পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৬ দিই নে বলে তোমার ভগ্নীপতি বকবিকি করে। তা করুক গে, ওদের কি এসব বুদ্ধি আছে ? এদিকে নিজের ভয় কিন্তু সাড়ে ষোল আনা। রাত্তিরে একখানা টেলিগেরাপ আমুক দিকি নি ; আমনি ভয়ে কেঁপে সারা হয়ে যাবে’খন। ভয়ে মাথার জানলা খুলে শোবে ন!—না কি খোচা মারবে । দেখ দিকি ভাই কাণ্ড!” গলা টেপার কথায় কমলের মনটাও ছ্যাৎ করে উঠেছিল ; কিন্তু নন্দলালের কথা শুনে হেসে বললে, “ব্যবসায়ী মানুষ কি ন+—তাই চোরের ভয় ।” “ছাই ব্যবসা, ব্যবসা-ব্যবসা করে রাত্তির-দিন নাওয়াখাওয়া বন্ধ করলে। না কি বাড়ী হবে, মোটর হবে। ঝ্যাটা মার অমন বাড়ীর মুখে । আগে প্রাণে বঁাচবে তাপরত বাড়ী-গাড়ী ? কদিন থেকে বলছি যে জোছনাদিকে একটু নিয়ে এস, তা সময়ই হয় না। বলে ‘তুমি না গেলে সে আসবে কেন ? তা ভাই, সাতরাজ্যি ঠেকিয়ে আমার নিঃশ্বেস ফেলতে অবসর কই । খোকার দুধটা পৰ্য্যন্ত কেউ ঠিকমত জাল দিতে পারে না। যে-দিকটা না দেখবে সে দিকটাই ছিষ্ট নষ্ট ক'রে বসে থাকবে। তা আমি না এলে কি আর হয় না ? তা ও কিছুতে শুনবে না। ওরও আবার সময় হয় না। কত ক’রে ব’লে কয়ে আজ নিয়ে এসেছি।” “ওম এতক্ষণ বল নি কেন ভাই ? একটু চ'-টা ক’রে পাঠিয়ে দি ” “না না, সেসব কিছু করতে হবে না। তোমার যা চেহারা হয়েছে। এখন চল দিকিন বাড়ী গিয়ে যত খুনী চা খাইওখন।” “না ভাই, এখন আমার বাড়ী যাওয়া হবে না। সামনেই পরীক্ষ—একে ত ক'দিন পড়াশুনা কিছুই করতে পারি নি। তাতে এখন সময় নষ্ট করলে সব দিক নষ্ট হবে।” এসব কথা মালতী শুনতে চায় না। পরীক্ষার মূল্য তার কাছে কিছুই নেই। জ্যোৎস্নার শরীর খারাপ, তাকে রেখে সে যেতে কিছুতেই রাজি নয়। কমল মহা বিপদে পড়ে গেল। নন্দলালের গৃহে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন না হয়ে প্রবেশ করতে চায় না। সেখানে নন্দলালের অব্যাহত গতি। নন্দলালের প্রতি রূঢ় আচরণ করে একটা উত্তেজনার স্বষ্টি প্রবাসী SN98N9 করতে তার স্বভাবে বাধে। যদি এ-কথা তার বিশ্বাস ছিল যে স্বভাবভীরু নন্দ তার গৃহে তার স্ত্রীর উপস্থিতিতে কোন প্রকার উৎপাতের স্বষ্টি সহসা করতে ভরসা পাবে না, তবু ইচ্ছাপূর্বক সে বিপদের সম্ভাবনাকে সম্ভব করে তুলতে রাজী নয়। কিন্তু এসব কথা মালতীকে সে বোঝাবে কেমন করে। ঐ যে স্নেহশীলা নিঃসন্দিগ্ধচিত্ত সরলা স্ত্রীলোকটি নিজের অজ্ঞাতসারে নিজের বিপদকে আহবান করছে, তাকে তার বিপদের বার্তা জানিয়ে তার জীবনের মুখশান্তি সে হরণ করতে পারবে না । অনেক তর্ক-বিতর্ক অকুনয়-অলুযোগের পর কমলা বললে, “আচ্ছ, দেখি ভাই যদি ছুটি পাই। নিখিলবাবুর অনুমতি না নিয়ে ত যাবার জো নেই। হাসপাতালের কাজে ক্ষতি হয় কি না।” - মালতী বললে, “কি ভাই হাসপাতালের কাজ ? মানুষ ম’লেও কি কাজ করতে হবে না কি ? এ যে আপিসের বাড়া হ’ল! না না ও সব হবে না। আমি এখুনি তোমার ভগ্নীপতিকে গিয়ে বলছি—ও সব ঠিক ক’রে দেবে’খন।” কমল ব্যস্ত হয়ে বললে, “না ভাই, তার দরকার নেই। আমি দেখছি কি করতে পারি। ওঁকে মিছামিছি আর কষ্ট দিওঁ না।” মালতী কিছুতেই শুনলে না। সে বাইরের ঘরের দিকে চলে গেল । কমল হতাশ হয়ে ভাবলে, “দেখা যাক্ অদৃষ্টে আবার কি আছে ?” কিন্তু তবু তার মনটা শাস্ত রইল না। সে জোর করে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলে যে নন্দলালের অনুতাপ নিশ্চয় আস্তরিক। যে-নন্দলাল তাকে তার নিদারুণ দুর্দশা থেকে উদ্ধার করে তার আজকের ভদ্র অবস্থায় এনে উপস্থিত করেছে তার প্রতি এই রকম অভদ্রোচিত মনোভাব পোষণ করার দরুণ সে নিজেকে নিন্দ করলে। কিন্তু মনের অস্বস্তি তার মনে কাটা হয়ে রইল। মালতী বাইরের ঘরের দরজায় গিয়ে দেখলে যে একজন সায়েবমত লোকের সঙ্গে তার স্বামী কথাবার্তা কইছেন। মালতী এসে অপ্রস্তুত হয়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় নন্দর নজরে পড়ে গেল এবং সে তাড়াতাড়ি উঠে এসে বললে, “কি, যাবে বাড়ী?” সে ইচ্ছে ক’রেই জ্যোৎস্নার কথা জিজ্ঞেস করলে