পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ হিরণ তার জেদ ছাড়ে না। রমেশকে একখানা গয়না গড়িয়ে আনতে হ’ল । রমেশ অগত্যা বললে, “যদি গয়নাটা পাঠাবেই, বাড়ীর ঠিকানায় না পাঠিয়ে অঞ্জলির স্কুলের ঠিকানায় পাঠাও।” “কেন ?” “বাড়ীতে পাঠালে শ্বগুরমশাই জিনিষটা পিয়নের কাছ থেকে নেবেনই না, ফিরিয়ে দেবেন। আর স্কুলে পাঠালে অঞ্জলি নিয়েও নিতে পারে। ও তখন থাকবে স্কুলে কিনা দুপুরে যখন পার্শেল নিয়ে ষায় পিয়ন।” স্কুলের ঠিকানাতেই উপহার গেল। সঙ্গে হিরণ লিখে দিলে, আমায় হয়ত তুমি চিনবে না, আমি তোমার দিদি হই, বোনকে আদর করে এক খানা গয়না পাঠালাম, পরে। আর তোমায় একবার আসতে হবে আমাদের কাছে, সুবিধা হ’লেই তার ব্যবস্থা করব। “আচ্ছ, তুমি যে বললে অঞ্জলির বাবা গয়না ফিরিয়ে দেবেন—কেন বল ত ?” দিন তিনেক পরে রমেশকে ভাত বেড়ে দিয়ে হিয়ণ জিজ্ঞাসা করলে। রমেশ সংক্ষেপে জবাব দিলে, “আমি আবার বিয়ে করেছি বলে।”

  • আবার-বিয়েকে তিনি খুব ঘৃণা করেন ?” রমেশ বলে ফেললে, “তা করবেন বই কি—কিন্তু যাক ওসব কথা, তুমি খেতে বসবে না ?”

“ন, আমি একটু পরে বসব। আচ্ছ, অঞ্জলি জিনিষ ফেরাবে না ত ?” “তা কি ক'রে বলি। তোমার যে কি-এক খেয়াল। এ-খেয়াল কেন হ’ল |” হিরণ কথা না বলে চুপ করে রইল। ‘কেন হ’ল —সাগর-ধেয়ানী শাস্ত প্রবাহিণী হঠাৎ প্রক্ষিপ্ত প্রপাতে পরিণত হলে প্রতিহত বারিরাশি আবৰ্ত্ত স্বষ্টি করবেই, নিকটকে দূরে নিক্ষেপ করতে চাইবে, দূরকে অজানাকে প্রবল টানে গ্রহণ করতে হাত বাড়াবে। খণ্ড প্রলয়ের সঙ্গে সঙ্গেই খণ্ডস্থষ্টির তাণ্ডবলীলা । বিকালে রমেশ আপিস হতে ফিরতেই হিরণ বললে, “অজলি পার্শেলটা ফেরায় নি, এই দেখ তার সই-করা রসিদ এসেছে।” “দেখি” বলে হাত বাড়িয়ে রমেশ রসিদটা নিয়ে অঞ্জলির সইটার উপর অনেক ক্ষণ তাকিয়ে রইল। হিরণ বললে, “কি হ’ল ? অত কি দেখছ অৰাক হয়ে ?” “দেখছি অঞ্জলির হাতের লেখা এক বছরেই অনেক বদলে গেছে!” হিরণ তার রসনা-ছিলায় একটা শাণিত শর-সংযোজনের উদ্যোগ করছে, এমন সময়ে দেউড়ীর সামনে একখানা গাড়ী এসে থামল এবং একটি অল্পবয়স্ক বিধবা নেমে এল । হিরণ রমেশকে জিজ্ঞাসা করলে “কে গো ?” রমেশ মেয়েটির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললে, “কি জানি—চিনতে ত পারছি নে!” মেয়েটি একটু সঙ্কোচের সঙ্গে কাছে এসে হিরণকে প্ৰণাম করে বললে, “আমি অঞ্জলি, দিদি ” হিরণ রমেশের দিকে তাকিয়ে বললে, “তবে যে তুমি বলছ চিনতে পারছ না।” রমেশ অৰাক হয়ে ভাবতে লাগল, হাতের লেখা না-হয় বদলেছে, চেহারা স্বদ্ধ কি বদলাতে পারে । স্কুলের কর্তৃপক্ষ মেয়েটকে নিয়ে বড় মুস্থিলেই পড়েছে। আজ সাত দিন তার মামাতে ভাই এসে তাকে স্কুলে ভৰ্ত্তি করে দিয়ে বোডিঙে থাকবার ব্যবস্থা পৰ্য্যস্ত করে গেছে, অথচ টাকা দেবার কথা ছিল তার পরদিনই এসে, কিন্তু আর দেখা নেই। যে-বাড়ীর ঠিকানা দিয়ে গেছে, সেখানে লোক গিয়ে খোজ নিয়ে এসেছে যে, সে-বাড়ী ছেড়ে সে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। মেয়েটিও জানে না। কাজেই তার উপরই উৎপীড়ন স্বরু হয়েছে, বলা হচ্ছে তাকে যে, সে অন্ত কোন আত্মীয়ের কাছে চলে যাকৃ। কিন্তু তার আর কোনও আত্মীয় আছে বলে তার জানা নেই । ছোট থাকতেই পিতৃমাতৃহীন সে। মামা তাঁকে পালন করে বিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই আবার মামার কাছে ফিরে আসে বিধবা হয়ে। কিন্তু কপাল এমন যে মামাও জার বেশী দিন রইলেন না। তার মৃত্যুর পরই দাদা ও বৌদি দু-জনেই তার ওখানে থাকাটা ভার বোধ