পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ন রাস্ত ছুটিয়া আসিল । হরিসাধনের জামাই লোকনাথের কঠিন রোগ হইয়াছিল। লোকনাথ কলিকাতায় থাকে— রোগ জন্সিয়াছিল কলিকাতাতেই ; কিন্তু কলিকাতার ডাক্তারগুলি এমন অৰ্ব্বাচীন যে, রোগ চিনিতেই পারে নাই—চিকিৎসায় প্রবৃত্ত হওয়া ত অনেক দূরের কথা ; অথচ–হরিসাধন রাগ করিয়া বলে—পেস্ট লান পরার সর্থটুকু আছে! স্বর্চাদের প্রতি হরিসাধনের পূর্ব হইতেই শ্রদ্ধা অশেষ, বিশ্বাসও অগাধ • • সে জামাইয়ের বাপ মায়ের নিষেধ কৰ্ণপাত না করিয়া এমন কি তাদের অপমান করিয়াই, জামাইকে এখানে আনিয়া স্নচাদের হাতে সমর্পণ করিল— বলা বাহুল্য, স্বচাদ তাহার মুখরক্ষা করিয়াছেন, এবং কলিকাভার যাবতীয় পেস্ট লান-পর চিকিৎসকের মুখে চূণকালি লেপন করিয়া দিয়াছেন—অর্থাৎ লোকনাথ সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিয়া গত পরশ্ব অন্নপথ্য করিয়াছে । কাজেই হরিসাধন দৌড়াইয়া আসিয়া স্বচাদের পদধূলি লইয়া মাথায় দিল ; কিন্তু স্বচাদের পায়ে আদৌ ধুলা নথাকায় হরিসাধনের চুলে ধুলা লাগিল না--- স্বচাদ প্রফুল্লকণ্ঠে জানিতে চাহিলেন,—জামাই কেমন আছে ? হরিসাধন গদগদ হইয়াই আসিয়াছিল ; আরও গদগদ হইয়া বলিল,—ভাল আছে। ভাগ্যে আপনার হাতে দিয়েছিলাম—আমার মেয়েটির শাখা-সিদ্ধর বজায় থাকূল । হরিসাধনকে বিচলিত দেখিয়া স্বর্চাদ বলিলেন,—সে-কথা যাক রোগের মূল ছিল পেটে, মাথায় নয়। পেটের চিকিৎসায় আমাদের আয়ুৰ্ব্বেদ খুব সক্ষম।—বলিয়া তিনি আয়ুৰ্ব্বেদ এবং এলোপ্যাথিকে মিশ্রিত করিয়া এমন অনেক গুঢ় কথা বলিতে লাগিলেন যা, না বলিলেও চলিত ; এবং যাহা শুনিয়া পীতবাস, রামকমল এবং হরিসাধন প্রভৃতি একটা অজ্ঞাত জিনিষের অদ্ভূত ক্ষমতার সহিত পরিচয়ে স্তম্ভিত হইয়া গেল । তার পর স্বচাদ বলিলেন,—আচ্ছ, উঠি এখন। রুগীর বাড়ী যেতে একটু তাড়া আছে। স্বচাদভাক্তারের বিভূতি ইকৰ পীতবাস বলিলেন,—ও, তবে ত উঠতেই হয়। কি আপনাকে ছাড়তে ইচ্ছে হয় না । স্বচাদ এই কথায় সম্ভষ্ট হইয়া একটু হাসিলেন, তার প উঠিয়া রওনা হইলেন ৮- ख খানিক এদিকেই পূৰ্ব্বকথিত এবং প্রতিশ্রত আঙুরে দোকান। স্নচাদ সেই দোকানে দাড়াইলেন-- এক বাস্থ আঙুরের ভিতর হইতে সন্তপণে একটি আঙর তুলিয় লইয়া তিনি মুখে নিক্ষেপ করিলেন--মিষ্ট কিম্বা কষায় কিম্ব টক্ তাহা ঠিক করিতে ন পারায় আর একটি বাক্স লইয়৷ তাহারও একটি চাথিয়া দেখিলেন–মিষ্ট লাগিল-আজুরের সেই বাল্পটি তিনি দরদপ্তর পূর্বক ক্রয় করিলেন--- দোকানীর চিন্তাকুল প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানাইলেন, আঙুরের প্রয়োজন গৃহস্থ কোনও রোগীর জন্য নহে – আঙুরের বাল্প মানিবেন বলিয়া খুকুকে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন আসিয়াছেন । সুতরাং আঞ্জুর লইতেছেন। আঙুর কেন হইল— সেই আঙুরের বাক্স হাতে করিয়া এবং আপামর বহু লোকের শরীরগত সুখ-সুবিধার তল্লাস লইতে লইতে যখন স্বচাদ পুনৰ্ব্বস্থর বাবাকে দেখিতে পুনৰ্ব্বস্বদের বাড়ীর সম্মুখবর্তী হইলেন তখন বেলা প্রায় এগারটা। স্বচাদের লাল রঙের ঔষধে এবং কবিরাজের বটিকায়, ঋষি-নিদিষ্ট নগদ বটিকায়, ফল হয় নাই ; কাজেই স্বচাদ যখন জন্মেজয়কে দেখিতে আসিলেন তখন বঁাশ কাটিয়া আর দড়ি পাকাইয়া মচি প্রস্তুতের কার্য্য দ্রুতবেগে এবং অন্তঃপুরে ক্ৰন্দন নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলিতেছে--- স্বচাদ থম্কিয়া দাড়াইলেন— পুনৰ্ব্বস্ব তাহাকে দেখিতে পাইয়া বিষন্ন মুখে অগ্রসর হইয়া গেল— স্বচাদও বিমর্ষ মুখে তার কৰ্ত্তব্য করিলেন ; বলিলেন,— ঘটুবে বলেই যে-সব ব্যাপার একটা চূড়ান্ত নিয়মের অন্তভুক্ত অবস্থায় ধাৰ্য্য হয়েই আছে, মৃত্যুই তার মধ্যে সব চাইতে অনিবাৰ্য্য—তা ত জান -- আচ্ছা, এখন আসি। বলিয়৷ তিনি যেমন নিৰ্ব্বিকারভাবে আসিয়াছিলেন ঠিক তেমনি নিৰ্ব্বিকারভাবে প্রস্থান করিলেন।