_অভ্যুহীষ্টীল । গোবিন্দপ্রসাদের এবং তাহার পৃষ্ঠপোষকগণের হস্তে ব্যারিষ্টারের ফি দিবার উপযোগী নগদ টাকা ছিল না। আমরা মোকদ্দমার বিবরণে দেখিতে পাইব, সওয়াল-জবাবে গোবিন্দপ্রসাদের পক্ষের ব্যারিষ্টারের কিছু বলিবারও ছিল না। এই মোকদ্দমায় গোবিন্দপ্রসাদের পক্ষে তারিণী দেবীকে সাক্ষী মান্ত করা হইয়াছিল, এবং তাহাকে হাজির করিবার জন্ত পুনঃ পুনঃ সপিনা জারি করা হইয়াছিল। তারিণী দেবী জবানবন্দী দিতে উপস্থিত হইবেন এই আশঙ্কায় রামমোহন রায়ের পক্ষ হইতে জেরার প্রশ্নও দাখিল করা হইয়াছিল এই কথা পূৰ্ব্বেই উক্ত হইয়াছে। কিন্তু তারিণী দেবী জবানবন্দী দিতে সম্মত হয়েন নাই। ইহার কারণ কি ? আবার কি তাহার মন নরম হইয়াছিল ? কিন্তু এইরূপ অনুমান করিবার কারণ নাই। তারিণী দেবীর সাক্ষ্য না দিবার এক কারণ হইতে পারে, তিনি শপথ করিয়া মিথ্যা কথা বলিতে প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু তাহার কঠিন মন যে তখনও নরম হয় নাই তাহার প্রমাণ, গোবিন্দ প্রসাদের মোকদম ডিসমিস্ হইবার এক বৎসর তিন মাস পরে, তাহার মাতা দুর্গাদেবী ১৮২১ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে স্বপ্রিম কোটের একুইটতে রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে আর একটি মোকদ্দমা রুজু করিয়াছিলেন। তারিণী দেবীর অনুমতি ব্যতীত এই মোকদ্দমা রুজু করা হইতে পারিত না । গোবিন্দপ্রসাদ রায় দাবী করিয়াছিলেন রামমোহন রায়ের অধিকৃত গোবিন্দপুর এবং রামেশ্বর নামক দুই তালুকে তাহার পিতার উত্তরাধিকার স্বত্রে প্রাপ্য অৰ্দ্ধাংশ। গোবিন্দপ্রসাদের মাতা দুর্গ দেবী নিজের খরিদা সম্পত্তি বলিয়া এই দুইখানি তালুকের ষোল আনাই দাবী করিয়াছিলেন। ১৮২১ সালের ৩০শে নবেম্বর মুপ্রিম কাট দুর্গ দেবীর দাবী ডিসমিস্ করিয়াছিলেন। তারপর তারিণী দেবীর এবং তাহার অনুগত দুর্গ দেবী এবং গোবিন্দপ্রসাদের আর কোন মোকদ্দমা করিয়া রামমোহন রায়ের কতক সম্পত্তি কাড়িয়া লইবার চেষ্টা করিবার উপায় ছিল iা। এই দুইটি মোকদ্দমার ফলে গোবিন্দপ্রসাদ বোধ হয় ঈশ্ব হইয়া পড়িয়াছিলেন। সুতরাং এখন চাকরীর জন্ত ড্রার শরণাগত হওয়া ভিন্ন তাহার উপায়ান্তর ছিল না। ৮২১ সালে ডিগবী সাহেব বর্ধমানের কালেক্টর নিযুক্ত মাতা-পুত্র_ ఫిJరిన్స్ হইয়াছিলেন। ১৮২২ সালের ১৬ই নবেম্বর তারিখে বোর্ড অব রেভিনিউর সেক্রেটারীর বরাবরে লিখিত একখানি চিঠিতে ডিগবী সাহেব লিখিতেছেন, তিনি গোৱিন্দপ্রসাদ রায়কে আবগারী মহালের তহশীলদার মনোনীত করিয়াছেন, এবং দ্বারিকানাথ ঠাকুর তাহার জামীন হইতে সম্মত হইয়াছেন। স্বতরাং খুড়া ভাইপোর মিলন ঘটিয়াছিল। কিন্তু মাত-পুত্রের পুনর্মিলন কখনও