পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না। মালতী বললে, “বাব কি করে ? জ্যোৎস্নাদির শরীরটা ভারী খারাপ হয়েছে। তা যেতে বলছি ত বলে, নিখিলবাবু ছুটি না দিলে যেতে পারবে না। তুমি একটু বলে কয়ে ছুটি করে নাও না। নিখিলবাবুকে কি পাওয়া যাবে না ?” নিখিলনাথের নামে নন্দর ভ্র কুঞ্চিত হয়ে উঠেছিল। সে বললে, “পাওয়া যাবে না কেন ? ঐ ত এসে জ্যোৎস্নার জন্তে বসে আছে।” মালতীর মনে নন্দর ঐ উগ্র মন্তব্যের কটু রসটুকু গিয়ে পৌঁছল না। যেটুকুর জন্যে সে সম্প্রতি ব্যাকুল, তার বাইরে তার মস্তিষ্কের ক্রিয় খুব তীক্ষ থাকে না। সে অনুনয় করে বললে, “তবে বল না গো একটু ; দু-দিন ছুটি কি আর দেবে না ? ওর শরীরটা খারাপ, দু-দিন একটু বাড়ী গিয়ে ঘুরে আস্থক। একটু বলে দেখ না ?” জ্যোৎস্নাকে বাড়ী নিয়ে যাবার আগ্রহ নন্দরও কিছু কম হওয়ার কথা নয়—মুতরাং লিখিলের প্রতি মনে মনে উত্তপ্ত হ’লেও সে অগত্যা গিয়ে জ্যোৎস্নার বাড়ী যাওয়ার দরবার নিখিলকে জানালে । নিখিলনাথ বললে, “হ্যা, তা বেশ, দু-দিন বাড়ী গেলে ওঁর মনটাও প্রফুল্প হবে।” 冷 মালতী দরজায় দাড়িয়ে তাদের কথাবাৰ্ত্ত শুনছিল । ছুটির পরোয়ান পেয়েই সে ছুটে উপরে জ্যোৎস্নার নিকট গিয়ে হাসতে হাসতে সব জানালে। বললে, “উ, ভারী মান বাড়ানো হচ্ছিল। উনি চলে গেলে হাসপাতালে একেবারে তালাচাবি পড়বে।” কমল আর কিছু বললে না। তার নিজের অদৃষ্ট যে কখনই সুপ্রসন্ন থাকে না, এই তার আর একটা প্রমাণ মাত্র মনে ক’রে ক্ষুণ্ণমনে প্রস্তুত হতে লাগল। নিখিলনাথ এসেছেন অথচ তার সঙ্গে যে তার বড় দরকার ছিল, তা সম্প্রতি তাকে মুলতুবী রেখেই যেতে হ’ল। মনটা তার ভার হয়ে রইল এবং ক্ষণে ক্ষণে তার চক্ষু সজল হয়ে উঠতে চাইল, নিজের অদৃষ্টির উপর অভিমানে। গাড়ীতে তুলে দিয়ে কমলের দিকে নন্দর চাইতে কেমন সঙ্কোচ বোধ হতে লাগলে। একই গাড়ীর মধ্যে মুখোমুখী হয়ে বসে ধাওয়ার চিন্তাটা তার কাছে রুচিরোচন বোধ হ’ল না। সে মালতীর দিকে চেয়ে বললে, “আমার একটু বিশেষ কাজ আছে। তোমরা যাও ; আমার ফিরতে সন্ধ্যে হবে।” কমল তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারল যে নন্দলাল তার সঙ্গে একত্র এক গাড়ীতে যেতে সঙ্কোচ বোধ করছে। তাতে একটু স্বস্তিও অনুভব করলে। একবার ভাবলে যে সে অনুরোধ করে। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই প্রস্তুত ক’রে উঠতে পারলে না। শুধু সঙ্কোচ নয়, তার একটু আশঙ্কাও ছিল মনে, যে এই অঙ্গুরোধে নন্দকে সে তার চিঠিসম্পর্কে ভুল বুঝতে সাহায্য করবে এবং নন্দর স্পৰ্দ্ধার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে । মালতী বললে, “দেখ কাণ্ড, এখন আবার কোথায় যাবে } এই ত বললে যে আজ বিকেলে তোমার কোন কাজ থাকবে না। জানি নে বাপু, যত নেই কাজ যুটিয়ে নেওয়া।” অন্য পক্ষ থেকে কোনে সাড়া না পেয়ে নন্দ মালতীর ব্যগ্রতার কোনো স্ববিৰে নিতে ভরসা পেল না। আর কথা কাটাকাটি না করে সে গাড়োয়ানকে বাড়ী যেতে হুকুম করলে। কমল মনে মনে খুবই লজ্জ পেতে লাগল তবু মুখ ফুটে কথা বলতে পারলে না। - মালতী আবার প্রসন্ন চিত্তে তার সঙ্গে গল্প স্বরু করে দিলে। বেশীর ভাগই থোকার কথা—ঘর-সংসারের কথা। “নতুন বাড়ীটায় একটু জমি আছে। তা ভাই একটা গরু কেনার কথা বলেছি, বলে যে গন্ধ হবে । হ্যাঙ্গাম। পারি নে . বাপু, গয়লার সঙ্গে রোজ লড়াই করে। পয়সা দিয়ে কতকগুলো জল গেলা ।” গল্পের বিষয় এক জায়গায় আবদ্ধ নয়। গরুর কথা শেষ না-হতেই খোকার নতুন মাষ্টারের গল্প—( যোগাযোগ কোথায় তা কে জানে! )—মাষ্টারের বাড়ী পূর্ববঙ্গে ; থোকা তার কি মজার নকল করে—বাড়ী গেলে শোনাবখন। এই রকম নানা কথা বলতে বলতে বলে, “ও কি ভাই, চুপ করে রইলে যে ? মাথার কষ্ট হচ্ছে বুঝি ?” বলে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। কমল তাড়াতাড়ি বলে, “ন, না, তুমি গল্প করছ, তাই শুনছি।” মালতী আবার উৎসাহে গল্প স্বরু করে--“আজকাল থোকা সব খায়।” ইত্যাদি ইত্যাদি। কমলের মন থেকে উদ্বেগ যেতে চায় না । নন্দ এবার কেমন ব্যবহার করবে তাই ভাবে। ভাবে, বাড়ীতে মালতীর সামনে সাহস করবে না। জাবার ভাবে,