পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তন্ত্রনামের দোহাই দিয়া যে সমস্ত অবচিীন ও তন্ত্রমতবিরোধী গ্রন্থ কালক্রমে প্রচলিত হইয়াছে সেগুলি এই উপায়ে ধরা পড়িবে। অবশ্য, নিবন্ধগুলি প্রকাশিত না হইলে এইরূপ তালিকা প্রণয়ন করা কষ্টকর। তবে যে গ্রন্থগুলি প্রকাশিত হইয়াছে তাহা অবলম্বনে এই তালিকা প্রস্তুত করিলেও অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া যাইবে । এ পর্যন্ত নানা প্রদেশের সে সমস্ত পুথির বিবরণ প্রকাশিত হইয়াছে সেগুলি আলোচনা করিলে দেখা যায় কোন প্রদেশেই তন্ত্র, আগম বা মন্ত্রশাস্ত্রের পুথির সংখ্যা নিতান্ত কম নহে। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া তাঞ্জোর পর্যন্ত যে সমস্ত স্থানের ( অযোধ্যা, কাশী, মধ্যপ্রদেশ, বোম্বাই, মান্দ্রাজ, বাংলা প্রভৃতি) পুথির বিবরণ প্রকাশিত হইয়াছে সবত্রই স্থানীয় বা স্থানান্তরের অক্ষরে লিখিত প্রাচীন অপ্রাচীন বহু তন্ত্রের পুথি পাওয়া যায়। এই সকল পুথি নাগরী, বাংলা, উড়িয়া, শারদী, নেওয়ারী, দাক্ষিণাত্যের গ্রন্থ প্রভৃতি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লিপিতে লিখিত। উত্তরভারতের নানা স্থান হইতে এশিয়াটিক সোসাইটতে যে সহস্রাবিক তন্ত্রের পুথি সংগৃহীত হইয়াছে তাহার মধ্যেই ‘গ্রন্থব্যতীত অন্য সমস্ত লিপির পুথিই পাওয়া যায় । ইহাদের মধ্যে কতকগুলির অক্ষর বেশ প্রাচীন এবং অপরগুলির অক্ষর অপেক্ষাকৃত আধুনিক। কয়েকখানি অতি প্রাচীন পুথিও ইহার মধ্যে রহিয়াছে। এই পুথিগুলিই বাংলার বাহিরে তন্ত্রচর্চার একমাত্র প্রমাণ নহে। বাংলার বাহিরে বিভিন্ন প্রদেশে যুগে যুগে নানা তান্ত্রিক নিবন্ধগ্রন্থ রচিত হইয়াছে—ইহাদের মধ্যে কতকগুলি সারা ভারতে পরিচিত ও আদৃত। কাশ্মীরের অভিনবগুপ্ত, দাক্ষিণাত্যের ভাস্কর রায়, লক্ষ্মণ দেশিক ও রাঘব ভট্ট প্রভৃতির নাম ও গ্রন্থ সমগ্র ভারতবর্ষের তান্ত্রিকসমাজে স্বপ্রসিদ্ধ। শঙ্করাবতার শঙ্করাচার্ষের রচিত বলিয়া প্রসিদ্ধ প্রপঞ্চসার ও লক্ষ্মণ দেশিকের শারদাতিলক আজ পর্যন্ত সমস্ত ভারতে তান্ত্রিক অনুষ্ঠান নিয়মিত করিতেছে—ইহাদের নিদের্শ অনুসারেই তান্ত্রিক কৃত্য সম্পাদিত হইয়া থাকে। ছু ছুইখানিকেই বিশেষ সন্মান ও শ্রদ্ধার সহিত ব্যবহার করা হয়। সকল প্রদেশেই ইহাদের পুথি পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রদেশের পণ্ডিতবর্গ ইহাদের নানা টীকাটপ্পনী রচনা করিয়া সাধারণের মধ্যে ইহাদের প্রচারের পথ স্বগম করিয়া দিয়াছেন। অবশ্য