পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rao ন, মহা মুস্কিল। কতকাল আর এভাবে চলিবে ? এখন উঠিয়া পড়িয়া নিজের কাজকর্মের ভার নিজে গ্রহণ করিলে রমাপতি হাফ ছাড়িয়া বঁাচে । কামুর জ্যাঠামহাশয়ের কাছ হইতে যে এক শ’ টাকা আদায় করিয়াছিল, সরযুর মাহিনী ত্রিশ টাকা দিয়া দিলে, তাহার আর অতি অল্পই অবশিষ্ট থাকিবে । কিন্তু তাহাতে দুঃখ নাই, রমাপতির নিজের পয়সায় যদি হাত না পড়ে। ডাক্তার সেদিন আসিতেই রমাপতি জিজ্ঞাসা করিল, “ডাক্তার বাবু, জর ত ছাড়ল, কিন্তু এ যে ওঠেও না, হাটেও না, কত দিন আর এভাবে চলবে ? গরীবের ঘর, কাজকৰ্ম্ম করতে হবে ত ?” ডাক্তার বলিলেন, “আগে বাচুক মশায়, তারপর কাজকৰ্ম্ম । এ ত সহজ রোগ নয়, সারলেও বেশীর তাগ চিরকালের মত একটা না একটা উপসর্গ রেখে যায় । এর ত বোধ হচ্ছে ডান দিকটা অবশ হয়ে গেছে।” রমাপতি আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল, “কি সৰ্ব্বনাশ, কতদিন এমন থাকবে ?” ডাক্তার গম্ভীর ভাবে বলিলেন, “তা কি বলা যায় ? সময়ে সেরেও যেতে পারে," বলিয়া অতি অবিবেচকের মত প্রস্থান করিলেন। আরও কয়েকটা দিন কাটিয়া গেল। তরল উঠিয়া কাজ করিবার কোনও লক্ষণই দেখাইল না। সরযু আসিয়া বলিল, “দেখুন, ইনি ত সেরে উঠেছেন, মানে নসের আর কোনও দরকার নেই, ঝি দিয়েই কাজ চলতে পারে। আমার মাইনেটা যদি দিয়ে দেন ত আমি চলে যাই, আমার আর একটা ‘কল এসেছে।” রমাপতির মাথায় আকাশ ভাঙিয়া পড়িল। সরযু চলিয়া গেলে উপায় হইবে কি ? ঝি ত দুহাতে পয়সা চুরি করিবে, বাড়ীর জিনিষপত্রও যে না চুরি করিবে তাই বা বলা যায় কিরূপে ? তাহার উপর সে রান্না করিবে না, একটা রাধুনীও রাখিতে হইবে। সৰ্ব্বনাশ, থাইয়াই তাহারা রমাপতিকে পথে বসাইয়া দিবে। সে কাতরভাবে বলিল, “আরও দিনকতক থাকুন, তরি সেরে উঠুক।” সরবু বলিল, “ওঁর সারতে এখন ঢের দেরি, ন-মাস প্রবণসী $NetBS9 হতে পারে, বছর ঘুরে যেতে পারে। তত দিন আমি এখানে শুধু শুধু থাকলে লোকে বলবে কি ? আপনিই বা অত পয়সা খরচ করবেন কেন? একটা বিয়েই যখন চলে ।” তাই ত, মাসে ত্ৰিশটা করিয়া টাকা । এমন কোনও উপায় হয় না যাহাতে বিনা খরচে ইহাকে রাখা যায় ? সারারাত ভাবনায় রমাপতির ঘুম হইল না। উপায় ত সে ভাবিয়া পাইল, কিন্তু সরযুর কাছে বলিতে যে লজ্জা করে ? কিন্তু বলিতেই হইল। কারণ তাহার পরদিনও সরযু মাহিনা চাহিতে আসিল। রমাপতি মরিয়া হইয়া বলিয়া ফেলিল, “এ মাসে দিচ্ছি, কিন্তু পরের মাস থেকে আর দিতে পারব না।” সরযু গালে হাত দিয়া বলিল, “ওম, তা মাইনে না দিলে আমি থাকব কেন ?” রমাপতি বলিল, “এই, আমি বলছিলাম কি—যে একটা ব্যবস্থা করলে হয় না, যাতে মাইনে লাগে না ?” নস বলিল, “সে আবার কি ?” রমাপতি ঘামিতে ঘামিতে বলিল, “এই ধর আমি ষদি আপনাকে বিয়ে করি, তাহলে ত—” সরযু বলিল, “তা মাইনে লাগবে না বটে। তা আমি বিধবা মেয়ে আমায় বিয়ে করলে সমাজে খাটো হতে হবে না ?” রমাপতি বুক ফুলাইয়া বলিল, “বয়েই গেল, সমাজের আমি খাই না পরি ?” পাড়ার লোকে ছিছি করিতে লাগিল, ছুটে ভাইই অপদার্থ। একটা আনিল মেম, আর একটা করিল বিধবা বিবাহ। রমাপতি কিন্তু আনন্দে দিশাহীরা। বউ ঘরের কাজ ত করিবেই, উপরন্তু নসিং-জানা বউ, বাতের শুশ্রুষাও ভাল মতে করিবে । কিন্তু দুই দিন পরে বউ যখন মায়ের ঘরের লোহার সিন্দুক খুলিয়া এক গা গহনা পরিয়া আসিল, তখন রমাপতি ব্যস্ত হইয়া বলিল, “পরে না, অতগুলো প'রো না, সোনা ক্ষয়ে যাবে ” সরযু বলিল, “হ, পরব আবার না। ক্ষইবে বলে এয়োস্ত্রী মানুষ গহনা পরব না? অত কিপ্টেমী চলবে না।” রমাপতি দেখিল সব মুখস্বপ্নেরই অবসান আছে ।