পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহারা দু-জন বসিয়া আছে—সে নড়িতে অশক্ত ; দ্বিতীয় ব্যক্তি একটি মাংসময় প্রেতাত্মার মত যেন অভিশাপ-মুক্ত হইতে অনভ্যস্ত মুদ্রায় অজ্ঞাতের আরাধনায় বসিয়াছে' অর্থাৎ নিজেকে একান্ত নিরুপায় এবং আহাররত স্বচাদকে তার বিত্ৰ মনে হইতে লাগিল। তা হোক, স্বচাদের তাতে ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। সহজে পরিপাক হইবে বলিয়া সুচাদ প্রতিটি গ্রাস বত্রিশ বার চিবাইয়া কাচাগোল্লা ক'টি শেষ করিলেন—তার পর মুখ ধুইয়া ফেলিয়৷ চায়ের কাপ তুলিয়া লইলেন, এবং কতবার যে গলাখণকারি দিলেন তাহার ইয়ত্ত নাই। চুমুক দিয়া দিয়া অল্পে অল্পে চা-পান চলিতে লাগিল... এবং পুনৰ্ব্বস্তুর মনে হইতে লাগিল, সময় চলিতেছে না, চা শেষ হইবে না...তাহার পিতা মুমূর্ষ। কিন্তু অসম্ভব কল্পনা করিলে চলিবে কেন ? স্বর্চাদের চা-পান অচিরেই শেষ হইল। স্বচাদ উঠিয়া দাড়াইলেন— বলিলেন,—একটুখানি এক ব’স ; আমি চট করে বাড়ীর ভেতর থেকে কাপড় বদলে জামাটা পরে আসি। ভদ্রলোক ত! তেমনই সেজে বেরুতে হবে।—বলিয়া হাসিতে হাসিতে তিনি উঠানে নামিলেন••• পুনৰ্ব্বস্তু বলিল,—ধে-অাঙ্গে । স্বচাদ অন্তঃপুরে অদৃগু হইতেই পুনৰ্ব্বস্তু উঠিয়া দাড়াইল— হঠাৎ যেন সে ছিটকাইয়া উঠিল । সময়কে এত দীর্ঘ, মানুষকে এমন অসহ, আর নিজেকে এমন ক্ষিপ্ত আগে কখনও তার মনে হয় নাই-সহিষ্ণুতার পরীক্ষায় টানে টানে যেন ছিড়িয়া যাইতে যাইতে তার বৃথাই মনে হইতে লাগিল, এই যন্ত্রণার স্থতি চিরজীবী হইয়া রহিল, এবং এই অবহেলার প্রতিশোধ লইতেই হইবে। পুনৰ্ব্বন্ধ স্তন্ধ হইয়া একই স্থানে খালি দাড়াইয়াই ছিল--- "এখনও ঢের রোদ রয়েছে।”—বলিয়া স্বচাদ কাপড় বদলাইয়া এবং জামা পরিয়া, অর্থাৎ ভদ্রলোক সাজিয়া, বাহির হইলেন। বেলা তখন সাড়ে তিনটের পর প্রায় পাচটা । পথে পরিচিত লোকের কাছে কুশল-বাৰ্ত্তা দিতে দিতে এবং লোকের কুশল-বাভা লহতে লহতে স্বচাদ পুনৰ্ব্বস্থর সমভিব্যাহারে রোগী জন্মেজয়ের কাছে আসিয়া পৌছিলেন--- পথের শেষ তথা আলাপের শেষ আছেই। স্বচাদ জ্ঞান-বিজ্ঞান একত্র করিয়া রোগ পরীক্ষা করিলেন—আশা দিলেন—চার টাকা ডিজিট লইলেন এবং চারখানা ব্যবস্থাপত্র লিখিলেন• • • মুচাদ কিন্তু ধন্ত ডাক্তার। প্রতি দাগ দেড়-আনা হিসাবে দাম দিয়া তিন ' শিশিতে ষোল দাগ ঔষধ আনিয়া পুনৰ্ব্বস্তু পিতাকে সেবন করাইয়াছে - সৰ্ব্বাঙ্গে মালিশ করিবার জন্য যে ঔষধের ব্যবস্থা মুচাদ করিয়াছিলেন তাহাও যথাসাধ্য মালিশ করা হইয়াছে— এবং সম্ভবতঃ তাঁহারই ফলে সকালবেলা দেখা গেল, রোগীর অবস্থার উন্নতি হইয়াছে—একেবারে অসাড় নিজীবতা তেমন নাই ; দু-চারিটি কথা কহিতেছেন ; এমন কি, খানিক পথ্য ও ডালিমের রস পান করিলেন । কিন্তু তার গায়ের উত্তাপ কমে নাই বলিয়াই রাজলক্ষ্মী অনুমান করিলেন—গায়ে হাত দিয়া তাহাই মনে হইতেছে। সমস্ত দিনটা ভাল ভাবেই কাটিল...সন্ধ্যার পর হঠাৎ দু-চারিটি কথা ভুল বলিলেও সে ঘোরটা কাটিয়া যাইতে বিলম্ব হইল না। কিন্তু সঙ্কট উপস্থিত হইল ভোরের দিকে। রাজলক্ষ্মীর আতঙ্কের অবধি ছিল না—দুরন্ত হৃৎকম্প লইয়া তিনি স্বামীর অবস্থা লক্ষ্য করিতেছিলেন ; ভয়ে ভয়ে পা ছুইয়াও পরীক্ষা করিতেছিলেন, ঠাণ্ডা না গরম !--ভোরের দিকে স্বামীর গায়ে হাত দিয়া তিনি চমূকিয় উঠলেন ; মনে হইল পাঠাও। গায়ের উত্তাপ ঢের কম। রাত্রি তখন পৌনে চারটে—গ্রীষ্মের রাত্রি প্রভাত হইতে বিলম্ব নাই। পুনৰ্ব্বক্ষকে মা গুইতে পাঠাইয়াছিলেন ; তাহাকে ডাকিয়া তুলিলেন--- -- পা ঠাণ্ড গুনিয়া সে উৰ্দ্ধশ্বাসে স্বচাদের কাছে ছুটিল।