ঘটিয়াছিল কি ? ডাক্তার কাপেণ্টারের লিখিত রামমোহন রায়ের জীবনচরিতে মাতা-পুত্রের সম্বন্ধ বিষয়ে এই বিবরণ আছে— “রামমোহন রায়ের পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তিই ঠাহীর বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিলেন। স্থার্থপর মন্ত্রণাদাতৃগণের পরামর্শানুসারে ঠাহার মাত৷ ষ্ঠাতার ঘোরতর শক্রতাচরণ করিয়াছিলেন । রামমোহন রায়ের জীবনের প্রথম ভাগে তাহার মাত স্ববুদ্ধিমতী বলিয় পরিচিত ছিলেন। কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ বিশ্বাসের প্রভাবে তিনি পুত্রের ঘোরতর শক্রগণের মধ্যে গণ্য হইয়াছিলেন। রামমোহন কিন্তু মাতার প্রতি বিশেল অনুরাগ প্রদর্শন করিতেন। স্নেহোজ্জ্বল নয়নে তিনি ( রামমোহন ) আমাদিগকে বলিয়াছেন, তাহার মান্ত তাহার প্রতি যে আচরণ করিয়াছিলেন ভজন্ত অনুতাপ করিয়াছিলেন। যদিও তিনি ( মাতা) জানিতেন রামমোহনের মত ই সত্য, তিনি পৌত্তলিক আচারের শৃঙ্খল ছিন্ন করিতে পারেন নাই। শেষবার জগন্নাথ তীর্থ যাত্রার পূৰ্ব্বে তিনি বলিয়াছিলেন, “রামমোহন, তোমার কথাই সত্য। আমি অবল নারী। এই সকল জাচার-অনুষ্ঠান আমাকে শাস্তি দান করে ; এই বৃদ্ধ বয়সে আমি ইহাদিগকে ত্যাগ করিতে পারি না " জগন্নাগ তীর্থে তাহার স্বত্বা মটিয়াছিল। অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করিয়া তারিণী দেবী এই সকল কৰ্ম্ম অনুষ্ঠান করিতেন। (জগন্নাথ যাত্রাকালে) তিনি কোন পরিচারিক সঙ্গে লইতে সম্মত হয়েন নাই। পথে উহার আকারের বা আরামের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থাও করিতে দেন নাই। জগন্নাথে উপস্থিত হইয় তিনি শ্ৰীমন্দিরে খাজুলিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন । সেই খানে ( জগন্নাথে) তিনি জীবনের অবশিষ্টকাল (তদধিক ন হষ্টক প্রায় একবৎসর কাল ) অতিবাহিত করিয়াছিলেন, এবং সেইখানেই দেহত্যাগ করিয়াছিলেন। রামমোহন রায় ইদানীং জামাদিগকে বলিয়াছিলেন যে মৃত্যুর পূর্বে র্তাহার মাত (উভয়ের মধ্যে) যে সকল ঘটনা ঘটয়াছিল তাহার জন্ত গভীর দুঃখ প্রকাশ করিয়াছিলেন, এবং ঈশ্বর যে এক অদ্বিতীয়, এবং হিন্দু কুসংস্কার যে বিফল, এই মত প্রকাশ করিয়াছিলেন ?" এই বিবরণ পাঠ করিলে মনে হয়, মুপ্রিম কোর্টের মোকদ্দমায় যে ক্ষতি হইয়াছিল তজ্জন্ত রামমোহন রায় যত না ছথিত হইয়াছিলেন, তাহার ধৰ্ম্মমত যে র্তাহার মাতাকে বেদনা দিয়াছিল তজ্জন্য তিনি দুঃখিত ছিলেন ততোধিক। মাতার জেরার জন্ত রামমোহন রায় যে সকল প্রশ্ন প্রস্তুত করিয়াছিলেন তাহ পাঠ করিলে তাহার মনের বিরক্তির
- Mary Carpentor, op. cit, pp. 9-10. worstw fis ervrgers নহে,ভাবানুগত ৷