্নাঘরে ঢুকিয়া নিজের খাবার বাড়িতে লাগিল। রমাপতি খাওয়া শেষ ঝরিয়া নিজের এটো থাল-গেলাস উঠাইয়া লইয়। কলতলায় ধুইতে চলিল, দেখাদেখি কাহও তাহাই করিল। সরযু রান্নাঘর হইতে জিজ্ঞাসা করিল, “ঝিও নেই বুঝি ?” রমাপতি আমৃতা আমৃতা করিয়া বলিল, “সেটাও বাড়ী চলে গেছে।” সরযু আর কথা না বলিয়া খাইতে লাগিল। তাহার পর রান্নাঘরের বাসন ধুইয়া, ঘর পরিষ্কার করিয়া, তরলার ঘরে গিয়া ঢুকিল। রমাপতি সকালেই উঠে। কিন্তু উঠিয়া দেখিল নসর্ণ তাহারও অাগে উঠিয়াছে। ঘর-দোর বাট দিয়াছে, এবং উকুন ধরাইয়া রান্নাও চড়াইয়াছে। দেখিয়াই রমাপতির চিত্ত পুলকিত হইয়া উঠিল। হাজার হউক হিন্দুর মেয়ে ত ? নসের কাজ করিলে কি হয় । ঘরকরনার কাজ নিশ্চয়ই