পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এবং মালতীর নিশ্চিন্ত জীবনযাত্রাকে সৰ্ব্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করবে তার উপায় সে খুজে পায় না। চিন্তায় শ্রাস্ত হয়ে অনেক রাত্রে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ভোরবেলার দিকে অত্যস্ত একটা দুঃস্বপ্নের ঘোর ভেঙে জেগে উঠে দেখলে যে ঘুমের মধ্যে কান্নায় তার বালিশ ভিজে গেছে। বহুকাল পরে সে স্বপ্নের মধ্যে তার স্বামীকে দেখেছে। সে স্বপ্ন স্পষ্ট নয়। নিতান্তই এলোমেলে। জেগে উঠে সব কথা সে পরিষ্কার মনেও আনতে পারে না—তবু সেই অৰ্দ্ধস্পষ্ট স্বপ্নের স্মৃতিতে তার মন যেন বস্তুজগতের স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল। কি যে তার অর্থ তাও সে বুঝতে পারে না, তবু কেন তার বুক ভেঙে কাল্প উথলে উঠতে চায় তা সে বোঝাবেই বা কাকে । জীবনে মুখের দিন যার কাছে স্বপ্নের মত হয়ে এসেছে, তার কাছে জীবনের মূল্য এমন কি থাকতে পারে যার অভাবে স্বপ্নের জুরাশা তাকে দুঃখ দিতে পারে । তবু যে কান্না কেন রোধ করা যায় না, তা সে বুঝে উঠতে পারে না। তার স্বামীর যে-মুখটা প্রাণপণ চেষ্টাতেও সেই প্রদোষান্ধকার ভেদ ক’রে সে স্পষ্ট দেখতে পায় নি, অথচ যার অসহায় বেদনার ছবি তার চোখের উপরে সুস্পষ্ট ভাসছে সেই রূপবিহীন অপরূপ মুখখান তার অন্তরের এতদিনকার সঞ্চিত প্রেমাৰ্ত্ত বিরহকে যেন সজীব করে তুলেছে। \రినా সেদিন শনিবার। কমল দুপুরের দিকে অনেকটা স্বস্থ বোধ করছিল। কাজে অকারণে অনুপস্থিত হওয়া তার স্বভাবের মধ্যে ছিল না। নিখিলনাথ হাসপাতাল পরিদর্শনের অবসরে তাকে দেখে আশ্চৰ্য্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এ কি, আপনি আজই কাজে এলেন যে ? একটু বিশ্রাম নেওয়াই আপনার উচিত ছিল। মাথার যন্ত্রণাটাগিয়েছে ত?” মাথার যন্ত্ৰণ কম হ’লেও তখনও ছিল। কিন্তু সে কথা না ব'লে সে হেসে বললে, “আপনি আমার জন্যে অনেক করেছেন। আমরা দুঃখী মানুষ, নিজেদের নিয়ে নাড়াচাড় করলে আমাদের দুঃখও কমে না ; তার চেয়ে কাজকর্মের মধ্যে অনেকটা শাস্তিতে থাকি ” অপরাহ্লের দিকে কমল ঘরে ফিরে গুয়ে পড়েছিল অত্যন্ত শ্রাস্তি বোধ করে। গুয়ে গুয়ে সে তার স্থপ্ত মস্তিষ্ককে প্রাণপণ চেষ্টায় জাগ্রত করবার চেষ্টা করছিল যদি কোনমতে কাল রাত্রের দেখা স্বপ্নের সূত্রে তার স্বামী বা দেশের কোন নাম স্মরণে আনতে পারে। চিন্তায় চিন্তায় সে অধিকতর ক্লাস্ত হয়ে পড়ল—তবু কোন ক্ষীণতম রশ্মিও সে সেই বিস্মৃতির অন্ধকারে দেখতে পেল না। নিখিলনাথকে কি উপায়ে সাহায্য করার স্বত্র সে জোগাবে, যদি তার স্মৃতিকে সে পুনরুজ্জীবিত না করতে পারে ? চুপ করে শুয়ে ওয়ে আকাশ-পাতাল নানা চিন্তায় সে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলে মালতী থোকাকে নিয়ে। “ও কি দিদি, গুয়ে যে ? এ কি চেহারা হয়ে গেছে তোমার ? মাগে, চোখ গৰ্ত্তে ঢুকে গেছে যে— অম্লখ করেছে ?” মালতী হেসে তাড়াতাড়ি উঠে বসল। তারপর থোকাকে কোলে টেনে নিয়ে বললে, “ন তেমন কিছু না, আজ দিন কয়েক একটু মাথার অমৃথ করছিল। তা এখন কমে গেছে।” বলে প্রসঙ্গটাকে চাপ দিয়ে বললে, ”উ:, কতদিন দেখি নি তোমাকে ভাই ! সে ব্লাউসটা পেয়েছিলে ত? এখানে ঠিকমত স্বতো পাই না, তার ওপর কাজের চাপ, কোনরকমে একটা করে দিলাম। এখনও ভাল ক’রে শিখতেই পারি নি।” “চমৎকার হয়েছে। ওদের বাড়ীর বউ ত বলছিল সায়েব-বাড়ীও অমনতর হয় না।” “হ্যা, ওর চেয়ে কত ভাল ভাল হয় । খোকন ত সেদিন তোমার নিন্দে করেছিলাম ব'লে কোমর বেঁধে লেগে গেল তার মাসীর গুণবর্ণনায়। এদিকে কিন্তু আবার তোমার অত্যাচারের সব নালিশও চলছিল তার আগে,—“খালি খালি দুধ খাওয়ায়, ভগলুর সঙ্গে রাস্তায় যেতে দেয় না। আর আমি যেই বলেছি মাসি ভারি দুষ্ট, না রে? আর যাবি কোথায় ।” মালতী তৎক্ষণাৎ খোকনকে কোলে টেনে একটা মন্ত চুমু দিয়ে বললে, “তা ভাই সত্যি, চাকর-বাকরের সঙ্গে আমার যেতে দিতে ভয় করে। এই সেদিন পুটির মা বলছিল কার খোকাকে সেদিন তাদের পুরনো চাকরে ভুলিয়ে নে গিয়ে না কি গয়নার লোভে গল টিপে মেরে ফেলেছে। মা গো গুনে আমি ত ভয়েই মরি। তা ভাই