পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত “লেখন” ঐীপ্রভাতচন্দ্র গুপ্ত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধলেখা এবং দেশের দাবী মেটাবার ফাকে ফাকে রবীন্দ্রনাথের কাছে স্ব-লেখন ( autograph ) দেবার যে দাবী আসে প্রতিদিন, তাকে নেহাৎ ছোট বলে উপেক্ষ করা চলে না। শুধু স্বাক্ষর দিয়ে তার নিষ্কৃতি নেই, সেই সঙ্গে কবিতাও 5श् िछ्-5ांब्र লাইন। এই দুরন্ত দাবীর ফলে কত ছোট ছোট কবিতা যে রচিত হয়েছে, তার কোন হিসেবই নেই। তার মধ্যে মাত্র কতকগুলি “লেখন" নামক বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। “লেখনে”র ভূমিকায় কবি বলেছেন— “পাখায় কাগজে রুমালে কিছু লিখে দেবার জন্যে লোকের অনুরোধে এর উৎপত্তি । তার পরে স্বদেশে ও অন্ত দেশেও তাগিদ পেয়েছি। এমনি করে এই টুকরো লেখাগুলো জমে উঠল। এর প্রধান মূল্য গতের অক্ষরে ব্যক্তিগত পরিচয়ের। সে পরিচয় কেবল অক্ষরে কেন, দ্রুতলিখিত ভাবের মধ্যেও ধরা পড়ে ।” এই “দ্রুতলিথিত ভাব”গুলি বাংলা-সাহিতো পরম উপভোগ্য বস্তু হিসাবে চিরকাল একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার ক'রে থাকবে। বড় বড় ঘটনার চেয়েও অকিঞ্চিৎকর সামান্য ব্যাপারে অনেক সময়েই লোকের চরিত্র বেশী প্রস্ফুট হয়। এই দিক দিয়ে দেখতে গেলে সামান্যকে সামান্য বলে তুচ্ছ করা যায় না। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই কথাটি প্রযোজ্য। কবির নিজের ভাষায় বলতে গেলে, “স্বল্প সেও স্বল্প নয় বড়োকে ফেলে ছেয়ে"। রসম্বষ্টির জন্য সব সময়ই যে বৃহৎ আয়োজন করতে হয়, এমন নয়, ইতস্তত-ছড়ানো টুকরো লেখাতে “দ্রুতলিখিত ভাবে"র ভিতর দিয়েও কবি আপনার স্বম্পষ্ট পরিচয় রেখে যান। রবীন্দ্রনাথের ছোট লেখাগুলি পড়লেই এর সত্যতা হৃদয়ঙ্গম হয়। এই ছোট ছোট কবিতাগুলির একটি বৈশিষ্ট্য আছে, বার জন্য এদের এত ভাল লাগে। এগানে আটলাট বাধুনি, কথার সঙ্কীর্ণ সীমার মধ্যে ভাববিস্তারের সুযোগ একেবারে سسیت-۹ নেই বললেই চলে। সকল রকম বাহুল্য অলঙ্কার আড়ম্বরের লোভ পরিপূর্ণভাবে বর্জন করে অত্যন্ত সংক্ষেপে শুধু মর্শগত রসটি দেওয়া চাই। এইরূপ বন্ধনের মধ্যে লেখককে সফল হতে হলে তার অত্যন্ত পাকা হাত, স্বল্প দৃষ্টি এবং গভীর অনুভূতি থাক চাই, নতুবা রচনাগুলি শুষ্ক তত্ত্বকথায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়বার যথেষ্ট আশঙ্কা। রবীন্দ্রনাথের লেখনগুলি যে এই পৰ্য্যায়ে পড়ে না, সে-কথা ব্যাখ্যা ক’রে বুঝিয়ে দেবার প্রয়োজন হয় না, হৃদয় দিয়েই অনুভব করা যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে, কবিতাগুলির মধ্যে একটি । অপূৰ্ব্ব ব্যঞ্জন আছে। কথা তার সীমাকে অত্যন্ত সহজে । ছাড়িয়ে গেছে, পড়লেই মনে হয় যে, যা বলা হয়েছে, আসলে । যেন বলা হ’ল তার চেয়ে অনেক বেশী । মিলন নিশীথে ধরণী ভাবিছে চাদের কেমন ভাষা, কোনো কথা নাই, শুধু মুখ চেয়ে হাসা , তিন লাইনের ছোট একটি কবিতা, কিন্তু এর গুটিকয়েক , কথা আমাদের মনে যে-ছবি একে দেয়, তার সৌন্দর্ঘ্য এবং ' অন্তলীন ভাবাবেগের যেন আর শেষ নেই। : রবীন্দ্রনাথ তার জীবনে আজ পর্যন্ত কত জায়গায় কত লোকের অটোগ্রাফের খাতায় এই ধরণের কত ছোট । ছোট কবিতা যে লিখে দিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলিকে একত্র সংগ্রহ করতে পারলে নিঃসন্দেহ সকলেরই ৷ উপভোগ্য হ’ত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, “লেখন" প্রকাশ ছাড়া , । এরূপ প্রচেষ্টা আর কখনও হয় নি। সম্প্রতি এই জাতীয় । তার কতকগুলি অপ্রকাশিত কবিতা আমরা সংগ্রহ করতে । পেরেছি, পাঠকবর্গকে তারই পরিচয় দিতে চাই। খ্যাতনাম ব্যক্তিদের স্বাক্ষর ও লেখন সংগ্রহ করে অটোগ্রাফের খাতা বোঝাই করা ইদানীং একটা নেশা ও সংস্কারগত অভ্যাসের মত অনেকের কাছে দাড়িয়ে গেছে। "