পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগ্ৰছায়ণ বলিল—“আসল কথা হচ্ছে, তোমার এ-এ্যাটিটিউড় টুকু আমার জীবন-স্বপ্নের সঙ্গে বড় মিলে গেছে —যা-কিছু পুরাতন, যুগজীর্ণ—ব্যক্তিগত রুচিতে, সামাজিক আচারে বা ধর্মের ছদ্মনামে—সে-সমস্তর বিরুদ্ধেই আমার অভিযান, আমি সে-সমস্তকেই ঘা দেব । এ-অভিযানের পথে যারা আমার সঙ্গী, আমার কমরেড, তাদের ওপর যে আমার কত শ্রদ্ধ, তা প্রকাশ করে বলবার ভাষা নেই, অর্চনা।” শেষ পৰ্যন্ত অৰ্চনাকেও কথাগুলা স্পর্শ ন-করিয়া পারিল না; মেয়ে হইলেও, এই যুগের মেয়ে ত—এই যুগের অগ্রণী মেয়ে ? বলিল—“আমি বিদ্রোহের কথা বলতে পারিন বিমলবাবু, তবে মেয়েদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থাতে আমার মন সায় দিল না ; কলেজের মধ্যেও যেন মোগল-হারেমের রুদ্ধ হাওয়ার গুমটে আমি হঁাপিয়ে উঠলাম ; আমার জীবন-দেবতা আমায় এই পথ দেখিয়ে দিলেন, আমি প৷ বাড়াতে দ্বিধা করলাম না। আমি বিদ্রোহী কিনা জানি না, তবে আমি যে দ্বিধা-সঙ্কোচ ঠেলে আপনাদের সঙ্গে এসে দাড়ালাম, এটা করলাম আমি চিরদিনের বঞ্চিত, সমগ্র নারীর অভিযোগ হিসেবেই ..” বলিতে বলিতে মুখটা তাহার দীপ্ত হইয়া উঠিল। এ-ভাবটা কিন্তু বেশীক্ষণ স্থায়ী হইল না—হইবার কি কথা ? ফাঙ্কনের হাওয়ার মধ্যে মাঝে মাঝে যেমন একটা চৈতীর হস্কা বহিয়া যায় এও সেই রকম। একটু পরে আবার অর্চনার দৃষ্টি নরম হইয়া আসিল। একটু যেন অভিমানের স্বরে অমুযোগ করিল— “আপনারা আমাদের কতই না বঞ্চিত করছেন দেখুন ত!— এই চমৎকার নীল আকাশ, মুক্ত হাওয়া, জল-স্থলের এই কত রকম সৌন্দৰ্য্য, চারিদিকের কত বিচিত্র জীবন,”পুরুষের বিরুদ্ধে আমাদের নালিস কি ... বিমলেলু হঠাৎ বাধা দিয়া প্রতি-অনুযোগের স্বরে বলিল—“আমি বঞ্চিত করেছি অৰ্চনা ?” অৰ্চনা একটু লজ্জিত হইয়া পড়িল ; বলিল—“ন, আপনার কথা বলছি না ; আপনি ত আমায় এর সদ্ধান দিয়ে নিয়েই এলেন, আমি বলছি সাধারণ স্ত্রীজাতি আর পুরুষের কথা । ভাবুন ত আমাদের মেয়েরা কতটা বঞ্চিত থাকে !” বিমল বলিল—“তারা ইচ্ছে করেও থাকেন অনেকটা ” প্রবঞ্চনা RSS “কেন ? "ধর, তুমি ত রোজ এখানে একবার করে আসতে পীর ; কই, আসবে ?” অৰ্চনা একটু হাসিয়া বলিল—“কলেজ কামাই হবে যে ” * বিমল বলিল—“আমি পারি,—যদি এ-রকম পরিপূর্ণ সৌন্দর্ষ্য পাই অৰ্চনা। বরং কলেজে বসেই আমার মনে হয় আমি এখান থেকে কামাই ক’রছি।” - ‘পরিপূর্ণ কথাটার উপর জোর দিল এবং পরে বলিল— “তোমরা বাধন ভালবাস অর্চনা ; হাজার সৌন্দর্য্যের জন্যও বাধন কাটাতে নারাজ।” আর একটু পরে সামনের পুপস্তবকের উপর নজর রাখিয় বলিল—“বোধ হয় তোমরা নিজের মধ্যেই পরিপূর্ণ বলে সন্তুষ্ট এবং তৃপ্ত থাক।” অৰ্চনা মুখ ঘুরাইয়া লইল, তেমন ভাবেই প্রশ্ন করিল— “সবাই কি ?” —তাহার উদ্দেশ্য ছিল বলা—“সবাই কি সন্তুষ্ট থাকে ?” বিমলেন্দুর মনের স্বর আরও উচু পর্দায় বাধা ; চোখাচোখি না-থাকায় সাহসের সহিত বলিল—“অন্তত তুমি ত নিশ্চয়।”—তাহার অর্থ ছিল—“তুমি ত নিজের মধ্যেই নিজে সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ।” অৰ্চনা বইগুলা কোলে তুলিয়া লইল ; বিমলেন্দুর কথাটাকে নিজের মনোগত প্রশ্নের উত্তর ভাবিয়া একটু হাসিয়া বলিল—“আপনি ভুল বলছেন বিমলবাবু।” বিমল একটু জেদের সহিত বলিল—“ন, বলছি না ভুল, অৰ্চনা ; কোথায় তোমার অপূর্ণতা, বল—কিসে?” অৰ্চনা নিজের ভ্রমটা বুঝিতে পারিয়া লজ্জায় রাভিয়া উঠিল। অনেক চেষ্টা করিয়া, বিমলের দিকে একবার মাত্র চাহিয়া বলিতে পারিল—“কোথাকার কথা যে কোথায় এসে পড়ল !...•• উঠবেন না ?—আমার গাড়ী বোধ হয় কলেজে এসে গেছে এতক্ষণ * বিমলেন্দু ডাকিল—“রুচি ” নূতন কাহাকেও ডাকিল না, সে আজকাল অৰ্চনাকে