পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তন্ত্র ও বাঙালী ঐচিন্তাহরণ চক্রবর্তী অনেকের ধারণী—তন্ত্রশাস্ত্রের সহিত বাংলাদেশের সম্বন্ধ যেরূপ ঘনিষ্ঠ ভারতের অন্য কোন প্রদেশের সহিত সেরূপ নহে। বাংলা দেশেই তন্ত্রশাস্ত্রের উৎপত্তি—এই দেশেই এই শাস্ত্রের আচার পরিপুষ্ট লাভ করিয়া অনেক ক্ষেত্রে বীভৎস ভাবের স্বষ্টি করিয়াছিল—বাংলার বাহিরে তান্ত্রিক উপাসনার প্রচলন থাকিলেও তাহা অতি বিরল ও নগণ্য—এইরূপ মতবাদ দেশের শিক্ষিত সমাজের মধ্যেও স্বপ্রতিষ্ঠিত। বাংলার তথা বাঙালীর গৌরবখ্যাপনের উদ্দেশ্যই যে এই মতবাদের মূল কারণ তাহা বলিতে পারা যায় না। পক্ষাস্তরে, বিকৃত তন্ত্রশাস্ত্রের বীভৎসতা ও কদৰ্যতার কলঙ্কের বোঝা বাঙালীর ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া অন্য প্রদেশ বাঙালীর দিকে চাহিয়া অবজ্ঞার হাসি হাসিয়া থাকেন। বাঙালীও অস্বীকার্ধ সত্য বোধে এই দুরপনেয় কলঙ্কের ভার নিরুপায় ভাবে অপ্রতিবাদে সহ করিয়া থাকে। আমি প্রবন্ধান্তরে দেখাইয়াছি যে তন্ত্রের বিকৃত আচারই ইহার মূল ও মুখ্য আদর্শ নহে—ইহার গৃঢ় আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক রহস্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেরই শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়া থাকে।* এই কারণেই বাংলার এবং বাংলার বাহিরের অনেক তান্ত্রিক সাধকের পুণ্যস্থতি আজ পর্যন্ত নানাস্থানে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ কর্তৃক বিশেষ শ্রদ্ধার সহিত পূজিত হইয়া থাকে rী তান্ত্রিক ধম তথা তান্ত্রিক সাধকের অাদর্শ ও বৈশিষ্ট্যের আলোচনা বত মান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। এই আদর্শ ভাল হউক বা মন্দ হউক, এই ধৰ্ম (মায় ইহার বিকৃত ও বীভৎস আচার ) যে কেবল বাংলা দেশের চতুসীমার মধ্যেই আবদ্ধ নহে—ভারতের সর্বত্রই যে ইহা অপেক্ষাকৃত প্রাচীনকাল হইতে বাংলা দেশের ন্যায় ( অথবা তদপেক্ষা বেশী পরিমাণে) প্রচলিত রহিয়াছে তাহা দেখাইবার জন্যই এই প্রবন্ধের অবতারণা। অবশ্য ইহা দেখাইবার জন্ত কষ্ট-কল্পনা বা

  • প্রবাসী-১৩৪১, শ্রাবণ, পৃঃ ৫৪৮-৫৭২। + "বাংলার শাক্ত সাধক-দেশ (শারীর সংখ্যা, ১৩৪৩ ) ।

অনুমানের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইবে ন—প্ৰত্যক্ষ ও দৃঢ় প্রমাণের সাহায্যেই আমাদের বক্তব্য পরিস্ফুট হইবে। মূল তন্ত্রগুলির মধ্যে কোন খানির কত অংশ কবে কোন দেশে কাহার দ্বারা রচিত হইয়াছিল তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। কোন কোন তন্ত্রের অংশবিশেষে বাংলা ভাষার বা বাংলা দেশের বৈশিষ্ট্যের নিদর্শন থাকিলেও তাহা হইতে সমস্ত গ্ৰন্থখানির বঙ্গীয়ত্ব প্রতিপন্ন হয় না। এমন হইতে পারে, এই সব অংশবিশেষ কালক্রমে বাংলা দেশে জুড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু বিশেষ প্রমাণ না থাকিলে কেবল এই ব্যাপার হইতেই এমন কথাও বলা চলে না যে এই সকল গ্রন্থ ও ইহাদের মধ্যে প্রতিপাদিত আচারাদি কেবল বাংলা দেশেই প্রচলিত ছিল। কোন গ্রন্থ কোন দেশে প্রচলিত বা ; কোন দেশে অপ্রচলিত তাহা জানিবার উপায় দুইটি। প্রথমত, সেই সেই গ্রন্থ কোন কোন দেশে ও কোন কোন অক্ষরে পাওয়া যায় তাহার অনুসন্ধান করা। এইরূপ অনুসন্ধান বতর্মানকালে বিশেষ কঠিন নহে। ভারতের নানা প্রদেশের পুথির তালিকা প্রকাশিত হইয়াছে। এই অনুসন্ধান ব্যাপারে সেগুলির উপযোগিতা অতুলনীয়। দ্বিতীয় উপায় হইতেছে— নিবন্ধগ্রন্থের আলোচনা। বিভিন্ন প্রদেশে নান সময় মূল তন্ত্রগ্রন্থ অবলম্বনে নানা বিধয়ে তন্ত্রশস্ত্রের রহস্য প্রতিপাদনের উদ্দেশ্যে বহু নিবন্ধগ্রন্থ রচিত হইয়াছিল। কোনও গ্রন্থে উদ্ধভ বা উল্লিখিত মূলতন্ত্রের নাম আলোচনা করিলেই বুঝা যায় সেই গ্রন্থের রচয়িতার দেশে কোন কোন গ্রন্থ প্রচলিত ছিল। এক এক প্রদেশের নিবন্ধগ্রন্থগুলিতে উদ্ধত মূলতন্ত্রের নামের তালিকা প্রস্তুত করিতে পারিলে সেই সেই প্রদেশে প্রামাণিক বলিয়া পরিচিত মূলতন্ত্রের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নানা প্রদেশে প্রচলিত সমস্ত নিবন্ধগ্রন্থে— অন্তত প্রচলিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলিতে—উদ্ধত এইরূপ যুলতন্ত্রের তালিকা প্রস্তুত হইলে তন্ত্রগুলির ব্যাপকতা ও প্রামাণিকতা সম্বন্ধে নিসংশয় ধারণ করা সম্ভবপর হইবে—