বাংলা দেশকে কেবল অন্য দেশের গ্রন্থের উপরই নির্ভর করিতে হইত না বা হয় না। বাংলার নিজস্ব গ্রন্থের সংখ্যাও কম নহে। ইহাদের মধ্যে কৃষ্ণানন্দের তন্ত্রসার সর্বপ্রসিদ্ধ—বাংলার বাহিরে সুদূর নেপাল পর্যন্ত ইহার আদরের পরিচয় পাওয়া যায়। এশিয়াটিক সোসাইটতে ইহার যে কয়খানি পুথি আছে তাহাদের মধ্যে বেশীর ভাগই নেপালে প্রচলিত নেওয়ারী অক্ষরে লিখিত। বাংলার বাহিরের অক্ষরে লিখিত এইরূপ আরও কয়েকখানি বঙ্গীয় নিবন্ধগ্রন্থের পুথি পাওয়া গিয়াছে। তন্মধ্যে উড়িয়া অক্ষরে লিখিত পূর্ণানন্দের তত্ত্বানন্দতরঙ্গিণী ও গ্রন্থক্ষেরে লিখিত কাশীনাথ তর্কালঙ্কারের শুামাসপর্যাবিধি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পূর্ণানন্দের স্ত্রতত্ত্বচিন্তামণির অন্তর্গত ঘট চক্রনিরূপণ ত নিখিল ভারতপ্রসিদ্ধ তান্ত্রিক গ্রন্থের অন্যতম । স্বপ্রসিদ্ধ এই সকল গ্রন্থ ছাড়া এমন আরও বহু গ্রন্থকার ও গ্রন্থের নাম করা যাইতে পারে যাহাদের প্রসিদ্ধি মাত্র কোনও স্থানবিশেষের বা সমাজবিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। শত শত এই সকল গ্রন্থের মধ্যে নেপালের মহারাজ প্রতাপ সিংহ কৃত বিশাল গ্রন্থ পুরশ্চর্যার্ণব, নেপালের মহারাজ ভূপালেন্দ্রের মন্ত্রী নবমী সিংহকৃত তন্ত্রচিন্তামণি, দাক্ষিণাত্যের শ্ৰীনিবাস ভট্টকৃত শিবাচনচন্দ্রিক, শ্ৰীনিবাসের পৌত্র জনাদন কৃত শিবাচনচন্দ্রিকার মন্ত্র-চন্দ্রিক নামক সার সংগ্রহ, বোম্বাই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ স্মাত কমলাকর কৃত মন্ত্ৰকমলাকর ও শাস্তি রত্নাকর, অহিচ্ছত্রের মহীধর কৃত স্বপরিচিত মন্ত্ৰমহোদধি, মিথিলার নরসিংহ ঠন্ধুর কৃত তারাভক্তিস্থধার্ণব, উড়িষ্যার লক্ষ্মীধর কৃত শৈবকল্পদ্রুম, দামোদর স্থরিকৃত তন্ত্রচিন্তামণি ও যন্ত্রচিন্তামণি, বাঘেল বংশের মহারাজকুমার জেত্ৰ সিংহ কৃত ভৈরবার্চ-পারিজাত, বুন্দেল বংশের রাজা দেবীসিংহের অনুরোধে তাহার গুরুপুত্র শিবানন্দ গোস্বামী রচিত সিংহসিদ্ধান্তবিন্দু, শ্ৰীচক্রের আদর্শে নির্মিত শ্ৰীবিদ্যানগরের রাজা লক্ষ্মণ দেশিকের বিরোধী প্রৌঢ়দেবের পুত্রের অনুরোধে প্ৰগলভাচার্ধের শিষ্য কতৃক রচিত বিদ্যাৰ্ণবতন্ত্র প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সকল গ্রন্থকারের মধ্যে অনেকে প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক সাধকের বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং পুরুষানুক্রমে নানারূপ তান্ত্রিক গ্রন্থ রচনা করিয়া তান্ত্রিক