পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিল ফাকি, তবু রাখি আশ, গেল পাখী, তবু বাকি বাসা। কবির চির-নবীন অস্তরে বাৰ্দ্ধক্যের স্থবিরতা কোন দিন ছায়াপাত করতে পারে নি। কিন্তু এই “নবীন” ষে ধ্রুব, প্রশাস্ত এবং সংযত, ক্ষণস্থায়ী “নৃতনে”র উন্মাদনা তাতে নেই, একটি ছোট কবিতাতে তা পরিস্ফুট হয়েছে— নূতন সে পলে পলে অতীতে বিলীন, যুগে যুগে বর্তমান সেই ত নবীন। তৃষ্ণ বাড়াইয়া তোলে নূতনের মুরা, নবীনের চির-মুধা তৃপ্তি করে পুরা। রূপে ও অরূপে গাথা এই ভুবনের আঙিনায় যেখানে ছবি ও গানের নিত্য কানাকানি চলছে, কবি সেখানে বসে আছেন কোন ধ্যানে মগ্ন হয়ে, ছন্দের সঙ্গীতে তিনি কোন গোপন কথাটি ঝঙ্কৃত করে তুলতে চান, তার আভাস পাই আমরা কয়েকটি কবিতায়— রূপে ও অরূপে গাথা এ ভুবন খানি ভাবে তারে সুর দেয়, সত্য দেয় বাণী । এসো মাঝখানে তার, আনো ধ্যান আপনার ছবিতে গানেতে যেথা নিত্য কানাকানি। আকাশে বাতাসে ভাসে, অতলের নির্জনে নিৰ্ব্বাকে গুপ্ত রহে, পাই নাকে ছুতে, ছন্দের সঙ্গীতে তারে ধরিবারে কবি বসে থাকে ধরা যাহা দেয় না কিছুতে । ক্লান্ত মোর লেখনীর এই শেষ আশা নীরবের ধ্যানে তার ডুবে যাবে ভাষা। বহিয়া কথার ভার চলেছি কোথায়, পথে পথে খসে পড়ে হেথায় হোথায়, পথিকেরা কিছু কিছু লয় তাহা তুলি বাকি কত পড়ে থাকে, লয় তাহ ধুলি প্রকাশ যখন সফলতায় সার্থক, তখন তা সহজেই আমাদে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার প্রারম্ভ থাকে ক্ষীণ, অসম্পূর্ণ কিন্তু পূর্ণতার জন্য যে অশান্ত ক্ৰন্দন তার বুকে গোপ:ে উচ্ছ্বসিত, কবি তাকে আপন মনে অনুভব করতে চান, যদি আমাদের মনোযোগ সহজে সেদিকে যায় না। ধরণীর আন ও প্রাণের উৎস সঞ্চিত আছে স্বধ্যালোকে, রবির আশীৰ্ব্বা কুঁড়িকে ফোটায় ফুলে, অঙ্কুরকে উদঘাটিত করে বনস্পতিরূপে কবি রবীন্দ্রনাথও কি তার আকাশের মিতার মত আপ অসীম অনুভূতির আলোক ও জীবনীশক্তি দিয়ে মামুষে প্রাণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে তার উদ্ভিন্ন শতদলে বিকশি করে তুলতে চান ? যে ফুল এখনো কুড়ি তারি জন্মশাখে রবি নিজ আশীৰ্ব্বাদ প্রতিদিন রাখে। এখনো অঙ্কুর যাহা তারি পথপানে প্রত্যহ প্রভাতে রবি আশীৰ্ব্বাদ আনে । ফুলের কলিকা প্রভাত-রবির প্রসাদ করিছে লাভ, কবে হবে তার হৃদয় ভরিয়া ফলের আবির্ভাব । হিমাদ্রির ধানে যাহা স্তব্ধ হয়ে ছিল রাত্রি দিন সপ্তর্ষির দৃষ্টিতলে বাক্যহীন শুভ্রতায় লীন সে তুষার নিঝরিণী রবিকরষ্পর্শে উচ্ছসিতা দিগ দিগন্তে প্রচারিছে অন্তহীন আনন্দের গীতা ।