পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন নয়। অন্ধস্থ মানুষের মত অকস্মাৎ বিছানায় গিয়া গুইয়া পড়িতে তিনি যেমন অভ্যস্ত, “ভাল আছি” বলিয়া পরক্ষণেই উঠিয়া পড়িতেও তিনি তেমনই প্রস্তুত। কাজেই আজ, অক্ষতৃতীয়ার সন্ধ্যায়, তিনি শষ্যাগ্ৰহণ করিলে ব্যস্ত হইবার কারণ কেহ দেখিলেন না। কিন্তু পূর্বের অনুস্থতার মত তার আজকার অন্ধস্থত কাল্পনিক ত নয়ই, অল্পস্থায়ীও নয়—সকালবেলা তাহা জানা গেল, এবং জানিবামাত্র নিঃসন্দেহ হইতে হইল। দেখা গেল, তিনি জরে বেস্থস হইয়া আছেন। চিকিৎসার জন্য ব্যস্ততার সহিত ডাকা হইল কবিরাজ মহাশয়কে । ব্যস্ততা যতই থাকৃ, সৰ্ব্বাগ্রে মনে পড়িবে কবিরাজ মহাশয়কেই—কারণ, তিনি সস্তা। দরকারী জিনিষ সস্তায় যেখানে পাওয়া যায়, সৰ্ব্বাগ্রে সেই দিকে দৌড়ানই যাহাদের পক্ষে সঙ্গত, জন্মেজয় সগোষ্ঠী তাহাদেরই একজন। একটি টাকা দিলেই কবিরাজ মহাশয় সন্তুষ্ট হইবেন। অর্থাৎ ডাক্তারীর জাক আর চাক্‌চিক্যের তুলনায় তাহাকে খাটাে করিয়া তুলিয়া লোকে তাহাকে উহাতেই সন্তুষ্ট হইতে শিক্ষা দিয়াছে। ভিজিট এবং তখনকার মত ঔষধের মূল্য, এই দুইয়ের বাবদ একটি টাকাই তাহার প্রাপ্য। কিন্তু তাই বলিয়া, অর্থাৎ সস্ত এবং অল্পেই সন্তুষ্ট হইতে বাধ্য বলিয়া মহীতোষ কবিরাজ বিজ্ঞ কম নন। --সাদ কাপড় লাগান ছাতাটা চালে টাঙাইয় তিনি রোগীর কাছে গেলেন, এবং রোগীর নাড়ী পরীক্ষা করিয়া বলিলেন,—বাতজ পক্ষাঘাত। কঠিন রোগ। এখন প্রবল জর রয়েছে— এই জর হ্রাস পাওয়ার সময় সাবধান। স্নায়ুমণ্ডলী নিক্রিয় হয়ে আসছে। তবে ওষুধ আমি দিচ্ছি। ভয় কাটলেও কাটতে পারে এ-যাত্রা। --বলিয়া মুচিস্তিত ঔষধ দিয়া এবং ভিজিট ও ঔষধের মূল্য বাবা একটি টাকা লইয়া তিনি নিদারুণ নি:শব্দে প্রস্থান করিলেন। থলে মাড়িয়া ঔষধ রোগীর মুখে দেওয়া হইল—রোগী তাহা গলাধঃকরণ করিলেন ; কিন্তু কবিরাজের উক্তি যে অত্যুক্তি নয়, আশা যে তিনি দেন নাই, তাহ সহজেই উপলব্ধি করিয়া জন্মেজয়ের আপনার লোকগুলি কত যে ভয় পাইল তাহা বলিবার নয়। মা বলিলেন,—এই ত কবরেজ দেখে গেল। একটা দিন দেখবি নে ? —ষা বল তাই করি। —আমি বলি দেখ একটা দিন। কবরেজী ওষুধ ভ একেবারেই মিথ্যে নয় - ডাক্তারের যে খরচ ঢের । বলিয়া রাজলক্ষ্মী নিজেদের অপ্রচুর অবস্থাটা তীক্ষভাবে অনুভব করিয়া সংজ্ঞাহীন স্বামীর দিকে চাহিয়া নিম্পলক হইয়া রহিলেন---অতঃপর বক্তব্য আর কিছু আছে বলিয়া তাহার মনে হইল না । কিন্তু ডাক্তারকেই ডাকিতে হইল। মধ্যাহ্নে জন্মেজয় চোখ খুলিলেন ; সচেতন দৃষ্টিতে সকলের মুখের দিকে তাকাইলেন ; জিজ্ঞাসা করিলেন,—ওষুধ দিচ্ছ নাকি ? গৃহিণীর মুখের দিকে তাকাইয়াই তিনি প্রশ্ন করিলেন, জবাব দিলেন গৃহিণীই—মাথা নাড়িয়া জানাইলেন, ঔষধ দেওয়া হইতেছে। জন্মেজয় বলিলেন,—আর দিও না • হরিনাম শুনাও —বলিয়া কিসের জন্ত যেন উংস্থক হইয়া” তিনি একদৃষ্টে চাহিয়া রছিলেন—পুনৰ্ব্বন্ধ কাদিয়া বাহির হইয়া গেল, রাজলক্ষ্মী আঁচলে চোখ মুছিলেন। জন্মেজয় আবার চক্ষু মুদ্রিত করিলেন বলিলেন,— আমার শিয়রে বসে কে রে ? —আমি । —অমলা ? —ই্য, বাবা । —আর পাখা করিসূ নে । হরিনাম শোনা । অমলা পাখা বন্ধ করিয়া তার মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। রাজলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিলেন,—এখন কেমন বোধ করছ ? জন্মেজয়ের কোন অঙ্গ সাড়া দিল না—প্রশ্নটি তিনি শুনিতেই পান নাই বোধ হয়। কিন্তু জন্মেজয়কে এই অপরিণত সময়ে হরিনাম কেহ শুনাইল না; পুনৰ্ব্বন্ধ খরচের কথা সম্পূর্ণ বিস্তুত হইয়া