পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া শ্রাস্ত দেহখানি একটা তক্তাপোষের উপর ঢালিয়া দিয়া হাই তুলিয়া বলিলেন, “ঠাকুরবি থাকলে এরই ভিতর একটা শৃঙ্খলার স্বষ্টি করতে পারতেন। আমি ত একেবারে কাজের বার। স্বধী, দেখ, দেখি মা, বাচ্চাটাকে অন্ততঃ একটু কাগজ টাগজ জেলে দুধটুকু গিলিয়ে দিতে পারিস কিনা। এর পর আবার দুধ পাব কিনা তাই বা কে জানে ?” একটা মেলিন্‌স ফুডের বোতলে খানিকটা ঠাণ্ড দুধ ক্রমাগত গাড়ীর নাড়া পাইয়া পাইয়া প্রায় ঘোল হইয়া উঠিয়াছিল, সেই মাখন-ভাসা দুধটা বালতির ভিতর হইতে বাহির করিয়া সুধা বলিল, “এটা কি ভাল আছে মা ? খোকনের যদি অম্লখ করে এটা খেয়ে ” মহামায়া থাটের উপর উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, “তবে দেখ, যদি টিনের বাক্সে ফুড, টুড়, কিছু থাকে। আমার ত বাছা পা দুটো এমন অবশ হয়ে গেছে যে টেনেও তুলতে পারছি না।” টিনের বাক্স খুজিতে হইল না। স্বধাদের কথাবার্তা পিছন হইতে শুনিতে শুনিতে যে প্রসন্নমূৰ্ত্তি ভদ্রলোক উঠিতেছিলেন তিনি বলিলেন, “থাক থাকু খুকী, আমি টাটুকা দুধ এনেছি। ছাতাটা খুঁজতে খুঁজতে এত দেরী হয়ে গেল যে ষ্টেশনে আর হাজিরা দিতে পারি নি। আমার অপরাধ মার্জন করবেন।” চন্দ্রকান্ত বলিলেন, “ছাতি-হারানোর পর্ব আর আপনার এ-জীবনে মিটল না।” সে কথার উত্তর না দিয়া ভদ্রলোক বলিলেন, “নৃতন বাড়ীতে উচুন টুম্বন কিছু আছে কি খুকী ? দুধটা ত জাল দেওয়া হয় নি ।” শিবু মাঝখান হইতে ফোড়ন দিল, “দিদির নাম ত খুকী নয়, ও স্বধ " ভদ্রলোক বলিলেন, “বাং, দিব্যি ত মিষ্টি নামটি তোমার, আমার সঙ্গে মিলও আছে, আমার একটুখানি বাকিয়ে স্বধীন্দ্র। আর কাজেও আমি তোমার চেয়ে কিছুমাত্র কম নয়, ফুড তৈরি করতে পারি না মনে করছ ? আমি ভাতও রাধতে পারি। একদিন তোমাদের রোধে খাওয়াব।” অলখ-বে।ণরণ ২১১ স্বধা গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, কিন্তু নীরবে এমন করিয়া পরাজয় স্বীকার করিতে সেও রাজি হইল না, বলিল, “ও, ভারি ত, ভাত ডাল মাছের ঝোল, কুলের অম্বল, সবই আমি রাধতে পারি। আপনি মাকে জিগগেষ করুন।” মহামায় বলিলেন, “তা ও সত্যিই বলেছে। আমি ত অকৰ্ম্মার একশেষ, মেয়ে কিন্তু আমার খুব কাজের । ছেলেটাকে ত ওই মানুষ করলে।” শিবু বিচক্ষণ বিচারকের মত মুখ করিয়া বলিল, “মেয়ে মানুষরা ত সবাই রান্না করে, কিন্তু বাবুরা ত আর করেন। বাবা ত কিছু রণধতে পারেন না, খালি খান ।” চন্দ্রকাস্ত বলিলেন, “সত্যি, এমন অনধিকারচর্চা আমার করা উচিত নয়, তবে শিবুও বিবর্তনের কল্যাণে এ বিষয়ে পিতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব যে হয়েছে তা বলতে পারি না । সুতরাং জয়টীকাটা স্বধীনবাবুরই প্রাপ্য ।” স্বধা বলিল, “দুধের বাসনটা দিন, আমি কাগজ জেলে গরম করে ফেলি একপেীয়া, নইলে খোকা ভীষণ চেচাবে।” স্বধীনবাবু বলিলেন, “আগুন জালতে গিয়ে কাপড়ে যেন ধরিয়ে বোসো না, সাবধান ।” স্বধা হাসিয়া বলিল, “কি যে বলেন, আমি কি কচি খুকী ” শিবু বলিল, “দিদি বারো পূরে তেরোয় পা দিয়েছে, আমার চেয়ে তিন বছরের বড়, খোকনের চেয়ে সাড়ে-ল’ বছরের ” স্বধীন্দ্রবাবু বলিলেন, “তুমি ত দেখছি খুব ভাল আঁক কযতে পার, না খোক ?” - শিবু বলিল, “খুব ভাল পারি না, দিদিই বেশী ভাল পারে, তবে আমি মিশ্র যোগ বিয়োগ শিখেছি, আর ইস্কুলে ভৰ্ত্তি হলে আরও অনেক শিখে ফেলব। কিন্তু রামায়ণ মহাভারত মুখস্থ আমি দিদির চেয়ে ভাল করতে পারি। ‘রে রে বক নিশাচর আয় রে সত্বর । এত বলি ডাকে ভীম বীর বৃকোদর । আপনি মুখস্থ বলতে পারেন " স্বধীন্দ্রবাৰু ভীত মুখ করিয়া বলিলেন, “না, ও সব বিদ্যে আমার নেই। তবে খাওয়ার পরীক্ষা যদি নাও ত বৃকোদরের সঙ্গে পাল্লা দিতে আমিও পারি।”